রং এর মৃত্যু _ মোসাঃ জান্নাতুল মাওয়া
বাজান ও বাজান আজ বড়ো একা লাগছে গো বাজান, মনে হচ্ছে, বকুটা ভারী হয়ে আসছে।( মিলি)মা রে! তোর বয়স যখন দু'বছর তখন তোর মা আমাদের ছেড়ে চলে গেছে,সে থেকেই আমি তোর মা-বাবা দুটোই ।দেখতে , দেখতে তোর বয়সটাও কম হলো না রে মা!তোর বিয়েটা দেখে যেতে পারলে শান্তিতে মরতে পারতাম।(মিলিরবাবা) কিন্তু বাজান, এই কষ্টের সংসারে আমাকে তো অনেক লিখা পড়া করালে, একটা ভালো পাত্রের আশে, কিন্তু কই গো বাজান? আমি কালো বলে সবাই আমারে উপহাস করে কয়, ময়দা সুন্দরী,কেউ আবার কয় আটা সুন্দরী। আমার বান্ধবীরা খুব সাজুগুজু করে বাজান, আর আমি,আমি যখন একটু ঠোঁটটা রাঙ্গিয়ে কলেজে যাই সবাই আমাকে দেখে মুখ ভেংচাই, বলে কালোদের নাকি সাজতে নেই।সবাই বলে, আমি গরীব ঘরের ম্যাইয়া এতো পড়ে কী হইব?কত কথা শুনাই গো বাজান! অথচ তারা কোন সমন্ধো ও আনতে পারে না।তোমার এতো চিন্তার কাম নেই বাজান।আমি কালো বলে বিয়ে যদি না হয় তো আর কী!একটা চাকুরী পেলে হয়ত কোন সমন্ধো আসবে ( মিলি)।মিলি এম এ পাশ করল।একটা এনজিওতে কাজও করছে, কিন্তু কালো উপরন্ত বয়স ও বেড়েছে বলে সে আলো তার কালো ঘুচাতে পারল না।পাত্রপক্ষ ঘটা করে দেখে, খেয়ে- দেয়ে চলে যায় পরে খবর দেবে বলে, কিন্তু না, কোন খবর দেয় না।আর দশটা মেয়ের মতো মিলিরও কত ফাগুণ এসে চলে গলো কিন্তু কেউ ফুল ফুটাতে পারলো না, প্রেমের বাঁশি কত বাজালো কিন্ত সুর উঠল না কারণ একটাই মিলির গায়ের রং কালো।কেউ বুঝতে চেষ্টা করল না যে,এ কালো তার নিজের সৃষ্টি না,সব বিধাতার দেয়া। তার কালো চামড়ার ভিতরে আছে ফর্সাদের মতোই লাল মাংস, লাল রক্ত।মা মরা মেয়েটা পাড়ায় বের হলেই একেকজন একেককথা বলতো মিলিকে নিয়ে।বলতো, যতই বিএ, এমএ পাশ করুক বিয়ে না হলে আর কী!খুব কষ্ট হয় মিলির।নির্ঘুম রাত কাটত।কোন স্বপ্নের পুরুষ মনে জাল বুনতো কিন্তু ধরা দিতো না।একদিন গ্রামের একচাচা একটা সমন্ধো আনল,এবার বাবা মেয়ে যেন আনন্দে আত্মহারা, যাইহোক বিয়েটা বোধহয় এবার হবে কারণ চাচার কথার মোটামুটি দাম আছে। চাচা বলেছে একটি বার নামেমাত্র দেখে বিয়ে হবে।যথা সময়ে পাত্র অভিভাবক সহ এলো। খাবার আয়োজন ও শেষ হলো, এখন একনজর মেয়ে দেখবে তারা।পাড়ায় শোরগোল পরে গেল যে আজ মিলির বিয়ে,গ্রামের সবাই প্রায় বিয়ে বাড়িতে এসেছে । মিলি বিয়ের সাজেই এলো পাত্রপক্ষের নিকট।তারা ভালোভাবে দেখে এতোগুলো মানুষের সামনে মিলির ও তার বাবার মুখের উপর বলল, "মেয়ে তো বেজায় কালো, আমরা আজ আসি পরে জানাব"।সংগে, সংগে মিলি যেন মিলিয়ে গেল হতাশার রাজ্যে।তারপর দৌড়ে ঘরে ঢুকে দরজা বন্ধ করে ফুপিয়ে, ফুপিয়ে কাঁদতে লাগলো, একসময় কান্নার শব্দ আর পাওয়া গেল না।অনেক ধাক্কাধাক্কি করে দরজা খুলে ঘরে গিয়ে পাওয়া গেল মিলির ঝুলন্ত লাশ।তার হাত পা অসাড় হয়ে পড়ে রয়েছে,যেন তারা বলছে জগতের মানুষ তোমরা বড়ই নিষ্ঠুর, বড়ই স্বার্থপর ! তোমরা রং দেখো, মন দেখো না। আমার অকাল মৃত্যুর জন্য দায়ী আমার এ কালো রং।একটা কালো রং, কালো রং....। (ছোটগল্প)
(আমরা রং কে নয় মন কে প্রাধান্য দেব।চকচক করিলে সোনা হয় না)।
_______________________
মোসাঃ জান্নাতুল মাওয়া
অসাধারণ লিখনির মাধ্যমে ঘুনে ধরা সমাজের একটা করুণ চিত্র তুলে ধরেছেন প্রিয় লেখিকা। অনবদ্য উপস্থাপন!
ReplyDelete