প্রথম প্রেম ❑ সাবরিনা মোয়াজ্জেম ❑ পর্ব_০৩
প্রথম প্রেম
সাবরিনা মোয়াজ্জেম
❑
তারপর কখনো জানালায়, কখনো বাসায়
কখনো ছাদে আমাদের ছুটোছুটি চলতেই থাকে! হা পড়ার বিষয়ে আমি কখনো আপোষ করিনি। অন্য
কিছু ধ্যান জ্ঞান থাকলেও পড়ার সময় পড়া! কিন্তু বনলতার জন্যে আমার টেবিলটা অন্য
রুমে সেট করতে হলো। কারণে অকারণে বনলতা জানালায় এভাবে আঁকড়ে থাকলে আমি পড়বো কি
করে!
হা, মনে মনে দুজন দুজনকে খুব
পছন্দ করে ফেলেছি! কিন্তু ওই যে ভালোবাসার কথা কেউ কাউকে বলতে পারছিনা! সারা
কোয়ার্টার জুড়ে গাছ গাছালি, সন্ধ্যা হবার আগেই যেনো সন্ধ্যা নামে! বুনো ফুলের
সুবাস, কামিনীর হাসনা হেনা ফুলের সুবাসে প্রেমকে আরও মোহময়ী করে তোলে। সাথে আছে
বাশ ঝাড়, অল্প বাতাসে শন শন ঢেউ খেলে আমার প্রেমিক মনকে করে তোলে উতলা! এই মনকে কি
করে আমি উপেক্ষা করবো?
রিম ঝিম বৃষ্টি হলে তো কথাই নেই
আমি কবিতার খাতায় বনলতাকে ঠাঁই বসিয়ে নেই! হড়হড় করে কাব্য বেরুতে থাকে! ভালো বাঁশি
বাজাতে জানতাম রিমঝিম বৃষ্টি কিংবা বৈশাখ জৈষ্টের উদাস দুপুরে বাঁশির একটানা সুরে
বনলতা কখন আমার পাশে টের পেতাম না! হঠাৎ দেখতে পেতাম ও কাঁদছে! কান্নার কারণ অতি
প্রেম! আমি জড়িয়ে ধরে বুঝিয়ে বাসায় পাঠাতাম!
প্রেম শত সুরের শতরঞ্জিতে বাঁধা
হলেও ভালোবাসি কথাটা মুখে বলা হয়না! একদিন দুপুরে দুজন জানালা বরাবর দাঁড়িয়ে, মা
বাবা ঘুমিয়ে আছে। বনলতা একটা লাঠির আগায় কিছু বেঁধে আমার জানালা বরাবর পাঠালো! আমি
রশি থেকে খুলে দেখি এক দিস্তা কাগজের চিঠি! যা আমি এ বাসায় আসা থেকে এই অব্ধি আমায়
নিয়ে লেখা তার কাঁচা পাকা হাতের লেখায় ভালোবাসার উপন্যাস! আমিও হকচকিয়ে উঠি! বনলতা
তাহলে পড়ার আড়ালে আমাকে শুধু চিরকুট ই লিখতো! আমি পড়ে আবেগ আপ্লূত হয়ে চোখ মুচলাম।
জানি তার ভালোবাসার উপন্যাস বিশাল। কিন্তু তাকে পড়তে হবে আমার মতো না হলেও
মোটামুটি ভাবে!
আমি ইশারায় বনলতাকে ছাদে ডাকলাম
সে এলো সেদিনও ঝিরিঝিরি বৃষ্টি ওকে নিয়ে সোজা ছাদে! বুকের বাপাশে জড়িয়ে ধরলাম ও
মোমের মতো গলে গেলো! বুঝিয়ে বললাম, তোমাকে আমার জন্যে অনেক পড়তে হবে। ও শুধু কাঁদছে!
তখন চোখের জল আর বৃষ্টি একাকার!
চলবে.........
মডেলঃ আমার মেয়ে, ডাক্তার শাহ ফারাহ।
প্রথম প্রেম
সাবরিনা মোয়াজ্জেম
No comments