Header Ads

পাগল মন মনরে আমার ❑ সাবরিনা মোয়াজ্জেম ❑ পর্ব_০১


পাগল মন মনরে আমার

সাবরিনা মোয়াজ্জেম

পর্ব_০১

বানিজ্য মেলা থেকে বই মেলা আমায় খুব টানে। বই মেলায় কখনো যাওয়া হয় তবে খুব একটা যাওয়া হয়না। তাই বলে বানিজ্য মেলায় যে যাই তা কিন্তু নয়।

কোন এক বই মেলায় একা যাবো মনস্থির করেছি তাও যাবো দুপুর বারোটায়। ভীড় কম থাকবে আর আরজ আলী মাতুব্বর সহ কিছু লেখকের বই কিনবো। আরজ আলী মাতুব্বরের পুরো সেট ছিলো কিন্তু একজনকে গিফট করে দিয়েছি তাই আবার সংগ্রহে রাখা।

আমি গিয়ে পৌঁছালাম ঠিক দুটো। মানুষের ভীড় কম। ধীরে ধীরে হাঁটছি আর দেখছি। দেখতে দেখতে বেলা চারটা বেজে গেলো। আমি কিছু বই কিনে রওয়ানা দিলাম। হেঁটে হেঁটে এসে দেখি গাড়ির জ্যাম। একটা সিএনজিও নেই যে যাবে কিনা জিজ্ঞেস করবো। দুটো পেলাম কিন্তু হাজার টাকা দিলেও তারা ওই রোডে যাবেনা। তোরা বাবা তোদের পছন্দ মতো যা। আমি হেঁটে এগিয়ে আসছি কারণ শাহবাগের মোড়ে ক্যান্টমেন্টের অনেক বাস পাওয়া যায়! বিশেষ করে এসি বাস পেলে তো কথাই নেই! কারণ লোকালে চড়তে পারিনা আবার উঠতেও পারিনা, নামতেও পারিনা। অনেকটা "বন্ধু তুই লোকাল বাস, আদর কইরা টাইনা তোলস ঘাড় ধইরা নামাস." এই ঘাড় ধইরা নামানোর জন্যে উঠিনা! হা শাহবাগে একটা এসি বাস পেলাম। উঠে বসলাম, যাত্রী খুব কম। আমার পাশের সিট খালি। হুড়মুড় করে এক পালোয়ান নওজোয়ান এসে এতো সিট থাকতে আমার সিটেই বসলো! যাক বাবা তবুও বাঁচা গেলো দেখতে শুনতে ভালো!

একবার তাকালো আমি অন্যমনষ্ক হয়ে আছি এমন ভাব। এর মাঝে দশ মিনিট কেটে গেলো, লোকজন উঠেওনা নামেওনা গাড়িও ছাড়েনা। বোরিং। এই ভদ্রলোক বলে, অস্থির হবেন না মেডাম এই বাস ছাড়তে বহু দেরি! কি করে জানলেন। এটা মেরামত করা হচ্ছে! তারপর হালকা কথা। বিশেষ বাহিনীর কমকর্তা। আর আমি জলবৎ তরলং! বুঝিনি মেডাম। আরে ভাই, বার্বুচি! তা কোন হোটেলের? হোম মেকার! হাসলো!

এই বুঝি কাজ? এটাকে কাজ বলে? ঘরের কাজ করে দেখেছেন কভু? এগুলো কোনো কাজ না। মিশনে ছিলাম যখন তখন কতো কাজ একা একা করেছি! দিলো মনটা খারাপ করে! মন খারাপ কেনো? সব শোনার জন্যে আমার পাশে বসেছেন? নাহ, তবে এতো সিট খালি থাকতেও কেনো বসেছি তা জানিনা! সঙ্গ পেতে এবং ভালো সঙ্গ! আর আপনার মতো হলে তো কথাই নেই! চাপাবাজী সব! বিশ্বাস করুন চাপাবাজী নয়! ভালো লাগছেনা। ঘুমিয়ে পড়ুন। আর এই ফাকে আমার সব কিছু নিয়ে যান! মলম পাটি নয়তো? বলেন কি চেক করুন! বুঝতে পেরেছি বেশ কথা জানে! এমন করে নানান কথা চলছে।

হঠাৎ শত শত গাড়ির আওয়াজের মাঝে একটা সুর কানে আসছে! কিন্তু ধরতে পারছিনা! কান ফেলে শুনে যাচ্ছি! ওহ হারমোনিয়ামের সাথে কি মধুর বাঁশির সুর! আমি বলি, এই গাড়ি ঠিক হতে কতো সময় লাগবে? মেডাম, আমি কি গাড়ির ইঞ্জিনিয়ার? লাগুক সময় আমার তো ভালোই লাগছে! মনে মনে বলি, অসাধারণ! আচ্ছা শুনুন, আমার সাথে একটু নীচে নামবেন? কেনো বলুনতো? না হলে একটু শুনে আসুন কখন গাড়ি ছাড়বে? কেনো বলুনতো? নাহ, এমনই। আপনার খুব তাড়া? নাহ, কি করে বলি ওই সুর আমায় টানছে! একটু পর বলেই ফেলি, আপনি যাবেন আমার সাথে? কোথায়? আসুননা প্লিজ! ব্যস্ত থাকলে থাক। নাহ চলুন, আজ আমার কোনো কাজ নেই, বউ গাড়ি নিয়ে বেড়িয়েছে আর আমি বাসে বন্ধুর কাছে গিয়েছিলাম! বাসায় রাত বারটা গেলেও ক্ষতি নেই! বাস থেকে নেমে সোজা সুর ফলো করতে করতে অবশেষে পেয়ে গেলাম কাংখিত স্থান! কিযে গানের মজমা! গজল, কাওয়ালী, হিন্দি বাংলা। সব বাংলা বাদ্যযন্ত্র সাথে গাইছে সাথে একটি মেয়েও আছে। তাদের কাজ শুধু রাস্তায় গান করা! প্রচুর টাকা না পেলেও তারা মানুষকে মুল শান্তি দিতে জানে! কোনো এক সময় গুলিস্তান বা সিনেমায় দেখেছি এসব। আর আমি চিরদিনের গান পাগল মানুষ। মন আমার মন বাউলের নাও! শুনতে শুনতে কখন যে রাত দশটা বেজে গেলো জানিনা। আবার গান শোনার ফাঁকে ফাঁকে ভদ্রলোকের সাথে কথাও বলছি। মেডাম রাত দশটা! চলুন চলুন.... গান শুনলে কিছু দিতে হয়! তাই কিছু দিলাম!

এবার গাড়ি পাই কোথায়? আচ্ছা আপনি যে এই চাকরি করেন তার আইডি আছে? নিশ্চয়ই আছে? দেখি? তিনি মুচকি হাসছে আর বের করে দেখালো! আমি মোবাইলে ছবি নিয়ে রাখলাম! মেডাম, এবার যে আপনার ছবি আমার দরকার? বলেন কি? আমারও নিরাপত্তার ব্যাপার আছে বৈকি?

আমি বলি, দেখুন আমি মেয়ে মানুষ! অবলা, অসহায়, আর বেকার। স্বামী তাড়িয়ে দিলে যাবো কোথায়? বাদ দিন। চলুন সিএনজি পাওয়া যায় কিনা দেখি? নাহ পাওয়া গেলোনা! চলুন হেঁটে ফার্মগেট অব্ধি যায়!

তার মাঝে গাড়ি পেলে উঠে যাবো! আমার হাঁটার অভ্যাস আছে! নাহ, বেশী দূর হাঁটতে হলোনা। এর মাঝে সিএনজি পেয়ে যায়। পেয়ে সোজা বাসার কাছে নামিয়ে তিনি চলে যাবেন আমি বলি ভাড়া নেবেন না? নাহ থাক অন্যদিন দিবেন আজ মোবাইল নাম্বার দিলেই হবে! মোবাইল নাম্বার দিয়ে বিদায় দিলাম!

চলবে...........

No comments

Powered by Blogger.