পাগলমন মনরে আমার ❑ সাবরিনা মোয়াজ্জেম ❑ পর্ব_০৭
পাগলমন মনরে আমার
সাবরিনা মোয়াজ্জেম
❑
ফাইয়াজ আর মিতা মুখোমুখি বসে আছে। কি খাবেন? নাহ
কিছুই খাবোনা বাসায় গিয়ে রাতের খাবার খেয়ে নেবো। নাহ বসেছি যখন কিছুতো খেতেই হবে!
ডিনার না হয় এখানেই সেরে নেবো! মিতা বলে, নাহ চলুন হালকা কোল্ড ড্রিংস খায়। ফাইয়াজ
বলে, তা হলে চলুন আমি আপনাকে ওয়াইন খাইয়ে নিয়ে আসি বলেই মিতার মাথা দুহাত দিয়ে
টেনে নিজের কপালের সাথে ফাইয়াজ ঠেকালো। মিতা হতভম্ব! এখানে কিছু বলাও যাবেনা কারণ
সবাই ভদ্রলোক। আর ফাইয়াজকে অপমানও করতে পারছেনা। কারণ ফাইয়াজ মিতাকে ভাবতে ভাবতে
কখন যে নিজের অজান্তেই এতো আপন করে নিয়েছে সে নিজেই জানেনা। তাই মিতার মত অমত সে
বুঝতে পারেনা! মনে হয়, মিতা তার শত জনমের চেনা! মিতা শুধু ফাইয়াজের জন্যে ই
জন্মেছে! মিতা আস্তে করে মাথা ছাড়িয়ে আনে। জানে ফাইয়াজের তীব্র আবেগ তবুও ফাইয়াজ
বিবাহিত আর এটা পাবলিক প্লেস! আর মিতা যখন জীবনে কার উপস্থিতি তার জীবনে কামনা
করেনা কাজেই এটা নিছক বাতুলতা মাত্র! ফাইয়াজকে বলে, "কন্ট্রোল ইউরসেল্ফ!"
আমরা টিনএজার নয়। ফাইয়াজ হাসে! তারপর কিছু কথা বিনিময়! মিতা বলে, আমার দোকানের
হিসেব শেষ করতে হবে! তারপর মিতা চলে আসে দোকানে!
এবারও মিতার নাম্বার নেয়া হয়না! যাহ বাবা তাহলে
পুরো একটি রাত আর একটি দিন আমায় মিতা বিহীন কাটাতে হবে? নিজের মেধার উপর ধিক্কার
আসে! কেনো যে মিতা আমায় এতোটা অবুঝ করে দেয়! মিতাবিহীন ফাইয়াজ যে বড় অসহায়!
ফাইয়াজের কাঁদতে ইচ্ছে হলো! নাহ কাঁদবেনা! বেটা গোলাপকে ফোন দিতে হবে! দিলো
গোলাপকে ফোন, তখনো মিতা দোকানে কারণ রাফ হিসেব শেষ করে সে বাসায় যাবে। রাত সাড়ে
দশটা।দোকানের সাটার মেইন রোডের দিক থেকে নামিয়ে বসে হিসেব করছে! ফাইয়াজের ফোন,
হ্যালো আমি গোলাপ রহমান আর বলতে হবেনা! (শালা তুই গোলাপ রহমান, আমি কি তোকে
চিনিনা? বেয়াদব আমার নাম্বারটাও সেভ করেনি! মন চাচ্ছে ওকে দশ তলায় উঠিয়ে আছাড় মারি
নিচের দিকে!) আমি মিতাকে চাচ্ছি মিতাকে দাও! মেডাম এখন ব্যস্ত স্যার! এই বেটা আমায়
চিনতে পারছিসনা, বেটা তুই দে! আমায় হাইকোর্ট দেখাচ্ছিস? গোলাপ মনে মনে ভাবে আমি
একটা ইন্টারমিডিয়েট পাশ ছেলে, আর তিনি আমায় প্রথমে আপনি, তারপর তুমি এখন তুই বলছে,
"জুতার নিচে বারি নেই আর চৌকিদারের নীচে চাকরি নেই! " তারপর তুই এর নীচে
কোনো ভাষা আছে কিনা গোলাপ ভেবে পাচ্ছেনা! বেটার যে ব্যবহার মেডাম যে কতো কড়া যেদিন
চড় থাপ্পড় খাবে সেদিন বুঝতে পারবে! এই বেটা কি ভাবছিস, ফোন দে, স্যার ভাবছি,
"গ্রামের মুরুব্বিরা বলতো, জুতার নিচে বারি নেই আর চৌকিদারের নিচে চাকরি
নেই!" বেশী ওস্তাদ হয়ে গেছিস? স্যার, "ব্যবহারে বংশের পরিচয়!"
আমাদের এখানে বড় বড় অনেক স্যার আসে কিন্তু আপনার মতো কেউ ব্যবহার আমার সাথে করেনি!
আরে তুই আমার নাম্বার সেইভ করিসনি কেনো? স্যার, মিনিমাম সৌজন্যও নাম্বার সেভ রাখি
কিন্তু ম্যাক্সিমাম সৌজন্যেও নাম্বার সেভ রাখিনা কারণ এটা সব আমাদের ব্যক্তিগত
হিসেব। ফাইয়াজ ভাবছে, আসলেই ফাইয়াজের ভুল! তাই, গোলাপকে অনুরোধ করলো মিতাকে ফোন
দিতে! মিতা কিন্তু সব শুনছে আর মনে মনে ভাবছে এটা ফাইয়াজ ছাড়া আর কেউ নই! এতো
উদ্যত আচরণ মিতার শো-রুম খোলার পর কেউ করেনি, আর গোলাপ খুব নম্র ছেলে! সে কখন
উত্তেজিত হতে পারে মিতার জানা নেই। কারণ গোলাপ শুরু থেকেই মিতার সাথে! সবাই
গোলাপের প্রসংশায় পঞ্চমুখ! আশে পাশের সব দোকানের মালিক কর্মির সাথে গোলাপের ভাব!
মিতা ফোন ধরে বললো, আমি কাজে ব্যস্ত। আর আপনার ফোন আমায় ধরতেই হবে এমন কোনো কথা
নয়! আর মানুষের সাথে ভদ্র ভাবে কথা বলতে শিখুন বলেই মিতা ফোন কেটে দিলো! ফাইয়াজ
এখন ঠান্ডা হয়ে স্থির দাঁড়িয়ে রইলো! মনে মনে ভাবে," শালার আম ছালা দুটো ই
হারালাম!"
চলবে...........
No comments