মীর সাহেবের সরাই ❑ সেলিম ইসলাম খান ❑ ধারাবাহিক উপন্যাস পর্ব_১৫
মীর সাহেবের সরাই
সেলিম ইসলাম খান
❑
উপন্যাস
আরব বণিক আলফা হোসাইনী
সাম্পান যোগে বন্দর সৈকতে নেমে আসলেন। তিনি জাহাজে থাকতেই খবর পেয়েছিলেন
সুলতানজাদা মগহার্মাদের বিরুদ্ধে এই লড়াইয়ে নেতৃত্ব দিচ্ছেন। এ সময়ে তিনি বন্দর
সৈকতে অবস্থান করছেন। তাই তার সাথে দেখা করার এই মোক্ষম সুযোগ তিনি হাতছাড়া করতে
চাননি।
সুলতানের সেনারা আলফা
হোসাইনীকে চাটিগাঁ বন্দরে স্বাগত জানালেন। তারপর তিনি অস্থায়ী তাঁবুতে সুলতানজাদার
সাথে আলোচনায় মিলিত হলেন। আলোচনায় মীর গফুর খান, ছুটি খান, হৈতেন খান, আলিম আলী
খান, দুলাল দাসরাও অংশ বিয়েছেন।
সুলতানজাদা হার্মাদ
সর্দারকে গ্রেফতারে সহযোগিতা করার জন্য হোসাইনী সাহেবকে ধন্যবাদ জানালেন। হোসাইনী
সাহেবও সুলতান ও সুলতানজাদার মহানুভবতা ও বিচক্ষণতার প্রশংসা করলেন।
আলোচনার মাধ্যমে তারা
একটি চুক্তি সম্পাদন করলেন। চুক্তিতে বন্দরের নিরাপত্তা ও ব্যবসায়িক কার্যক্রম
পরিচালনায় সুলতান ও আরব বণিকরা পরস্পরের সহায়ক হিসাবে কাজ করবে। বিশেষ করে
মগহার্মাদদের দমনে তারা সব সময় অতন্দ্র প্রহরী হিসেবে সর্বক্ষণ সজাগ থাকবেন। লড়াই
কালে কাঁধে কাঁধ মিলিয়ে ময়দানে ঝাপিয়ে পড়বেন।
আলোচনা শেষে নৈশ ভোজে
অংশ নিলেন সবাই। মাছের দশপদ তরকারি আর নানাপদ সবজি রান্না করেছে আলিম আলী খানের
বাবুর্চি।
খাওয়া শেষে সকলে মহান
আল্লাহর দরবারে শুকরিয়া জানিয়ে ইশার নামাজ আদায় করলেন। নামাজ বাদ সৈকতে কিছুক্ষণ
হাঁটা হাঁটি করে নিদ্রায়মগ্ন হলেন।
পরদিন আলফা হোসাইনী
সাহেবের আদেশে জাহাজ থেকে হাজার সেনা নেমে এল। তারপর সৈকতে সুলতানজাদাকে
সৌহার্দপূর্ণ গার্ড অব অনার দেওয়া হল। সুলতানজাদা আলিম আলী খানকে বন্দরের প্রশাসক
নিয়োগ দিলেন। আরব বণিকদের পক্ষ থেকে মীর গফুর খান আলীম খানের সহকারী হিসেবে নিযুক্ত
হলেন। চুক্তিমত পাঁচশ সশস্ত্র আরব সেনা চাটিগাঁ বন্দরের নিরাপত্তায় সার্বক্ষণিক
সজাগ থাকবেন। তাদের জন্য অস্থায়ী সেনা ক্যাম্পের কাজ আজ থেকেই শুরু হবে। পরবর্তীতে
সুলতান আলাউদ্দিন হোসেনশাহ চুক্তিতে সম্মত হলে স্থায়ী সেনাক্যাম্প করার সুযোগ লাভ
করবে আরব বণিকরা।
গার্ড অব অনার শেষে
সুলতানপুত্র নসরতশাহ এক হাজার সুলতানী সেনা বন্দরের নিরাপত্তায় নিযুক্ত করে আলফা
হোসাইনী, আলিম খান ও মীর গফুর খানের কাছ থেকে বিদায় নিয়ে ঘোড়ায় সওয়ার হলেন।
সেনাপতি হৈতেন খান, ছুটিখান ও জাফর খানও নিজ নিজ ঘোড়ার পিঠে চড়ে বসলেন। হাঁক দিতেই
ঘোড়া ছুটে চলল নিমতলী পেরিয়ে সরাইপাড়ার উদ্দেশ্যে। আরব বণিক আলফা হোসাইনীও বিকেলে
কেনাকাটা শেষ করে মীর গফুর খানকে বন্দর ও সেনাদের দায়িত্ব বুঝিয়ে দিয়ে রেঙ্গুন
অভিমুখে জাহাজের নোঙর তুললেন।সুলতানজাদা নসরতশাহ, ছিটিখান ও জাফর খান দুদিন হালিম
খানের আতিথ্য গ্রহণ করে পুরো চাটিগাঁ পরিদর্শন করলেন। সুলতানপুত্র চাটিগাঁর
প্রশাসক হিসেবে হালিম খানের প্রশংসা করলেন। তবে বন্দর ও নগর রক্ষায় আরো সৈন্য
সংগ্রহ করার আহ্বান জানালেন। সৈন্যদের প্রশিক্ষণের জন্য বন্দরে নিযুক্ত আরব
সেনাদের বিশেষ করে সেনানায়ক মীর গফুর খানের পরামর্শ ও সহযোগিতা নিতে আদেশ দিলেন।
তাদের মাধ্যমে সুলতানী সেনাদের প্রশিক্ষণ দেয়ার হুকুম দিলেন। সেই সাথে নতুন নতুন
আবাসন সৃষ্টির কাজও চালিয়ে যেতে বললেন। বিশেষ করে নরখাদক বাঘ অধ্যুষিত কদমতলা ও
পাহাড়তলার মানুষদের নিরাপত্তার দিকে বেশি নজর দেয়ার আদেশ দিলেন।
তৃতীয় দিবসের ভোর রাতে
জোয়ারগন্জ থেকে পরাগল খানের চিঠি এল, তিনি চিঠিতে ত্রিপুরা রাজার সেনারা মেহেরকুল
আক্রমণ করেছে নলে উতকণ্ঠা প্রকাশ করলেন। পরাগল খানের সেনারা চাটিগাঁ আসাতে তিনি
মেহেরকুলে সেনা পাঠানো দুদিন বিলম্ব করেছেন বলে চিঠিতে উল্লেখ করলেন। সুলতানজাদা
নসরতশাহ আরবদেরি না করে সেনাদের নিয়ে জোয়ারগন্জ অভিমুখে রওয়ানা হলেন। ছুটি খান এবং
জাফর খানও নিজ নিজ সেনাদের নিয়ে জোয়ারগন্জ পানে ঘোড়া ছোটালেন।
চলবে........
No comments