Header Ads

ছোটগল্প আমপত্র ❑ তারেক আল মামুন


ছোটগল্প
 আমপত্র 

তারেক আল মামুন 

১৯৯৭ সাল। এসএসসি পরীক্ষা শেষ। হাতে অফুরন্ত সময়। তখনকার দিনে আমার কাছে বিনোদন বলতে ক্রিকেট খেলা, আর ডেকসেটে (বিশালাকৃতির ক্যাসেট প্লেয়ার) উচ্চস্বরে গান শোনা। আমার আবার সেকেলে পছন্দ। পুরাতন রোমান্টিক গান। বন্ধুদের নিয়ে বাহিরের রুমের দরজা জানালা খুলে দিয়ে জোরে জোরে গান শোনা নিয়মিত অভ্যাসে পরিনত হয়েছিল৷ অবস্থাটা এমন পাড়ার সবাইকে আমার পছন্দের গান জোর করে হলেও শুনাতে হবে।
এভাবেই চলছিল রেজাল্টের অপেক্ষায় বসে থাকা সময়গুলো। একদিন খেয়াল করলাম রাস্তার ওপারের বাড়ির দুইজন চেয়ারে বসে মনোযোগ দিয়ে গানগুলো শুনছে। একজন পাশের বাড়ির আন্টি কিন্তু আরেকজনকে কোনদিন দেখিনি। মেয়েটা আমাদের বয়সী হবে। বেশ আকর্ষণীয়। যাই হোক পরেরদিন আবার যখন গান ছাড়লাম কিছুক্ষন পর দেখি দুজন চেয়ার নিয়ে বসে পড়েছে। আমার মনে হলো তারাও বুঝি আমার মতো এই গানগুলো পছন্দ করে।
এভাবেই কয়েকদিন পার হলো। খোঁজ নিয়ে জানতে পারলাম মেয়েটার নাম সাথী । এবার এসএসসি পরীক্ষা দিয়েছে। বাড়ি ফরিদপুর। মামার বাড়ি বেড়াতে এসেছে। বেশকিছু দিন থাকবে।
মেয়েটাকে গান শোনানো আমার মোটামুটি রুটিন হয়ে গেছে। আমি গান দিলেই তারা চেয়ার নিয়ে চলে আসে। যতক্ষণ গান চলে বসে থাকে। মাঝেমধ্যে নিজেরাও গায়। আবার নিজেরা নিজেরাই কি সব বিষয় নিয়ে হাসাহাসি করে।
এভাবেই প্রায় ১৫ দিন অতিবাহিত হয়। কখনও সাহস হয়নি সরাসরি তাদের দিকে তাকাতে। আমার রুম থেকেই তাদের দেখা যেত। মাঝখানে ছিলো শুধু রাস্তা আর ছোট্ট একটা দেওয়াল।
আমাদের পাড়ায় বিখ্যাত ছিলো সরদার বাড়ির কাঁচামিঠা আম। মোটামুটি সবার কাছেই বেশ লোভনীয় ছিলো আমটা। কাঁচা আমের এতো স্বাধ হতে পারে না খেলে বুঝানো সম্ভব নয়। যে কেউ অনায়াসে ১০/১২ টা এক নিমিষেই খেয়ে ফেলতে পারবে। সেবার ঐ গাছে আম একেবারেই কম।
চুরি করা ছাড়া ঐ আম খাওয়ার কোন সুযোগ নেই। যাই হোক রাত ১২ টায় অনেক কষ্টে তিনটা আম পাড়লাম৷ ইচ্ছা সাথীদের দুইটা আম দিব। আমার জন্য একটা।
আমি আম দেওয়ার সুযোগ খুজছিলাম। সরাসরি তাদের সাথে কথা বলার সাহসও ছিলো না। যাইহোক অনেকক্ষণ পর তাদের আম দেখিয়ে ইশারা করলাম, আম খাবে কিনা? সঙ্গে সঙ্গেই তারাও ইশারা দিয়ে জানালো দেওয়ালের উপর দিয়ে ছুঁড়ে দিতে। আমি তাই করলাম।
পরেরদিন অবশিষ্ট আমের সাথে ছোট একটা চিঠি স্টেপলার দিয়ে জুড়ে দিলাম। এবং ইশারা করলাম আম নিবে কিনা? তারাও রাজি হলো। দেওয়ালের ওপাশে ছুঁড়ে দিলাম আম সহ পত্র। আমপত্র
আমি বাসায় বসে আছি। কিছুক্ষন পর একটা ছেলে এসে বললো সাথী আপু আপনাকে ডাকে। দুরুদুরু বুকে রওনা দিলাম। আমি ওদের বাড়ির কাছে যেতেই দেখি দুজনে বাড়ির গেটে দাঁড়িয়ে আছে। আমাকে দেখে আন্টি বললো “ তোমাকে তো আমরা অনেক ভালো বলেই জানতাম। তুমি আমের সাথে পত্র দিয়েছো! এটা কি ঠিক করেছো? লোকে জানলে কী বলবে?”
নিজেকে খুব অপরাধী মনে হচ্ছিল। কী বলবো ভেবে পাচ্ছিলাম না। যাই হোক এমন বিব্রতকর অবস্থার সম্মুখীন হয়নি। নিজেকে সামলে নিয়ে বললাম “আপনারা কি চিঠিটি পড়েছেন? কী লেখা আছে?”
------ না, পড়ি নি।
------- তাহলে পড়ে দেখেন। আন্টি চিঠিটা আমার সামনে খুললো।
চিঠিতে লেখা “ অনেক কষ্ট করে আমগুলো গাছ থেকে পেড়েছি। একটা ধন্যবাদও দিলেন না।”
চিঠিটা পড়ে উনারা নিজেরাই বেশ লজ্জিত। নিজেদের ভুল বুঝতে পেরে সবকিছুর জন্য আমার কাছে দুঃখ প্রকাশ করলেন।
আমি বাসায় চলে আসলাম। মনে মনে সিদ্ধান্ত নিলাম কষ্ট করে আর কাউকে আম খাওয়াবো না এমনকি আমপত্রও দিবো না কোনদিন।

No comments

Powered by Blogger.