সিঙ্গাপুরের প্রবাস জীবন এবং কিছু অভিজ্ঞতা ❑ আলমগীর হোসেন
সিঙ্গাপুরের
প্রবাস
জীবন
এবং
কিছু
অভিজ্ঞতা
আলমগীর
হোসেন
❑
সিঙ্গাপুর লাইফ নিয়ে অনেকেই অনেক কিছু লেখে তাই ভাবলাম নিজের কিছু কথা শেয়ার করি।
২০০৭ সালে ডেলগ্রো সেটস্কো ট্রেনিং সেন্টার থেকে পাশ করে একটা প্রাইভেট হাউজ বানানোর কোম্পানিতে আইপি হয়। ২৬০০০০ টাকা দিয়ে চলে আসলাম সিঙ্গাপুর। এয়ারপোর্টে থেকে মেডিকেল শেষে আমাকে নিয়ে যাওয়া হলো সরাসরি কাজের সাইডে, সবাই ইন্ডিয়ান আমি একা বাঙ্গালী
,, ক্ষুদায় পেট ছিড়ে যাচ্ছে ব্যাগ খুলে বাড়ি থেকে আনা চিরা আর গুর বের করে পানি দিয়ে ভিজিয়ে খেলাম। সন্ধ্যা আসতে একজন ইন্ডিয়ানকে ইংলিশে বলার চেস্টা করলাল আমাকে থাকার জায়গায় কখন নিয়ে যাওয়া হবে উত্তরে সে বললো এখানেই কাজ এখানেই থাকার জায়গা তখন আমি আশেপাশে কয়েক নজর তাকিয়ে ভাবলাম এখানে কিভাবে থাকবো,, তাছাড়া আমি খাবো কি যাই হউক সে রাত্র চিরা গুর খেয়েই কেটে গেলো।
পরদিন সকালে ঘুম থেকে উঠার পর কাজ দিলো, না খেয়ে কাজে লেগে গেলাম কিছুক্ষণ পর কোম্পানির সাবকন গ্লাস ফিটিং এর কাজ করে কিছু লোক আসলো তাদের মধ্যে একজনকে দেখে দেশী ভাইয়ের মত লাগলে কাজ বাদ দিয়ে দৌড়ে তার কাছে যাই। জিজ্ঞেস করি ভাইয়া আপনি কি বাংলাদেশী উত্তরে বললেন হ্যা, তখন চোখের পানি ছেড়ে দিয়ে তার কাছে আমি খুলে বলি ভাইয়া আমি এখনো কিছু খাইনি তাছাড়া আমি এখানে কি খাবো আমারতো কিছুই নাই আপনি একটু চায়না ফোরম্যানকে বুজিয়ে বলুন সে যেনো আমাকে এমন এক সাইডে কাজ দেয় যেখানে বাংলাদেশী ভাই আছে। ভাইটি আমার কথা শুনে ফোরম্যানকে বুজিয়ে বলে এবং সেদিন সন্ধায় আমাকে অন্য এক সাইডে নেওয়া হয় যেখানে আরেকজন বাঙ্গালী
ছিলো সেও ছিলো একা তার সাথে মিল করে সপ্তাহ খানেক কাজ করলাম পরে তাকে চেঞ্জ করে দিলো অন্য সাইডে। আসলে পুরো কোম্পানিতে বাঙ্গালী
ছিলো মাত্র ৫ জন একেকজন একেক সাইডে এভাবেই কাজ করে। বাড়িতে কোনদিন সাংসারিক কাজ করিনি এলাকার মধ্যে ছাত্র ভালো ছিলাম হটাৎ বিদেশের ভুত মাথায় চাপার কারনে লেখাপড়া গোল্লায় গেলো,, কিন্তু সিঙ্গাপুর
গিয়ে চায়না ফলো সিমেন্ট মিক্সিংএর কাজ করি, আমি আধা ঘন্টায় যা মিক্সিং করি ওরা তিন চারজন মিলে ১০ মিনিটে তা শেষ করে খালি বালতি ডিল মেরে পায়ের কাছে দেয়৷ কাজ শেষে কারও সাথে যে কিছু কথা বলবো সে সুযোগটাও নাই। আগের এক সপ্তাহর মধ্যে দেশি ভাইয়ের সাথে থেকে আশে পাশে দোকান পাট চিনেনিয়েছিলাম রান্না বান্না যা পারি একাই করি একাই খাই আর ভাবি কই আসলাম এইটা কি সিঙ্গাপুর।
২০/২২ দিন এভাবে কাজ করার পর অন্যান্য সিনয়র এলাকার ভাই তাদের সাথে ফোনে যোগাযোগ করি কোনভাবে কোম্পানি পরিবর্তন করা যায় কিনা কারন এত কস্ট আমি আর সহ্য করতে পারতেছিনা তারপরও একা একা বাকি সব চায়না আর ইন্ডিয়া,, প্রাইভেট হাউজের এলাকা বলে রাতে বাহিরে আসলেও কোন দেশি ভাইকে দেখতে পেতামনা, সিদ্ধান্ত নিলাম দেশে চলে যাবো অন্য কোম্পানিতে আসবো আলহামদুলিল্লাহ এক বন্ধুর মাধ্যমে একটা কোম্পানির ফোরম্যানের সাথে কথা হলো তিনি কথা দিলেন দেশে গেলে সে আনতে পারবে আর কোম্পানি ১৫০০ডলার কাটবে আসার পর + টিকেট আমার। অবশেষে মাস শেষ হতে না হতেই চলে গেলাম দেশে। দেশে ফিরে যাওয়াতে বাবা মনে ভিষণ কস্ট পেলেন কারন এতগুলো টাকা কার না কস্ট লাগে। আমি শুধু বাবাকে আশ্বাস দিয়ে বললাম খুব শীগ্রই আমি অন্য কোম্পানিতে চলে যাবো ইনশাআল্লাহ। আর ভাই পারার মানুষযে কতরকম কথা বলতে শুরু করলো ও কাজ করে খেতে পারবেনা শুধু শুধু টাকা নস্ট করে ওকে বিদেশ দিয়েছিলো আরও অনেক কিছু। আলহামদুলিল্লাহ দেশে আসার ৪ দিন পর নতুন কোপানিতে আইপি হলো যত দ্রুত সম্ভব চলে যেতে বললো ৯ দিনের দিন চলে আসলাম আবার সিঙ্গাপুর থাকার জায়গা কাকিবুকিট মিনি হোস্টেল বর্তমান নাম the leo dormetory. লাল পাইপ আর এয়ারকন পাইপের কাজ ভালোই লাগে কাজ করতে, সারাদিন কাজ করি রাতে রুমে ফিরে গোসল করে জামাতের সাথে এশার নামাজ পরি আশে পাশে অনেক বাংলাদেশী লোক কথা বলি ভালোই লাগে তখন সিঙ্গাপুর। দুই বছর পর কিছু দিনের জন্য ছুটি যাই আবার ফিরে এসে তিনবছর থাকি বসকে বলে আবার ছুটি যাই সেবারের ছুটিতে বিয়ে করে তিন মাস থেকে আবার ব্যাক টু সিঙ্গাপুর এবার দুই বছর পর ভাবলাম ছুটি গিয়ে বাচ্চা নেওয়ার সম্ভাবনা খুব কম তাই পারমিট শেষ করে গেলাম বসকে বুজিয়ে বললাম সুখবর পেলে জানাবো তারপর যেনো আইপি পাঠায়।
দেশে যাওয়ার পর অনেক ডাক্তারের সরাপন্ন হয়ে টাকা পয়সা খরচ করে ৫ মাস পর একটা সুখবর পেলাম এদিকে আব্বা হটাৎ করে স্টোক করলো তাকে নিয়ে ঢাকা জায়গায় জায়গায় দৌড়াদৌড়ি। স্ত্রী এবং বাবার পিছনে ক্যাশ টাকা যা ছিলো তা খরচ করে অবশেষে আবাদি জমি অন্যের কাছে বরগা করে টাকা নিলাম। উপায় না দেখে এই অবস্থায় বসকে কল করলাম আইপি এপ্লাই করার জন্য কাজের দক্ষতার জন্য বস খুব পছন্দ করে তাই বলা মাত্র আইপি এপ্লাই করলো সম্ভবত ২০১৬ কিন্তু দুঃখের বিষয় আইপি রিজেক্ট আসে যতবার এপ্লাই করে ততবারই রিজেক্ট তখন আইপি রিজেক্ট শব্দটা নতুন তাই কি করে রিজেক্ট কাটিয়ে বস আমাকে ফেরত নিবে তা বুজতে না পেরে আমার আশা ছেড়ে দেয়। পরে আমি আমার এক বন্ধুর মাধ্যমে এক এজেন্টের সাথে চুক্তি করি আমাকে আমার কোম্পানিতে আইপি করে দিতে হবে বসকে আমি বলে দিবো কোম্পানির যা যা করতে হয় কোম্পানি সাহায্য করবে৷ চুক্তি ৩০০০০ ডলার যাই হউক এজেন্ট আমাকে সবকিছু করে আই সাবমিট করে আগের কোম্পানির আইপি বের করে দিলো টাকা নিলো ৪০০০০ তবুও আমি খুশি কারন রিজেক্ট পাসপোর্ট তখন সিঙ্গাপুর যেতে খরচ লাগে ৫/৬ হাজার ডলার আবার কোম্পানি ভালো হয়না। এই ৪০০০ ডলার যোগার করতে আমাকে আমার শখের মটোসাইকেল মায়ের গলার হার, স্ত্রীর সামান্য গহনা বিক্রি করতে হলো কারন ইতিমধ্যে বাবা স্ত্রীর চিকিৎসা বাবদ আমার জমানো টাকা সব শেষ।
যাই হউক সব ছেড়ে আবার ফিরে এলাম সিঙ্গাপুর
আসার কয়েক মাস পরেই বাবা মারা গেলেন শুধু ভিডিও ফোনে এক নজর দেখার সুযোগ হলো, একমাত্র ছেলে হয়েও বাবার কবরে মাটি দেওয়া তার জানাজায় শরীক হওয়ার সৌভাগ্য আমার হলোনা। বাবার মৃত্যুর শোক আমাকে ধীরে ধীরে ইসলামের ধিকে ধাবিত করলো ভালো ভালো লোক যারা পাচ ওয়াক্ত নামাজ পরে তাদের সাথে মিশতে শুরু করলাম সবার কাছে বাবার জন্য দুয়া চাই নিজেও প্রতি নামাজে দুয়া করি। ধীরে ধীরে নিজের জিন্দেগী পোশাক লেবাস সবকিছু সুন্নতের উপর চলার চেস্টা করলাম।
আলহামদুলিল্লাহ তার পর থেকে সফর ব্যাথিত আজ পরজন্ত কোন নামাজ ছুটছে বলে মনে পরেনা।পারমিট শেষ করে ছুটি আসলাম বাড়িতে, বাবা মারা যাওয়ার পর সিঙ্গাপুর আর ভালো লাগেনা তাই ঘন ঘন বাড়ি আসি যার কারনে মোটা অংকের ক্যাশ করতেও পারিনা যে তা দিয়ে দেশে এসে একটা কিছু করবো। এছাড়া বাবা স্ত্রী বাবদ চিকিৎসার কারনে অনেক দেনা + পাসপোর্ট রিজেক্টের দেনা সব দেনা কাটিয়ে সামান্য ক্যাশ হওয়ার পর যখন বাড়ি আসলাম ঠিক তার কয়েক মাস পর সিঙ্গাপুর
ফ্লাইট বন্ধ। আল্লাহ সুবহানাহু ওয়াতাআ'লা ভালো জানেন আবার কবে ফিরবো আর কতদিনইবা এই ভাবে সব ছড়ে প্রবাসে পরে থাকবো। পরিশেষে সবার কাছে পরিবারের সবার জন্য দুয়া চাই বাস্তব জীবনের কিছু কথা শেয়ার করলাম বানান ভুল হলে ক্ষমার দৃষ্টিতে দেখবেন।
No comments