Header Ads

অবন্তিকা ❑ উপন্যাস ❑ কিশোর পণ্ডিত ❑ পর্ব ১০



উপন্যাস

ন্তিকা

কিশোর পণ্ডিত

পর্ব_

অবন্তি বেড়াতে গিয়েছে ফেব্রুয়ারির বইমেলায় সুন্দর সুন্দর বই বেরিয়েছে এবারের মেলায় অবন্তির বরাবরই অন্য সব বইয়ের চেয়ে উপন্যাসই বেশী পছন্দ তাই আজও সে মেলায় এসে ভাল উপন্যাসের বই খুজছে সে শুনে ছিল শৈৰ প্রকাশনায় "নতুন লেখকের ভাল উপন্যাসের বই বেরিয়েছে অবন্তি তাই শৈৰ প্রকাশনার স্টলে বিভিন্ন লেখকদের বই দেখছিল হঠাৎ তার চোখ থেমে গেল একটি উপন্যাসের বইয়ের উপর বইয়ের নাম অবন্তিকা " লেখক পন্ডিত মশাই অবন্তি জানতে পারল অবিন্তকা উপন্যাসের লেখকের লেখক পন্ডিত মশাই এটা তার ছদ্ম নাম তার নামে উপন্যাসের এই নাম কে লিখেছে কি তার আসল নাম তার আসল নামটা জানতে অবন্তির কৌতুহল জাগে শৈব প্রকাশনীর প্রকাশক শৈব চৌধুরী তার কাছে বার বার অনুরােধ করার পর তিনি বিশেষ শর্তে পন্ডিত মশায়ের আসল নাম বলেন নাম শুনে অবন্তি খুশীই হল কি লিখেছে সে তাকে নিয়ে জানতে ভীষণ আগ্রহ জাগে অবন্তির বইটি কিনে নিয়ে খুব দ্রুত বাসায় চলে যায় সে

প্রকাশ বাবুর ইচ্ছে ছিল পার্থকে রেখে দেবেন আপন করে ইচ্ছে থাকলেও সাহস ছিল না অবন্তির মা গড়রাজী ছিলেন তাছাড়া সুকমলের সাথে অবন্তির বিয়ে এক রকম ঠিকই ছিল তা হলে কি হবে প্রকাশ চৌধুরীর সুকমলকে আগে থেকেই পছন্দ ছিল না তিনি মনে মনে পার্থকে কল্পনা করেছিলেন যা চেয়েছিলেন তা তাে আর হয়নি তাই তিনি এহেন অবস্থায় তার স্ত্রীকে বর্তমান অবস্থার কথা বিস্তারিত বুঝালেন সুকমলের সাথে অবন্তির বিয়ে হল না , অবন্তির মনের অবস্থা ইত্যাদি তাছাড়া অবন্তির বয়সও হয়েছে এখন তাকে বিয়ে দেওয়া উচিত সব শুনে অবন্তির মা বুঝলেন এবং মেয়েকে পাত্রস্থ করার চিন্তা ভাবনা করলেন কিন্তু কোথায় কার কাছে কণ্যা দান করা যায় তা ভেবে কিনারা করতে পারলেন না তখন প্রকাশ বাবু তার মনের ইচ্ছেটা তার কাছে ব্যক্ত করলেন বললেন পার্থ আর অবন্তিকে যদি এক করে দেওয়া যায় তাহলে ঘরের মেয়ে ঘরেই থাকতে পারবে পার্থ তাদের জামাই হয়ে বাড়ীতেই থাকবে সব শুনে কেয়া চৌধুরী রাজী হয়ে গেলেন এবং এই শুভ কাজটা অতি শীঘ্রই ঘটাতে ব্যাকুল হয়ে পড়লেন তাই দু'জনে মিলে ঠিক করলেন তারা বিহারপুরে যাবে পার্থের উদ্দেশ্য পার্থের মাকে হাতে পায়ে ধরে রাজী করাবেন যেভাবেই হোক পার্থকে তাদের চাই।

মধ্যরাতে এসে অবন্তি বই পড়া বন্ধ করে দিল উপন্যাসের প্রায় অর্ধেক পাতা পড়া হয়ে গেছে তার টুকু পড়ে তার মন নির্বিকার হয়ে গেল ক্রোধে চোখ দুটো অগ্নিস্ফুলিঙ্গ যেন লেখক পার্থের উপর তার ভীষণ রাগ হল একি লিখেছে সে মনে মনে ভাবে এবং পরে বইয়ের পৃষ্ঠা খুলে আবার দেখে সে লিখেছে অবন্তি তাকে এমন ভাল বেসেছে যে সে তাকে ছাড়া কিছুই বুঝে না তাকে ছাড়া বাঁচবে না সে লিখেছে অবন্তি মরা গাছে ফুল ফুটাতে চেয়েছে পার্থের হৃদয় মন কোনটাই সচল ছিল না সে ছিল মৃত প্রায় সে কখনােই অবন্তিকে ভালবাসে নাই , তার ভাঙ্গা হৃদয় জোড়া লাগাতে চায় নাই অবন্তি শুধু তাকে এক তরফা ভালবেসে গেছে সে কখনাে অবন্তিকে ভালবাসে নাই এমন মিথ্যা কথা লিখেছে পার্থ , এমন মিথ্যুক সে অবন্তি ভাবে তার কথাও মনে আছে যে পার্থ মনে মনে কি চাইত বুঝত সে কিন্তু সে তাকে এড়িয়ে গেছে কারন সে ভালবাসত সুকমলকে তাই তাে সে সুকমলের সাথে তাকে পরিচয় করেও দিয়েছিল তবে কেন পার্থ এমন ছলচাতুরী করল কেন সে এমন চাতুরীর আশ্রয় নিয়েছে তবে কি সে ঠকে গিয়ে প্রতিশােধ নিল এমন প্রতিশােধ মিথ্যার আশ্রয় নিয়ে আমি তাে শুধু সুকমলকেই ভালবেসেছি আমার ভালবাসায় তাে খাদ নেই কোন দোষ নেই আমার ভালবাসায় তবে কেন পার্থ আমার চরিত্রে কলঙ্ক লেপন করল ভন্ড সে, প্রতারক সে ,মিথুক সে অবন্তি মনে মনে পার্থকে তিরস্কার করল আর ভাবল যদি কোন দিন তার সাথে দেখা হয় মিথ্যার জবাব দিবে সে তার এমন চরিত্র এত তার অধঃপতন ছিঃ অমন মানুষের সাথে দেখা হওয়াটাই পাপ হয়েছে তার মনে মনে চিন্তা করে অবন্তি আবার ভাবে তার সাথে দেখা করা যায় না যাওয়া যায় না বিহারপুরে সামনা সামনি দেখা করে মিথ্যার জবাব দিয়ে প্রয়ােজনে কষে থাপ্পর মারব তার গালে তীব্র ক্ষোভে আর প্রচন্ড অভিমান ক্রোধে বই ছােড়ে ফেলে ঘুমিয়ে পড়ে সে

পরদিন সকাল বেলা তার বাবাকে বলে , বাবা আমি বিহারপুরে যাব আমি তুমি আর মা মিলে গিয়ে ঘুরে আসি শুনে প্রকাশ চৌধুরী খুশী হলেন মনে মনে ভাবলেন এই চেয়েছিলেন তিনি বিধাতা বুঝি তার মনের কথা শুনেছেন তাই তারা তিনজনে মিলে ঠিক করলেন বিহারপুর যাবেন সবশুনে দেবাশীষ বায়না ধরল সেও যাবে তাদের সাথে শেষে দেবাশীষের বায়না রাখতে গিয়ে তাকেও নেওয়া হল তাদের সাথে প্রকাশ বাবু মনে মনে ভাবলেন যদি পার্থর মা রাজী হয়ে যান তবে তাকে যাত্রায়ই আশীর্বাদ করে আসবেন তাই তিনি পার্থকে আশীর্বাদ করার জন্য স্বর্ণের গলার চেইন এবং মার্কেট থেকে পার্থের জন্য দামী প্যান্ট - শার্ট পার্থের মায়ের জন্য শাড়ী এবং আরও অন্যান্য বাজার করলেন পরদিনই তারা বিহারপুরের দিকে রওনা দিবেন

সকাল হল সূর্য উঠল প্রকাশ বাবুর বাড়ীর তাকে সহ অন্য তিনজন স্নান আহারাদি শেষ করে সেজে গুছে গাড়ীতে ওঠল ঢাকা থেকে গাড়ী বিহারপুরের দিকে ছুটল দুপুর বেলা তারা যমুনার উপর নির্মিত সেতুতে আসল ৯৮ এর শেষের দিক এবছরই সেতু উদ্বোধন করা হয়েছে বাংলাদেশের দীর্ঘতম সড়ক সেতু তারা সবাই মাঝখানে গাড়ী দাড় করে বেরিয়ে দেখে নিল ব্রীজের উপর কিনারা ঘেঁষে রেল লাইন তাদের কাছে একটু কেমন জানি অসুন্দর মনে হল সেতু পার হয়ে ওপারে গিয়ে তারা কিছু খেয়ে নিল বিহারপুরে পৌঁছাতে তাদের বিকেল হয়ে গেল সূর্যের লাল আলােয় আর শিমুল ফুলের বাহারিতে বিকেলটা যেন সুন্দর সেজেছে কি সুন্দর লাগছে বাংলাকে তাদের গাড়ী যখন তুলসী গঙ্গা নদীর সেতুর পূর্ব পাড়ে এল তখন সবাই তুলসী গঙ্গার ওপাড়ে পাড়ঘাটীতে শ্মশানের দিকে তাকিয়ে দেখল কার যেন চিতা জ্বলছে ধাও ধাও করে আগুন জ্বলছে। কার যেন শব দাহ হচ্ছে তাদের গাড়ী সেতুর পশ্চিম পাড়ে এসে দাঁড়াল তারা গন্তব্যে এসে গেছে তাই কৌতুহল বসত জানতে চাইল কার শব দাহ হচ্ছে গাড়ী থেকে নেমে এক লােকের কাছে গেল সেও লাকড়ি কাঁধে নিয়ে শ্মশান বন্ধু সেজে শ্মশানে যাচ্ছে তার অনেক তাড়া পিছনে পড়েছে বলে সে জোর কদমে হাঁটছে দেবাশীষ তাকে পেছন থেকে ফেরাল প্রকাশ বাবু জিজ্ঞাসা করলেন , কার লাশ পােড়ানাে হচ্ছে চিতায় ? কে মরেছে ? সাথে অবন্তি তার মা লােকটি বিমর্ষ বদনে ভারাক্রান্ত গলায় খুব কষ্টে বললেন ,আমাদের পার্থ সবাইকে কাঁদিয়ে গাঁও ছেড়ে চলে গেল কোন গাঁয়ে যে গেল তা বলে গেল না বলেই লোকটা হাওমাও করে কেঁদে উঠলেন পার্থ ! কোন পার্থ ?জিজ্ঞাসিলেন ,কার ছেলে পার্থ ? লােকটি কেঁদে ফুঁপিয়ে ফুঁপিয়ে বললেন স্বাধীনতা যুদ্ধে ওর বাবা মারা গেছে ওর বাবা একজন মুক্তিযােদ্ধা ছিল ওর বাবার নাম ছিল বীরেশ্বর মায়ের নাম যুথিকা

ঢাকা থেকে আগত মানুষ চারজন বুঝতে পারল তারা যে পার্থের খোঁজে এসেছে শ্মশানে সেই পার্থ সে মরেছে তার লাশ এখন জ্বলছে প্রকাশ বাবু বুঝতে পারলেন যে , যাকে সে মেয়ের জামাই করবে বলে ভেবেছে সেই পার্থই আজ পালিয়েছে বহুদূরে পালিয়েছে তাকে আর ধরবার শক্তি কারও নাই শক্তিমানের কাজ শক্তিমান করেছে কারও কিছু বলার সাধ্য নাই তিনি মহাশক্তিমান মহাপরাক্রমশালী তার কাজে বাঁধা দেয় এমন শক্তি কার উপর দিকে মাথা তুলে প্রকাশ বাবু ভাবলেন ইহা কেমন মঙ্গলের কাজ নিজেকে প্রবােধ দিতে পারলেন না নীরবে কেঁদে গেলেন কেয়া চৌধুরী তার সঙ্গীনী হলেন দেবাশীষ তাদের সান্ত্বনা দিল দেবাশীষ দেখল অবন্তি কাঁদছে না সে মনে মনে কি জানি চিন্তা করছে দেবাশীষ ঠিকই ভেবেছিল অবন্তি মনে মনে চিন্তা করল বেচারার জন্য দুঃখ হয় মরে বেঁচে গেল আমার শােধ নেওয়া হল না

প্রকাশ বাবু দেখলেন সূর্য ডুবে গেছে চিতার আগুন নিভে গেছে তখন সবাই মিলে মাটির কলসী দিয়ে তুলসী গঙ্গার জল দিয়ে চিতা ঠান্ডা করছে চিতা ঠান্ডা করা শ্মশানবাসীরা সবাই যার যার বাড়ীতে ফিরে গেল মিঃ চৌধুরী ঠিক করতে পারছিলেন না এখন কি করবেন মুখ আর যুথিকা দেবীকে দেখাতে চাননা তার সামনে গিয়ে কি বলবেন তিনি ঢাকায় ফিরে যাবেন আবার ভাবলেন তা কি করে হয় এখানে এসে দিদির সাথে দেখা করে যাবো না এমন দুঃখে দিদির সঙ্গী হবো না তা কি করে হয় তাই তিনি পার্থদের বাড়ীর দিকে রওয়ানা দিলেন অবন্তির তেমন ইচ্ছে ছিল না পার্থদের বাড়ী যাবার তার বাবা মা যাবেন তাই সে তাদের সঙ্গী হল যখন তারা পার্থদের উঠোনে পা রাখল তখন অসময়ে অল্প অল্প বৃষ্টি নামল

ছােট্ট উঠোন একখানা মাটির ঘর বল নেই তাতে ছনের ছাউনির একটু বারান্দা দুই দিক দিয়ে নিরস দুর্বল বাঁশের খুঁটি দিয়ে ঠেলে সােজা করে রাখা হয়েছে ঘরটিকে নইলে এখনি যেন আছাড় খেয়ে পড়ে যায় বারান্দার চালের ছাউনি দিয়ে বৃষ্টির ফোঁটা ঝরছে কেরােসিনের মাটির প্রদীপ মিটি মিটি জ্বলছে তারই আলােয় বারান্দায় দেখা গেল দুইজন বিধবার মাঝখানে নিথর পাথরের মত অচলা পাহাড়ের মত বধির একেবারে নিশ্চুপ এক অল্প বয়স্কা বধুকে ক্ষীণ আলো হলেও স্পষ্ট বােঝা যাচ্ছে কিছুক্ষণ আগে কে যেন তার সিঁথির সিঁদুর মুছে নিয়ে গেছে সিঁদুরের অস্পষ্ট দাগ তার কপালে রয়েছে কোন সর্বনাশা এই সর্বনাশে কাজ করেছে শত ধিক তারে প্রকাশ বাবু অস্পষ্ট বুঝলেন দুই বিধবার মাঝে একজন যুথিকা দেবী শেষে বুঝলেন বধুকে বিধবা করা হচ্ছে কিছুক্ষণ আগে সিঁদুর মুছে নেওয়া হয়েছে এখন হাতের শাখা ভাঙ্গা হচ্ছে কিছুক্ষণের মধ্যেই হিন্দুর সর্বনেশে শাস্ত্র মতে তাকে বিধবা করা হল কিন্তু কে এই নারী ?একটি প্রশ্ন বার বার তার মাথায় ঘুরপাক খেতে লাগল প্রকাশ বাবু আস্তে আস্তে যুথিকা দেবীর সামনে গিয়ে দাঁড়ালেন কান্না জড়িত কণ্ঠে বললেন দিদি আমি প্রকাশ ঢাকা থেকে এসেছি যুথিকা দেবী মুখ তুলে তার দিকে তাকালেন বহু দিনের আগের কথা মনে পড়ল তিনি প্রকাশ বাবুকে চিনতে পারলেন তাকে জড়িয়ে ধরে কাঁদতে লাগলেন ভাই প্রকাশ এখন এসেছ আমার যে সর্বনাশ হয়ে গেল বলে কাঁদতেই থাকলেন কেয়া চৌধুরী এগিয়ে গেলেন যুথিকা দেবীকে আদর করে তার মাথা কেয়া চৌধুরী বুকে জড়িয়ে রেখে মিথ্যে সান্ত্বনা দিলেন যুথিকা দেবী কেয়া চৌধুরীর বুক থেকে মাথা তুলে প্রকাশ বাবুর হাত ধরে টেনে নিয়ে গেলেন সদ্যবিধবা মেয়েটির কাছে বললেন দেখ প্রকাশ দেখ ভগবান আমার কি সর্বনাশ করেছে আমার পুত্রবধু পার্থের স্ত্রী বড় সাধ করে বিয়ে দিয়েছিলাম পার্থর। বড় আনন্দেই ছিলাম আমরা ভগবানের সে সুখ সইল না অবন্তিকাকে বিধবা করতেই হল তাঁর

অবন্তিকা নামটি শুনে চমকে গেল অবন্তি তাহলে পার্থের বউয়ের নামও অবন্তিকা তার মহাভুল ভাবনার মৃত্যু ঘটল সে বুঝতে পারল সত্যটা পার্থ তাহলে তার কথা লেখেনি সে মিথ্যে বলেনি প্রতারক নয় সে সে চিরসত্যই লিখেছিল দূর দিগন্তে চেয়ে থাকে সে পৃথিবীর সমস্ত মায়াভরা চোখ দিয়ে তাকায় মেয়েটির দিকে তখন মেয়েটির চোখ শুকিয়ে গেছে চোখে যেন আর জল নেই কাঁদতে পারে না সে অবন্তির দু'চোখ ভরে কান্না আসে কিন্তু কার জন্যে কাঁদবে সে সর্বনাশা পার্থের জন্য, না চিরদুঃখী অবন্তিকার জন্য, বুঝতে পারে না সে এগিয়ে যায় বিহারপুরের অবন্তিকার দিকে তাকে জড়িয়ে ধরে মহাকান্নায় কাঁদতে থাকে দুই অবন্তি এবার শুকিয়ে যাওয়া চোখের জল আর বাঁধ মানল না দুচোখ ভরে গড়িয়ে ঝরতে লাগল অবন্তিকার চোখের জল অবন্তিকায় অবন্তিকায় কান্নার শব্দ দ্বিগুণ হল কাঁদতে কাঁদতে অবন্তিকা বলল দিদি সেই এলেন আর কয়েকটা দিন আগে এলেন না কেন তা হলে হয়তাে সর্বনাশটা ঠেকানাে যেত বলেই অবন্তিকা আবার অবন্তিকে ধরে কাঁদতে লাগল অবন্তির কেবলি মনে হল সে যেন অবন্তিকার কাছে আগে থেকেই চেনা

ওরা কাঁদছে বাড়ির সবাই কাঁদছে যেন বিহারপুরের সবাই কাঁদছে কান্নার লােনা জল তুলসী গঙ্গার মিঠা জলে গিয়ে মিশে নদীর জল যেন দ্বিগুন হয়ে গেল তুলসী গঙ্গা বইতে লাগল দুঃখী আর দুঃখীনীদের চোখের জলে ভাঙ্গা ঘরের এক কোণায় বসে সারাটা রাত কাটল সবার

আবার সকাল হল পাখীরা ডাকল নদীর জল বইল সূর্যের পূর্ব দিকে উদয় হল সব নিয়ম কানুন ঠিক রইল কোনটার পরিবর্তন হল না শুধু গতকাল যাদের সর্বনাশ হয়েছে তাদের পরিবর্তন হল অবন্তিকার পরিবর্তন হল সধবা নারী বিধবা হল হাতের শাখা ভাঙ্গা হল সকল অলংকার হরণ করা হল উঁচু গলা নীচ হল পায়ের হাঁটাটাও বদলে গেল অবন্তিকারা শাস্ত্রের বিধান আর দুশমন নিয়তিকে মেনে নিয়ে পরের দিন থেকে শাস্ত্রীয় কাজ করতে আরম্ভ করল প্রকাশ বাবুদের ভাগ্যের ডাক আসল তাদের ঢাকার ডাক আসল নিজ গন্তব্যে ফেরার সময় হলাে প্রকাশ বাবু কি করবেন কিছু ভেবে পাচ্ছিলেন না তিনি ঢাকা থেকে আনা একটি শাড়ী কাউকে দিবার সাহস করলেন না আবার কিনে এনে দিতে হয় তিনটি বিধবার শাড়ী এতে তার মন সায় দিল না শেষে তিনি স্থানীয় রাধা গােবিন্দ মন্দিরে কৃষ্ণের গলায় পার্থের জন্য চেইনটা পরিয়ে দিলেন সবাই দেখলেন রাধা রানীর গলা শূন্য রইল পরে মধ্য দুপুরে আরেকবার কেঁদে তারা ঢাকার দিকে ছুটল অবন্তি গাড়ীর জানালা দিয়ে মধ্য দুপুরে বসন্তকে আরেকবার দেখল রাস্তার পাশের আর দূর গ্রামের শিমুল ফুলের রক্তিম রঙে যেন বাংলা রক্তাক্ত হয়েছে যেন বসন্তের যৌবন বসন্তের ভরা যৌবনে আর নীরব শান্ত দুপুরে পার্থের কথা বার বার মনে পড়ল তার কেবলই মনে হল শিমুল গাছের শাখা থেকে একটি কাঁচা শিমুল যেন ঝরে পড়ল

চলবে......


No comments

Powered by Blogger.