মীর সাহেবের সরাই ❑ সেলিম ইসলাম খান ❑ ধারাবাহিক উপন্যাস পর্ব_১২
মীর সাহেবের সরাই
সেলিম ইসলাম খান
❑
উপন্যাস
গভীর রাত বঙ্গোপসাগরের
তীর ধরে সন্তর্পণে ছুটে চলেছে চৌদ্দটি জাহাজ। শান্ত ও অন্ধকার সাগরে আকাশের জোছনা
ধোয়া চাঁদ খেলা করছে। হলদিয়া পেরিয়ে সুন্দর বনের তীর ধরে চাটিগাঁ বন্দরের দিকে
ছুটছে জাহাজ।
মীর গফুর খান তাহাজ্জুদ
পড়ে মুখস্ত সুরাগুলো পড়তে লাগলেন। এমন সময় আলফা হোসাইনী তার কেবিনে এসে বললেন, মীর
সাহেব বেশি ব্যস্ত না থাকলে আসুন আপনাকে একটি চমতকার দৃশ্য দেখাই। মীর গফুর খান
সুরা পড়গে পড়তে জয়নামাজ থেকে উঠে তার পিছু নিলেন। হঠাৎ দক্ষিণ সমুদ্রের দিকে চোখ
যেতেই তার চক্ষু ছানাবড়া হয়ে গেল। মুখ দিয়ে অস্ফুটে বেরিয়ে এল সুবহানআল্লাহ
আলহামদুলিল্লাহ। তিনি দেখলেন, সমুদ্রের জলের গল দিয়ে বিশাল আলোর ফোয়ারা যেন ছুটে
যাচ্ছে।
আলফা হোসাইনী বললেন,
বলুনতো এটা কি ঘটনা?
মীর সাহেব তাজ্জব হয়ে
বললেন, এটা আমার ভাবনার অতীত। তবে কোন সামুদ্রিক প্রাণী হবে নলে মনে হয়।
আলফা হোসাইনী বললেন,
যাক আপনার ভাবনা একদম অমূলক নয়, সমুদ্রের প্রাণীই বটে। এটা এক ধরনের মাছ।
মীর গফুর খান বললেন,
সুবহানআল্লাহ। আল্লাহর অপূর্ব সৃষ্টির এক অনুপম নিদর্শন এই মাছ। বিশাল মাছের ঝাঁক
পার হতে অনেকক্ষণ লেগে গেল। এদিকে জাহাজও চলছে আপন গতিতে। আলফা হোসাইনী তার
সহকারীকে চা আর খোরমা আনতে আদেশ দিলেন।
- দিনের শুরুতে খোরমা
খাওয়া রাসুল সাঃ এর সুন্নাত। মাশাআল্লাহ আপনার এই রীতি বেশ প্রশংসনীয়। বললেন মীর
গফুর খান।
- সুন্নাতের পাশাপাশি
খেজুর সারাদিন শক্তি বজায় রাখতেও বেশ সহায়তা করে।
সহকারী খেজুর, আখরোট আর
আংগুর নিয়ে এল, সাথে চায়ের কেটলি।
আলফা হোসাইনী ও মীর
গফুর খান ধর্মীয় আলাপের সাথে সাথে ফলাহার করলেন। সবশেষে চা পান করলেন। আদা লবঙ্গ
আর দারুচিনির চায়ে হালকা লেবুর রসের চা মীর গফুর খানের কাছে বেশ ভাললাগল। তিনি
আলহামদুলিল্লাহ বলে শুকরিয়া আদায় করলেন। আলফা হোসাইনীও আলহামদুলিল্লাহ বলে দাড়িতে
হাত বুলালেন।
সেদিন বিকেলে তারা
সন্দ্বীপ চ্যানেল অতিক্রম করে চাটিগাঁ বন্দর পৌঁছে গেলেন।বন্দরের মোহনায় আলফা
হোসাইনীর চৌদ্দটি জাহাজ প্রবেশ করতেই তারা দেখতে পেলেন একটি বড় সাম্পানে করে
কয়েকজন লোক পালেয়ে যাচ্ছে। আর তাদের লক্ষ্য করে আরো কয়েকটি সাম্পানের লোকজন তীর
ছুঁড়ছে। কিন্তু পলায়নপর সাম্পান বেশ আগে ছিল বলে তাদের তীর সামনের সাম্পান অবধি
পৌঁছাতে পারছে না। এদিকে পলায়নপর সাম্পান আলফা হোসাইনীর জাহাজের কাছাকাছি এসে গেল।
তিনি বললেন, আরে এরাতো মগহার্মাদ। এরা এভাবে পালাচ্ছে কেন? চির জীবন শুনে এসেছি
তারা মানুষদের উপর ভয়ংকর অত্যাচার চালায়। সবাই তাদের ভয়ে তটস্থ থাকে। আজ দেখছি
তারাই পালাচ্ছে।
মীর গফুর খান বললেন,
তাহলে হয়তো মজলুমরাই সংঘবদ্ধ হয়ে তাদের ধাওয়া করছে।
ততক্ষণে সাম্পানটি
জাহাজ অতিক্রম করছিল। কিন্তু হঠাৎই সাম্পানের ভেতর লোহার সাঁড়াশির মত কিছু একটা
পড়ল। আর সাম্পানের গতিও বন্ধ হয়ে গেল।
আলফা হোসাইনী দেখলেন
জাহাজের পাটাতন থেকে কেউ একজন সাম্পান লক্ষ্য করে জাহাজের বিশাল নোঙর ছুঁড়ে
মেরেছে। তিনি মীর গফুর খানকে কিছু বলতে যাবেন, কিন্তু তিনি হঠাৎ দেখলেন, তার পাশে
মীর গফুর খান নেই। তিনি অবাক হয়ে চারদিকে তাকে খুঁজছিলেন। হঠাৎই জাহাজের ডেকে মীর
গফুর খানকে তিনি দেখতে পেলেন। তার হাতে নোঙরের শেকলের অপর প্রান্ত। এত বড় নোঙর সে
অনায়াসেই দূরের সাম্পানে সময়মত ছুঁড়ে মারতে পারল দেখে তিনি বেশ অভিভূত হলেন।
চলবে........
No comments