অবন্তিকা ❑ উপন্যাস ❑ কিশোর পণ্ডিত ❑ পর্ব ১২ (শেষ_ পর্ব)
উপন্যাস
অবন্তিকা
কিশোর
পণ্ডিত
পর্ব_১২ (শেষ_
পর্ব)
পন্ডিত মশাইয়ের অবন্তিকা উপন্যাস কেনার ধুম পড়ে গেল । যে একবার পড়ল সে আবার আরেক জনের সাথে গল্প করল । বইটি খুব সাড়া জাগাল । দেশের সবার কাছে জনপ্রিয় হয়ে উঠল । অনেকেই শৈব প্রকাশনায় ফোন করে জানতে চাইল লেখকের আসল পরিচয় । শৈব প্রকাশনী অবন্তিকা ছাপতেই থাকল। রেকর্ড সংখ্যক বই ছাপাল তারা । এবারের বই মেলায় অবন্তিকা উপন্যাসটিই শ্রেষ্ঠ হল । শৈব প্রকাশনীর প্রকাশক ঠিক করলেন পন্ডিত মশাইকে পুরস্কার দিতে । এ খবর প্রকাশ বাবুরা শুনলেন । তিনি প্রকাশককে পার্থের করুণ মৃত্যুর কথা জানালেন । পরে ঠিক হলাে মরণােত্তর পুরস্কার দেওয়া হবে । এ পুরস্কার গ্রহণ করবে পার্থের বিধবা স্ত্রী অবন্তিকা । প্রকাশ বাবু পুরস্কারের টাকা বাড়িয়ে দেওয়ার জন্য অনুরােধ করলেন । তিনি ঠিক করলেন এ পুরস্কারে কিছু টাকা দিয়ে যদি কিছু ঋন শােধ করা যায় । তাই তার অনুরােধে পুরস্কারের টাকা দুই লক্ষ থেকে ১০ লক্ষ টাকায় স্থির করা হয় । ৮ লক্ষ টাকা প্রকাশ বাবু দিবেন । বাংলা একাডেমীর মহাপরিচালক শরতের কোন একদিনে এ পুরস্কার প্রদান করবেন ।
বসন্ত পেরিয়ে ক্রমান্বয়ে ঋতু পেরিয়ে যেতে লাগল । অবন্তিকা শুধু পার্থের আশায় বসে থাকল । তার কেবলি পার্থের পরশ পেতে ইচ্ছে হল । অবন্তিকার শুধুই মনে হলো কোথায় গেলে যেন পার্থকে পাওয়া যাবে । তাই সে যে সমস্ত জায়গায় তাকে নিয়ে ঘুরে বেড়াত সেই সকল জায়গায় অবন্তি তাকে খুঁজে বেড়ায় । তুলসী গঙ্গার পূর্ব পাড়ে তাল তলায় । আবার কখনাে রেল লাইনের ছােট ব্রীজটায় । আবার কখনাে পাড়ঘাটীর বড় বটগাছটার তলায় । কিছুই ভাল লাগে না তার । ঋতু চক্রে বর্ষা এল । তুলসী গঙ্গা ফুলে উঠলাে । দু তীর ভেসে গেল । অবন্তিকা শুধু তুলসী গঙ্গার দুপাড়ে ঘুরে বেড়ায় । তার বুক শুণ্য যেন শুধু হাহাকার । ইহকালে পার্থকে আর পাওয়া যাবে না সে বুঝল । তাই পরকালে পাবার জন্য মরিয়া হয়ে গেল । ভরা বর্ষায় যৌবনা তুলসী গঙ্গায় কোন এক রাতে ঝাপ দিল সে পরকালে যাবে বলে ।
প্রীতিলতা আর যুথিকা দুইজন নদীর দুইপাড়ে হাঁটতে থাকে তাদের সন্তানদের খুঁজতে । এগাঁও থেকে ওগাঁয়ে সে গাঁও থেকে ভিন গাঁয়ে । তারা আর বাড়ী ফিরে না । বর্ষা পেরিয়ে শরৎ এল । পুরস্কারের দিন ঘনিয়ে আসল । অবন্তিকা রায় চৌধুরী দেবাশীষকে পাঠিয়েছিল অবন্তিকাদের আনতে । অনুষ্ঠানের আগের দিন দেবাশীষ আসল শুন্য হাতে । সবই বলল সে । শেষে পার্থের পক্ষে পুরস্কার গ্রহণ করল অবন্তিকা রায় চৌধুরী । এ পুরস্কারের টাকা দিয়ে গঠন করা হল একটি ফাউন্ডেশন । নাম দেওয়া হল পার্থের বউয়ের নামে "অবন্তিকা রায় ফাউন্ডেশন "। এই ফাউন্ডেশন থেকে প্রতি বছর দুইটি বিষয়ে পুরস্কার দিতে লাগল । বিষয় দুটি হল এক অবহেলিত নাম না জানা মুক্তিযােদ্ধাদের এবং তাদের পরিবার আর সাহিত্যে । অবন্তিকা রায় চৌধুরী আশায় খুঁজে বেড়ায় "অবন্তিকা রায় ফাউন্ডেশনের "দুইজন স্বত্ত্বাধিকারিনীদের। খুঁজে জায়গায় জায়গায় । জিজ্ঞাসা করে লােকজনদের । কেউ দেখেছে কি না তাদের ।কেউ বলে তাদের দেখা গিয়েছে প্রসাদপুরে ,কেউ বলে মহাদেবপুরে, কেউ একজন তাকে বলেছিল তাদের শেষ দেখা যায় তীলকপুর রেল স্টেশনে । অবন্তিকা রায় চৌধুরী বছর বছর বিহারপুর থেকে তীলকপুর ঘুরে বেড়ায় দুই বিধবার আশায় ।
(সমাপ্ত)
No comments