Header Ads

মীর সাহেবের সরাই ❑ সেলিম ইসলাম খান ❑ ধারাবাহিক উপন্যাস পর্ব_০৮

 


মী সাহেবেরা

সেলিম ইসলাম খান

উপন্যাস

ধারাবাহিক পর্ব_০৮

বামুনদের পলায়নের পর সমবেত জনতার উদ্দেশ্যে ধন্যবাদ জানিয়ে বক্তব্য রাখলেন মালাবারের রাজা জামোরিন। সমাবেশে আরব বণিক সৈয়দ আলফা হোসাইনী ও তার বন্ধুর সহায়তায় হানাদার পর্তুগিজ নাবিক ভাস্কো দা গামাকে গ্রফতারের কথাও জনগণকে জানানো হয়। জনতা রাজা জামোরিন, আলফা হোসাইনী ও ইউনিসের নামে জয়ধ্বনি দিতে দিতে ঘরে ফিরে গেল।

রাজা জামোরিন নৈশভোজে সৈয়দ আলফা হোসাইনীসহ অন্যান্য আরব বণিকদের ধন্যবাদ জানিয়ে নৈশভোজ উপভোগ করার আহ্বান জানালেন। তারপর আলফা হোসাইনী ও ইউনুসকে লক্ষ্য করে বললেন, আপনারা এই অসম্ভবকে কিভাবে সম্ভব করলেন?

আলফা হোসাইনী বললেন, এই কৃতিত্ব আমাদের নয় মহারাজ। এটা মীর গফুর খানের কৌশল।

জামোরিন বললেন, মীর গফুর খান আবার কে?

আলফা হোসাইনী বললেন, তাকে আমি করাচী থেকে পেয়েছি। ছোটখাট ব্যবসায়ী। কিন্তু তার পরিশ্রম আর বুদ্ধিমত্তা আমাকে মুগ্ধ করেছিল। তাই তাকে আমার জাহাজে কাজ দিয়েছি। কিন্তু সে নিজ যোগ্যতা বলে দিনে দিনে অন্যদের ছাড়িয়ে গিয়েছে। তাই সেদিন ভাস্কোকে পরাজিত করার কৌশল নির্ধারণী সভায় আমি তাকে সঙ্গে রেখেছিলাম। আমরা সবাই যখন বিনা যুদ্ধে ভাস্কোকে হারানোর কৌশল খুঁজতে পেরেশান ছিলাম, তখন সে পথ বলে দিল। পুরো মিটিংয়ে চুপ থেকে কোন সিদ্ধান্ত দেখতে না পেয়ে শেষে সে কথা বলল। আমাদের জিজ্ঞেস করল, পর্তুগিজদের প্রিয় খাবার কী?

আমরা অবাক হলাম। আমরা সবাই যুদ্ধ নিয়ে চিন্তা করছি। আর আসে খাবার নিয়ে চিন্তা করছে! কিন্তু মীর গফুর খান আবারও বেশ আত্মবিশ্বাসের সাথে বলল, তাদের প্রিয় খাবারের নাম বললে। আমি নিজেই তাদের পরাজিত করতে পারব।

আমরা আবারও অবাক হলাম। এই পাগল বলে কি? আমরা ডজন ডজন আরব বণিক চিন্তায় হয়রান। আর সে নাকি একাই পর্তুগিজদের হারিয়ে দেবে! পাগল নাকি।

কিন্তু আমি তাকে সুযোগ দিলাম। আর ইউনুসের দিকে তাকালাম।

ইউনুস বলল, শুনেছি ভাস্কো এর আগেও একবার মালাবার এসেছে। বামুন সর্দার শিবরামের সাথে ভাল বন্ধুত্ব রয়েছে। বন্দরের এক আরব নাবিক জানালো, সে তাদের মদ আর পাখির মাংস খেতে দেখেছে।

বলফা হোসাইনী বললেন,এই ফিরিঙ্গিরা মাদাগাস্কারের নিরীহ পাখি ডোডোদের ধরে ধরে খেয়েছে। খেয়ে খেয়ে বিলুপ্ত করে দিয়েছে। এটা দেখতে অনেকটা হাসের মত।

মীর গফুর খান বললেন, তাহলে একশ হাঁস রান্না করে আমাকে দিন আরআসেই সাথে ইউরোপীয় মদ। আমি কয়েক ঘন্টার মধ্যে আপনাদের বিজয় উপহার দেব ইনশাআল্লাহ। এখন আমি জাহাজের হেকিমের সন্ধানে চললাম। উঠার জন্য আপনাদের অনুমতি চাইছি।

মীর গফুর খান একথা বলে চলে গেল। যথাসময়ে তাকে হাঁসের মাংস ও পর্তুগীজ মদ দেয়া হল। কয়েক ঘন্টারনপর ভিজে শরীরে এসে বলল, হোসাইনী সাহেব, পাঁচটি জাহাজের সব নাবিক অঘোরে ঘুমোচ্ছে। আপনি সেনাদের পাঠিয়ে জাহাজগুলোর দখল নিন। আমি অবাক হলাম! পাগল এসব কি বলছে! কিন্তু আমার নিকটবর্তী নায়েব বলল, মীর গফুর খানের কথা সত্য। এরপর আমরা বিনা রক্তপাতে পর্তুগীজদের গ্রেফতার করে জাহাজ দখলে নিলাম।

রাজা জামোরিন বললেন, মীর গফুর খান সাহেব একা এত বড় কাজ কিভাবে করতে পারলেন?

আলফা হোসাইনী বললেন, সে শুধু সাঁতার কেটে ঐ জাহাজগুলোতে পাখির মাংস আর মদ রেখে এসেছিল।

জামোরিন বললেন, এবার বুঝতে পেরেছি। ঐ খাবারে চেতনানাশক দাওয়াই মেশানো ছিল, সে জাহাজের হেকিমের নিকট থেকে সেই দাওয়াই নিয়েছিল।

হোসাইনী বললেন, আপনি ঠিকই ধরেছেন মহারাজ।

রাজা জামোরিন বললেন, আপনার এই নাবিকতো বেশ বুদ্ধিসম্পন্ন। আমি তার কৃতিত্বে বেশ বিমোহিত। আমি তাকে ধন্যবাদ জানাতে চাই। আপনারা অনুমতি দিলে আমি তাকে এই ভোজ সভায় আমন্ত্রণ জানাতে চাই।

আলফা হোসাইনী খুশি হয়ে বললেন, আপনি মহান শাসক। আপনার বদান্যতা জগতে মশহুর। এই ভোজ সভার আমন্ত্রণ জানিয়ে ধন্যবাদ দিলে তা আপনার মহানুভবতার পরিচায়কনহবে।

রাজা জামোরিন উজীরকে মীর গফুর খানকে ভোজনসভায় আমন্ত্রণ জানানোর আদেশ দিয়ে বললেন, না না হোসাইনী সাহেব। এটা মহানুভবতার বিষয় মোটেও নয়। এমন উপকারী জ্ঞানী মানুষকে মর্যাদা প্রদান ও তার সহায়তার জন্য ধন্যবাদ জ্ঞাপন আমাদের দায়িত্ব। কেননা তিনি কেবল আমাকেই নয়, মালাবারবাসীকেও রক্ষা করেছেন।

 

চলবে........

No comments

Powered by Blogger.