মীর সাহেবের সরাই ❑ সেলিম ইসলাম খান ❑ ধারাবাহিক উপন্যাস পর্ব_০৭
মীর সাহেবের সরাই
সেলিম ইসলাম খান
❑
উপন্যাস
সুলতানজাদা নসরত শাহ, চিতাগাং
প্রশাসক আব্দুল হালিম খান ও সেনাপতি হৈতেন খান সেনা শিবিরে গিয়ে সেনাদের উত্তম
খাবার পরিবেশন তদারকি করছিলেন। হালিম খান সাহেবের সেনাপ্রধান জামাল খান ও তার
সেনারা বিকেল থেকেই মাঠে তাঁবু তৈরি করে রেখিলেন, সেই সাথে শত শত শৌচাগারও। যাতে
অতিথি যোদ্ধারা বেশ নির্বিঘ্নে রণপ্রস্তুতি নিতে পারেন।
নসরত শাহকে সেনাদের বিশ্রামের
আয়োজন দেখানোর পাশাপাশি নিজেও কিছু কাজে হাত লাগাচ্ছিলেন হালিম খান। তিনি সেনাদের
লঙ্গরখানায় পাঠিয়ে নিজে অতিথি তাঁবুগুলোতে বালিশ ও বিছানা সরবরাহ করছিলেন।
সুলতানজাদা নসরত শাহও তার সাথে কাজে নেমে পড়লেন।
তা দেখে হালিম খানের চাচা রমজান
আলী ছুটে এলেন, মহামান্য ছোট সুলতান আমরা থাকতে আপনি কাজ করছেন! এটা আমাদের জন্য
লজ্জাজনক ইতিহাস হবে।
সুলতানজাদা বললেন,
আস্তাগফিরুল্লাহ! লা হাওলা ওয়ালা কুওয়াতা ইল্লা বিল্লাহ। চাচা মসজিদে আমরা যেমন
ধনী-নির্ধন এক কাতারে দাঁড়িয়ে ইবাদত করি, যুদ্ধের ময়দানেও আমরা সবাই সমান। জীবনের
প্রতিটি মূহুর্ত যেহেতু যুদ্ধ তাই সব সময়েই আমরা সমান। আমাদের রাসুল (সা) যুদ্ধের
ময়দানে নেতৃত্ব দিয়েছেন। মসজিদ তৈরিতে নিজে ইটের ব্লক তৈরি করেছেন। এমনকি অন্যের
খেজুর বাগান পরিচর্যা করে কায়িক পরিশ্রমে উপার্জিত অর্থ দিয়ে জীবিকা নির্বাহ
করেছেন। আমরা সেই মহানবীর উম্মত হয়ে কর্মবিমুখ হব কি করে¿এদিকে ছুটি খান গভীর রাতে
একদল গুপ্তচরকে প্রশিক্ষণ দিয়ে পুবের পাহাড় দিয়ে নিমতলী পাঠালেন, তারা হার্মাদ
দলের তথ্য সংগ্রহ করে আনবে। কিন্তু মাঝ পথে পাহাড়ের পাদদেশে একটি খাল পার হতে গিয়ে
তারা মগসেনাদের মুখোমুখি হয়ে গেল। মগেরা জেলেদের জাল পেতে তাদের ধরে পেললো। তারপর
শিস দিয়ো তাদের চারপাশে নাচতে নাচতে আনন্দ করতে লাগল। কিছুক্ষণ পর আচানক কয়েকটি
তীর এসে তাদের বুক এফোঁড়ওফোঁড় করে দিল। বন্দীরা পেছন ফিরে চাঁদের আলোয় দেখতে পেল
তীরধনুক হাতে ছুটিখান আলিম খান দাঁড়িয়ে আছেন।
বন্দী দলের সর্দার দুলাল দাস
বললো, মহামান্য ছোটখান আমরা এখনো দৃঢ় মনোবল ধরে রেখেছি। আমরা এগিয়ে যাব। আর তথ্য
সংগ্রহ করে তবেই ফিরব।
ছুটি খান বললেন, বাহ! তোমাদের
সাহস ও মনোবল সত্যিই প্রশংসার দাবি রাখে। ঠিক আছে আমরা সাঁকোর এপারে অবস্থান করছি,
তোমরা বিড়ালের মত সন্তর্পণে এগিয়ে যাও। বুকে হিম্মত রাখো মিয়ারা।
দুলাল দাসের নেতৃত্বে গুপ্তচর দল
গাছের আড়াল নিয়ে এগিয়ে চলল নিমতলীর দিকে।
চলবে.......
No comments