মীর সাহেবের সরাই ❑ সেলিম ইসলাম খান ❑ ধারাবাহিক উপন্যাস পর্ব_১১
মীর সাহেবের সরাই
সেলিম ইসলাম খান
❑
উপন্যাস
নিমতলী থেকে পশ্চিমের
জংলাপথ ধরে দুরন্ত বেগে ছুটে চলেছে একদল ঘোড়সওয়ারী। ঘোড়ার খুরে ধুলি উড়ে চারদিক
অন্ধকার হয়ে উঠেছে। একজন পলায়নপর ঘোড়সওয়ারীকে ধাওয়া করে এগুচ্ছে তারা। কয়েক মাইল
ঘোড়ায় ছোটার পর একটি খালের কাছে এসে থামল ঘোড়সওয়ারী শাচীন। চওড়া খাল, দখিনে তাকালেই
কর্ণফুলি নদী দেখা যায়। খালটি নদীতে গিয়ে পড়েছে। খালের পাড়ে কিছু সাম্পান বাঁধা।
এগুলো জেলেদের সাম্পান। কর্ণফুলিতে এই সাম্পান বেয়ে মাছ ধরত জেলেরা। কিন্তু
মগহার্মাদরা তাদের সাম্পান আর জাল কেড়ে নিয়েছে।
শাচীন ঘোড়াসহ একটি
বিশাল সাম্পানে উঠে গেল। এক কয়েকজন মগসেনা দ্রুত সাম্পান বেয়ে তাকে ওপারে পৌঁছে
দিল। কিছুক্ষণের মধ্যে ওপারে পঞ্চাশ জনের মত ঘোড়সওয়ারি এসে থামল। চারপাশে কাউকে
দেখতে পেল না তারা। তারা গভীর খাল দেখে দাঁড়িয়ে পড়ল। কিছুক্ষণ নিজেদের মধ্যে
আলোচনা করে প্রতিটি সাম্পানে একজন করে ঘোড়সওয়ারী উঠে খাল পার হতে লাগল। বারোটি
সাম্পানে বারোজন উঠল। মাঝ খালে যেতেই ওপারে আচানক উলুধ্বনি শুনতে পেল তারা। একদল
তীরন্দাজ সাম্পানের ঘোড়সওয়ারীদের লক্ষ্য করে তীর নিক্ষেপ করতে লাগল। সওয়ারী সর্দার
ছুটি খান সবাই ডাল দিয়ে আত্মরক্ষার আদেশ দিলেন। আর সাম্পান বাওয়া সেনাদের তীর
ছঁুড়তে আদেশ দিলেন। উভয় পক্ষ কিছুক্ষণ তীর বিনিময় করার পর খালের তীরন্দাজরা জয়ী
হল। খালপাড়ের তীরন্দাজরা গাছের আড়ালে সুবিধাজনক অবস্থানে থাকলেও তাদের তীর ফুরিয়ে
এসেছিল। তাই তারা রণেভঙ্গ দিয়ে পশ্চিমে পালিয়ে গেল।
ছুটি খানসহ বারোজন
ঘোড়সওয়ারী প্রথম বারে খালের পশ্চিম পাড়ে পার হলেন। পার হয়েই তিনি ঘোড়া থেকে
নামলেন। পশ্চিম পাড়ের ঘাটে বাঁধা সাম্পানগুলো তল্লাশি করলেন। একটি সাম্পানে তিনি
ঘোড়ার খুরের দাগযুক্ত মাটি লেগে থাকতে দেখলেন। তিনি মাটিতে হাত দিয়ে অস্ফুটে
বললেন, মগসর্দার শাচিনপ্রু এই সাম্পানে করে খাল পার হয়েছে। এখনো মাটি গরম। বেশিক্ষণ
হয়নি তারা তারা গিয়েছে। আমরা এখনই এগিয়ে গেলে তাকে ধরতে পারব।
সীতাকুন্ডের সেনাধ্যক্ষ
জাফর বললেন, না ছোট খান সাহেব, সে একা নয়, একা হলে এত দ্রুত সাম্পান বেয়ে সে খাল
পার হতে পারত না।
ছুটি খান বললেন, আপনি
ঠিক বলেছেন জাফর। মনে হচ্ছে আরো চারজন এই সাম্পানে ছিল। পালিয়ে যাওয়া তীরন্দাজদের
সংখ্যা বিশের মত হবে। তাদের কাছে আর তীর নেই সুতরাং ভয়ের কিছু নেই। ঐ পচিশ জনের
মোকাবেলায় আমরা বারোজনই যথেষ্ট। বলেই তিনি ঘোড়ার পিঠে উঠলেন। বাকি এগারোজনও তাকে
অনুসরণ করল। ততক্ষণে তেরোটি সাম্পান খালের ওপারে পৌঁছে গিয়েছে। ছুটি খান হাত নেড়ে
তাদের বিদায় জানিয়ে পশ্চিম দিকে ঘোড়া ছোটালেন। বাকি সেনারাও দ্রুত খাল পার হয়ে এল।
ছুটি খানের বারো
ঘোড়সওয়ারী দ্রুত বেগে পশ্চিমে ছুটে চলছিল। তাদের লক্ষ্য মগসেনাপতি শাচিনকে
গ্রেফতার করা। কয়েক মাইল ছোটার পর তারা পাহাড়িয়া এলাকায় প্রবেশ করল। জঙ্গল এখানে
আরো ঘন হয়ে এসেছে। এ পথে ঘোড়া দ্রুত ছোটানো বেশ কঠিন। গাছের ডালোলা পথের দিকে
ঝঁুকে এসে পথ সংকীর্ণ করে দিয়েছে। কিছুক্ষণ ধীরে চলার পর হঠাৎ এক ঝাঁক তীর এসে
তাদের ঘিরে ধরল। একটি তীর ছুটি খানের বাম বাহু ভেদ করল। ছুটি খান একটুও না থেমে
দ্রুত গতিতে ঘোড়া ছোটালেন। সেনাদের অধিকাংশই তীরের আঘাতে মারাত্মক জখম হল। কেবল
পাঁচজন সেনা সামান্য জখম নিয়ে ছুটি খানের পিছু নিতে পারল। তারা পাল্টা তীর ছুটতে
লাগল মগদস্যুদের দিকে। কিন্তু তা ব্যর্থ হয়ে গেল। কারণ মগতীরন্দাজরা গাছের আড়াল
থেকে তীর ছুঁড়ছিল।
চলবে........
No comments