পাগলমন মনরে আমার ❑ সাবরিনা মোয়াজ্জেম ❑ পর্ব_০৬
পাগলমন মনরে আমার
সাবরিনা মোয়াজ্জেম
❑
দোকান থেকে বের হয়ে ফাইয়াজের রাগ হলো। মিতা এমন
ভাবে ফান করবে সে বুঝতেও পারিনি। কেমন মেয়েদের মতো কান্না পাচ্ছিলো! লোকজন না
থাকলে কেঁদেই দিতো ফাইয়াজ। ইজ্জত বলে একটা কথা আছেনা। যাক তবুও এ যাত্রায় নিজেকে
সামলে নেয়া গেলো! সারাক্ষণ মিতার মিষ্টি চেহারাই ভাসছে ফাইয়াজের চোখে! পথ চলতে,
খেতে, ঘুমাতে শুধু মিতা ই ফাইয়াজের মনে। অফিস আদালতে কেবলই মিতা! সকল ভাবনায় মিতা।
ফাইয়াজ আজকাল দেরি করে ঘুম থেকে উঠে ফাইয়াজের মা বলে, বাবা তুই ইদানীং দেরী করে
উঠছিস কেনো? ফাইয়াজ বলে, মা শরীরটা ভালো যাচ্ছেনা। কোনো অসুখ নয়তো বাবা? নাহ মা। এইযা,
এবারও মিতার পারসোনাল নাম্বার ফাইয়াজের আনা হয়নি। আজ যাবোনা শো-রুমে।বেটা গোলাপ
রহমানের ফোনেই সন্ধার পর ফোন দিতে হবে! আর গোলাপ রহমান দাঁত কেলিয়ে বলবে "
স্যার আমি গোলাপ রহমান ডিকেন্স ফ্যাশন হাউস থেকে বলছি!" অথচ মিতার নাম্বার
পেলে প্রথমেই বলতাম, " আই লাইক ইউ মিতা" মিতা গর্বে বলতো, " আমি
জানি" কেমন শক্ত মেয়ে মানুষ! আমি কি কম হ্যান্ডসাম? নিজেকে নিজেই প্রশ্ন করে
ফাইয়াজ! হয়তো মেয়ে মানুষ বলে নিজেকে গুটিয়ে রাখে!
সন্ধার পর ফোন দিলো ফাইয়াজ। হ্যালো, স্যার
আমি.... আর বলতে হবেনা, আপনি গোলাপ... ও স্যার আপনি? তুমিও চিনে গেলে আমায়? কেলানো
হাসি দিয়ে বলে, জ্বি স্যার। এবার বলো, তোমার মেডাম কোথায়? স্যার, মেডামকে দেবো?
(আবার বলা লাগে নাকি? ফালতু কোথাকার? বুঝিসনা বেটা, মনে চাই কানের লতির নিচে চড়
লাগাই) হা দাও! মিতা ধরেই বলে, হ্যালো কে? (মন চাইছে বলি, তোমার স্বামী! তুমি আমায়
জ্বালিয়ে পুড়িয়ে মারছো! রাতের ঘুম হারাম করে দিচ্ছো! আর জিজ্ঞেস করছো কে?) আবার
মিতা বলছে, হ্যালো, ধীরে সুস্থে বলি, আমি ফাইয়াজ! কারণ পাখিকে আমার বশ মানাতেই
হবে! ওহ আপনি? ফাইয়াজ বলে, বলুন? আমার কি কিছু বলার কথা ছিলো, বললো মিতা? ফাইয়াজ
বলে, আবার হেয়ালি হচ্ছে? আহা, আমি তো সত্যি ই বলছি! ফাইয়াজ ফোন রেখে, সোজা মোটর
বাইক নিয়ে নিমিষেই মিতার ওখানে হাজির! গিয়ে দেখে অনেক গ্রাহক। মিতা চেয়ারে বসতে
দিলো। ফাইয়াজ পুর্ণ ধর্য্য নিয়ে বসেই রইলো। এর মাঝে কফি দিতে বললো মিতা। কফিও
খাওয়া শেষ! এবার মিতা হিসেব মিলাবে! কোনো রকম রাফ টেনে ফাইয়াজকে বললো, কোনো কথা
আছে নাকি? নাকি শার্টের জন্যে এসেছেন! ফাইয়াজ আকাশ থেকে পড়লো। আরে শার্টের জন্যে
এলে শার্ট নিয়ে আরও দু ঘন্টা আগেই চলে যেতে পারতাম! তাহলে কারণ কি? আপনাকে নিয়ে
একটু বের হবো? বেশী দূর যেতে পারবোনা! সামনেই একটা রেস্টুরেন্টে যাবো! সেদিন আপনি
খাওয়ালেন আজ আমি খাওয়াবো! ওহ শোধ বোধ! আরে নাহ, এতো কাছে আপনি তাই হুটহাট চলে আসি,
সব সময় ই আসবো বলে মাথা চুল্কাচ্ছে ফাইয়াজ মিতার প্রতিউত্তর জানার জন্য, মিতা বলে
বুঝতে পেরেছি। ফাইয়াজ আবার বলে, জানেন, আমার তেমন কেনো বন্ধু বান্ধব নেই তাই একাকী
ফিল করি, আপনি ই ভরশা আপাতত! (আমার এক গাদা বন্ধু বান্ধব তা তুমি যদি জানতে মিতা!
আপাতত তাদের নাম কফিন বন্দী করেছি। এখন তুমি ছাড়া কিছুই আমার নেই মিতা!) ভাবীকে
সময় দেয়া লাগেনা? আরে ও তেমন কোনো বিষয় না। ও ততো মাইন্ড করেনা! এ নিয়ে ওর মাথা
ব্যথা নেই! মাথা ব্যথা হলে কি মাথা কেটে ফেলতেন? আরে নাহ! তা আপনি বুঝবেন না! দুজন
গিয়ে মুখোমুখি বসলো! বলুন, কি বলবেন? ফাইয়াজ বললো, আমাকে আপনার বন্ধু হিসেবে কেমন
লাগে? অবশ্য ই ভালো। তবে আপনার মধ্যে একটা পাগল পাগল ভাব মানে ছেলেমানুষী ভাব!
দারুন! ধরে ফেললেন? অপুর্ব! এতে এতো এক্সসাইটেড হওয়ার কারণ নেই? বয়স কতো আপনার?
ফাইয়াজ বলে পয়ত্রিশ! তাহলে আপনি পুরুষ! বাচ্চামোপনা বন্ধ করুন! ফাইয়াজ
বললো,"যার হয়না "নয়ে" তার নব্বইতেও হয়না!" আমি এমনি থাকবো,
থাকতে চাই! (অন্তত তোমার জন্যে থাকতে চাই মিতা!)
No comments