মীর সাহেবের সরাই ❑ সেলিম ইসলাম খান ❑ ধারাবাহিক উপন্যাস পর্ব_০৩
মীর সাহেবের সরাই
সেলিম ইসলাম খান
❑
উপন্যাস
উত্তর চিতাগাঙের প্রাদেশিক রাজধানী
জোয়ার গঞ্জ। ছোট্ট একটি পাহাড়ের পশ্চিম পাশে পোড়ামাটির ইট সুরকি দিয়ে তৈরি করা কয়েকটি
বিল্ডিংয়ে এর প্রশাসনিক অফিস। এখানে বসে শাসনকর্তা পরাগল খান রাজ্য পরিচালনা করেন।
এটি পূর্ব বঙ্গের স্বায়ত্তশাসিত অঞ্চল হলেও গৌড়ের সুলতান আলাউদ্দিন হোসেন শাহের অধীন।
সুলতানকে যেমন খাজনা দিতে হয়, তেমনি প্রয়োজনে সুলতানের নিকট থেকে নানান সহযোগিতাও পাওয়া
যায়। বিশেষ করে মগহার্মাদদের দমনে সুলতান সব সময়ই পাশে থাকেন। মগ হার্মাদরা সন্দ্বীপ
দখল করে উপকূলেও হামলা চালাচ্ছে, পরাগল খান এ খবর গৌড়ের সুলতানকে জানিয়েছিলেন। তারই
প্রতিবিধানে সুলতান যুবরাজ নসরত শাহ ও উজির হামিদ খানকে চিতাগাং পাঠিয়েছেন।
ইশার নামাজের পর পরাগল খান ছোট সুলতান
ও সুলতানের উজিরকে রাতের খাবারের জন্য আহ্বান জানালেন। শীতলপাটির উপর রঙিন দস্তরখান
বসানো হল। হাত ধোয়ার জন্য দেয়া হল পিতলের শিলমচি। মাটির সানকিতে আউশ চালের লাল ভাত,
মাষ কলাইয়ের ডাল আর রুই মাছের তরকারি।
খেতে খেতে তারা রাজনৈতিক আলোচনাও
শুরু করলেন।
পরাগল খান বললেন, মহামান্য সুলতান
তকতে বসার পর আমাকে চিতাগাঙের রাজ্যপ্রশাসক হিসেবে স্বীকৃতি দেয়ায় মহান সুলতানের প্রতি
কৃতজ্ঞতা পোষণ করছি।
সুলতানপুত্র নসরত শাহ বললেন, এটা
আপনার প্রাপ্য ছিল চাচা। আপনার সুশাসনের কথা বাবার আগে থেকেই জানা ছিল। তাছাড়া ত্রিপুরা
আর মগদের দমনে আপনার সাহসিকতার কথা বাবার মুখে ছোট বেলা থেকে শুনে এসেছি। বাবা আপনাকে
বেশ পছন্দ করেন। তাছাড়া গৌড়ের দরবারে হত্যাকাণ্ড ও অরাজকতার সময়ে আপনার বাবা রাস্তী
খান আমার বাবাকে সমর্থন করেছিলেন। বাবা তা ভুলে যাননি।
পরাগল খান বললেন, আমার বাবা সে সময়
আপনাদের আগলে রেখেছিলেন। তিনি ইন্তিকালের আগে আপনাদের নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে নিজের সহযোগী হামিদ খানকে মহলের দায়িত্ব
দিয়ে আসেন।
নসরত শাহ বললেন, আপনার বাবা মহান
সেনাপতি রাস্তি খানের সেদিনের সিূ্ধান্ত শতভাগ সঠিক ছিল। তিনি সেদিন বঙ্গের বীর পাহলোয়ান
হসমিদ চাচাকে আমাদের নিরাপত্তায় নিযুক্ত করেন। হামিদ চাচার সাহসিকতায় সেদিন আমাদের
বাড়ির সকলে হত্যাকান্ড থেকে রক্ষা পেয়েছিলাম।
এ কথা শুনে সুলতানের উজির হামিদ খান
বললেন, আস্তাগফিরুল্লাহ। লা হাওলা পয়ালা কুওয়াতা
ইল্লাহ বিল্লাহ। আমাকে এভাবে শরমিন্দা করবেন না ছোট সুলতান। সেদিন আমার প্রতি এটা দায়িত্ব
ছিল। আমি রাস্তিখান সাহেবের দেয়া দায়িত্ব পালনের চেষ্টা করেছি মাত্র। সবই করেছেন মহান
আল্লাহ। তিনিই আপনাদের রক্ষা করেছেন।
পরাগল খান বললেন, এখন শুধু মগহার্মাদরাই
নয়, আমার গুপ্তচর খবর এনেছে ত্রিপুরার রাজা ধনমানিক্য মেহেরকুন ও খন্ডল দখলের প্রস্তুতি
নিচ্ছে। এমতাবস্থায় আমি সৈন্য সংখ্যা বৃদ্ধি করার কথা ভাবছি।
নসরত শাহ বললেন, অতি উত্তম চিন্তা
চাচা। আমি চিতাগাং অভিযান শেষ করে সেনাপতি হৈতেন খানের নেতৃত্বে এই লস্করদের আপনার
কাছে রেখে যাব। তারা বেশ রণকুশলী, আপনি তাদের কাজে লাগাতে পারবেন।
আলোচনার পর সুলতানপুত্রের ঘুমানোর
ব্যবস্থা করা হল। উজির হামিদ খানের বাড়ি জোয়ারগন্জের পাশেই। তিনি সকলের কাছ থেকে বিদায়
নিয়ে বাড়ির পথে ঘোড়া ছোটালেন।
চলবে........
No comments