Header Ads

মীর সাহেবের সরাই ❑ সেলিম ইসলাম খান ❑ ধারাবাহিক উপন্যাস পর্ব_১৪

 


মী সাহেবেরা

সেলিম ইসলাম খান

উপন্যাস

ধারাবাহিক পর্ব_১৪

লুসাই পাহাড় থেকে নেমে আসা পাহাড়ী নদী কর্ণফুলি এখন ভরা যৌবনা। নদীতে জোয়ার এসেছে। সে জোয়ারে জাহাজের জন্য নাব্যতা সহজতর হয়েছে। আরব বণিক সৈয়দ আলফা হোসাইনীর চৌদ্দটি জাহাজ অনায়াসে মোহনা ফেরিয়ে কর্ণফুলী নদীতে প্রবেশ করেছিল। সে কর্ণফুলী নদীতে সুলতানী বাহিনীর ধাওয়া খেয়ে মগহার্মাদরা সাম্পান নিয়ে পালিয়ে যেতে চাইল। কিন্তু মীর গফুর খান নোঙর ফেলে তাদের সাম্পান আটক করলেন। তিনি নোঙর টেনে মগহার্মাদদের সাম্পান জাহাজের দিকে টেনে আনলেন। তারপর তলোয়ার খাপমুক্ত করে সাম্পানে উঠলেন। তিনজন মগহার্মাদকে গ্রেফতার করে জাহাজে সেনাদের হাতে তুলে দিলেন। কিন্তু মগসেনাপতি শাচীন সাম্পান থেকে লাফিয়ে পড়ল নদীতে। তারপর সাঁতার কেটে দূরের আরেকটি সাম্পানের দিকে যেতে চাইল। কিন্তু সাম্পানে থাকা রশিতে ফাঁস তৈরি করে মীর গফুর খান তা শাচীনের দিকে ছুঁড়ে মারলেন। শাচীনের গলায় রশির ফাঁস আটকে গেল। মীর গফুর খান তাকে টেনে সাম্পানে তুললেন। তারপর জাহাজের সেনাদের কাছে সোপর্দ করলেন। আধা ভেজা অবস্থায় মীর গফুর খান পুনরায় জাহাজে উঠে আসলেন।

পুরো ঘটনায় জাহাজের সকল সেনা শাবাশ শাবাশ বলে মীর গফুর খানকে উৎসাহ দিয়ে আসছিল।মীর গফুর খান জাহাজে উঠার পর ধৃত হার্মাদদের বেঁধে রেখে সৈকতের সেনাদের খবর দিতে দূত পাঠালেন।

আলফা হোসাইনীর জাহাজ মগহার্মাদদের গ্রেফতার করেছে এ দৃশ্য ছুটি খান, আলিম খান ও হৈতেন খানরা দেখতে পেলেন সৈকতের বেলাভূমিতে দাঁড়িয়ে। তারাও সাম্পান যোগে জাহাজে যাওয়ার চিন্তা করলেন। কারণ জাহাজে বাগদাদের পতাকা উড়ানো হয়েছে। হৈতেন খান বললেন, যেহেতু আরব বণিকরা মগসর্দারকে ধরেছে, সেহেতু তারা আমাদের হাতেই আছে। আরব বণিকদের সাথে আমাদের ভাল যোগাযোগ রয়েছে।

কিছুক্ষণের মধ্যে একটি সাম্পানকে সৈকতের দিকে আসতে দেখলেন তারা। তাই জাহাজের দিকে আর সাম্পান পাঠানো আপাতত মুলতুবি রাখা হল।

সাম্পান সৈকতে পৌঁছলে মীর গফুর খান নেমে এলেন চাটিগাঁ বন্দরের মাটিতে। তিনি উপস্থিত সবাইকে সালাম দিয়ে মুসাফাহা করার জন্য হাব বাড়িয়ে দিলেন। সকলের সাথে মুসাফাহা করে সৈকতেই বসে পড়লেন তারা।

মীর গফুর খান বললেন, আমি আরব বণিক সৈয়দ আলফা হোসাইনীর নির্বাচিত প্রতিনিধি। আমার নাম মীর গফুর খান। আমি জাতিতে পাঠান। আমি হোসাইনী সাহেবের সেনা কমান্ডার হিসেবে নিয়োজিত আছি। তিনি আমাকে ধৃত মগহার্মাদদের ভাগ্য নির্ধারণের জন্য আপনাদের সকাশে পাঠিয়েছেন।

এমন সময় ঘোড়ায় চড়ে সুলতানজাদা নসরত শাহ চাটিগাঁ বন্দর সৈকতে এসে পৌঁছলেন। তাকে দেখে সকলে তাজিমের সাথে সালাম বিনিময় করলেন। তারপর কুশলাদি বিনিময় শেষে তিনিও সৈকতের বালুকা বেলায় বসে পড়লেন।

মীর গফুর খান আরব বণিক আলফা হোসাইনীর সেনাধ্যক্ষ শুনে তিনি বেশ আনন্দিত হলেন। তিনি বললেন, বাংলার স্বাধীন সুলতানের পক্ষ থেকে আমি সুলতানজাদা নসরত খান তাকে সালাম ও স্বাগতম জানাচ্ছি। পাশাপাশি মগদস্যুদের ধরার জন্য কৃতজ্ঞতাও জানাচ্ছি।

ছুটি খান বললেন, মহামান্য সুলতানজাদা! মগদস্যুদের ধরার দৃশ্য আমরা সৈকত থেকে দেখেছি। তাদের ধরার পুরো কৃতিত্ব এই পাঠান যুবকের। তার নাম মীর গফুর খান।

ছুটি খানের কথা শুনে নসরত শাহ তাকে আবারও ধন্যবাদ ও কৃতজ্ঞতা জানালেন। তারপর বললেন, ঐ মগহার্মাদরা বহুদিন ধরে আমাদের বহু ক্ষতিসাধন করেছে। আমরা যে কোন মূল্যে তাদের আমাদের বিচারেী আওতায় আনতে চাই। আমাদের সালতানাত ন্যায় বিচারের উপর প্রতিষ্ঠিত। সুলতান তাদের যথাযথ বিচার করবেন। এর বিনিময়ে আপনারা কি চান?

মীর গফুর খান বললেন, আমরা আপনাদের কাছে কিছুই চাই না। কেননা আমাদের সব চাওয়া কেবল মহান আল্লাহর কাছে। তবে আপনাদের সাথে যেহেতু আমাদের দীনের সম্পর্ক সেহেতু আপনাদের সাথে আমাদের মৈত্রী সম্পর্ক স্থাপন হতে পারে। আমরা ঐক্যবদ্ধ হলে মগ, বর্গী আর ফিরিঙ্গিদের দমন সহজ হবে। আমরা নৌপথে আপনাদের সহযোগিতা করব। বিনিময়ে বন্দরে অবাধ ব্যবসার সুযোগ ও সমতলভূমিতে নিরাপদ ভ্রমণের সুযোগ প্রদান করতে হবে।

সুলতানজাদা বললেন, আপনাদের এসব চাওয়া বন্ধু ভাবাপন্ন। আমরা পরস্পর দীনিভাই হতে উদগ্রীব। আপনাদের এই আকাঙ্ক্ষা নিশ্চয়ই সুলতান ইতিবাচকভাবে গ্রহণ করবেন।

মীর গফুর খান বললেন, সৈয়দ আলফা হোসাইনী আমাকে এই বন্দরে আবর প্রতিনিধি হিসেবে নিয়োগ দিয়েছেন। আমরা এখানে পাঁচশ সৈন্যের একটি ঘাঁটি স্থাপন করতে চাই। কেননা বহু বছর ধরে মগহার্মাদরা এই চাটিগাঁ ও রেঙ্গুনের পথে আমাদের জাহাজে হামলা চালিয়ে নাবিকদের প্রাণ কেড়ে নিয়েছে এবং লুটতরাজ করেছে। তাদের মোকাবিলায় হোসাইনী সাহেব জাহাজে সেনাদের নিয়োগ দিতে বাধ্য হয়েছেন। আমাদের কিছু সেনা এই বন্দর রক্ষায় আপনাদের সাথে সহকারী হিসেবে কাজ করবে। আমাদের সৈন্যরা আপনাদের ন্যায়ের প্রয়োজনে কাঁধে কাঁধ মিলিয়ে শত্রুর সাথে লড়াই করবে। আপনারা রাজি থাকলে আমরা নিজস্ব উদ্যোগে এখানে পাঁচশো সেনার আাবাসন করতে চাই, যাতে আমরা মিলিতভাবে এই বন্দরের উন্নয়নে শরিক হতে পারি। তবে নেতৃত্ব ও পরিচালনারভার আপনাদের হাতেই থাকবে।

সুলতানজাদা বললেন, সুলতান নিশ্চয়ই আপনাদের আন্তরিকতা সুবিবেচনা করবেন। আমি শিঘ্রই তাঁর কাছে উত্তম সিদ্ধান্ত চেয়ে দূত পাঠাব। সে অবধি আপনারা সৈকতে অস্থায়ী তাঁবু স্থাপন করতে পারেন। আর ধৃত মগসর্দারকেও নিজেদের জিম্মায় রাখতে পারেন।

 

চলবে........

No comments

Powered by Blogger.