Header Ads

মীর সাহেবের সরাই ❑ সেলিম ইসলাম খান ❑ ধারাবাহিক উপন্যাস পর্ব_১৩

 

মী সাহেবেরা

সেলিম ইসলাম খান

উপন্যাস

ধারাবাহিক পর্ব_১৩

ছুটি খানের সঙ্গীরা তীরের আঘাতে ক্ষত-বিক্ষত হয়ে পাহাড়ি রাস্তায় কাঁতরাচ্ছেন। আর অন্যদিকে শাচীনের নেতৃত্বে মগদস্যুরা ছুটি খানদের ঘিরে পেলেছে। একশোর অধিক মগসেনাকে তীর ও বল্লম নিয়ে ছুটি খানদের ঘিরে ধরল। এ অবস্থায় লড়াই করা পাগলামি বৈ নয়। একদিকে পাঁচজন আহত সুলতানী সেনা অন্যদিকে একশতাধিক মগসেনা।

মগসেনারা উলুধ্বনির মাধ্যমে তাদের বিজয় উদযাপন করছিল। এমন সময় উত্তর দিক থেকে অশ্বখুরের শব্দ ভেসে এলো। মুহূর্তের মধ্যে হৈতেন খানের নেতৃত্বে একশোর অধিক সুলতানী সেনা ঘটনাস্থলে আবির্ভূত হলেন। তাদের তীরের আঘাতে মগসেনারা এফোড় ওফোড় হতে লাগল। বাকিরাও আল্লাহু আকবার ধ্বনি শুনে পালাতে লাগল।

হৈতেন খান সেনাদের নিয়ে ঘোড়া থেকে নেমে এলেন। ছুটি খানরাও ঘোড়া থেকে নামলেন। তারপর ছুটি খানদের আহত দেখে শুশ্রূষা শুরু করলেন তারা।

- আগে তাদের ধাওয়া করে ধরা দরকার মাননীয় সেনাপতি। বললেন ছুটি খান।

- আপনি ঠিকই বলেছেন। তবে আগে আহতদের সেবার সাথে সাথে পরবর্তী করণীয় ঠিক করা দরকার। বললেন হৈতেন খান।

- তারা জংলা পথে পালালেও তীর নিয়ে ওতপেতে থাকবে। তাদের এক সাথে ধরা এখন কঠিন হয়ে যাবে। আমরা তাদের ডেরায় এক হতে কিছু সময় দিই। আর এখানে যারা আহত তাদের কাছ থেকে ডেরার সন্ধান বের করি। বললেন ছুটি খান।

- আপনি ঠিকই বলেছেন মহামান্য ছোট খান। আমি এদের কাছ থেকে এখনই ডেরার খোঁজ বের করছি। এই বলে হৈতেন খান বিশাল বাহু থেকে আস্তিন ঘুটিয়ে বাহু শক্ত করে আহত মগসেনাদের দিকে ছুটে গেলেন। একজন নেতাগোছের মগ সেনার বাহুতে তীর বিঁধেছিল। তার অন্য বাহু ধরে ঝাঁকি দিয়ে ডেরার তালাশ চাইলেন। কিন্তু সে বলতে রাজি হল না। হৈতেন খান বিশাল কবজি নিয়ে গলা চেপে ধরলেন। কিছুক্ষণের মধ্যে সে পটপট করে সব বলে দিল।কর্ণফুলীর তীরে অস্হায়ী তাবু টেনে মগদস্যুরা আস্তানা গড়ে তুলেছে। বাইরের কোন সাম্পান বা জাহাজ মোহনায় আসলেই তারা চতুর্দিক থেকে অতর্কিতে হামলা চালিয়ে লুণ্ঠন শুরু করে। যেদিন নদী বা সাগরে কোন শিকার পায় না। সেদিন তারা গভীর রাতে লোকালয়ে হামলা চালায়। ঘুমন্ত মানুষদের ধরে বেঁধে নিয়ে যায় দাস বাজারে। গ্রাম লুণ্ঠন চালিয়ে বাড়িঘর আগুন দিয়ে জ্বালিয়ে দেয়।

সুলতানী বাহিনী যখন মগদের ডেরা চতুর্দিক দিয়ে ঘিরে ফেলছিল তখন তারা সামুদ্রিক মাছ দিয়ে উদরপূর্ত করছিল। আর যুদ্ধ জয়ের খুশিতে উলুধ্বনি দিচ্ছিল। এমন সময় চতুর্দিক দিয়ে তীরবৃষ্টি এসে তাদের ঘিরে ধরল। মুহূর্তেই উল্লাসরত মগদস্যুরা তীরের আঘাতে এফোড় ওফোড় হয়ে কাটা গাছের মত ঝরে পড়ছিল। অবস্থা বেগতিক দেখে মগহার্মাদ প্রধান শাচীন দুজন সহকারী নিয়ে সাম্পানে উঠে কর্ণফুলির ওপারের দিকে পালিয়ে যাচ্ছিল। তাদের পলায়নের খবর পেয়ে ছুটি খান ও আলিম খান তীরন্দাজ সেনাদের নিয়ে সৈকতে ছুটে গেলেন। কিন্তু ততক্ষণে সাম্পান অনেকটা মাঝনদীতে পৌঁছে গেল। তীরন্দাজদের তীর তাদের ছুঁতে পারল না।

 

চলবে........

No comments

Powered by Blogger.