Header Ads

উদ্বাস্তু _ মোসাঃ জান্নাতুল মাওয়া

জলদি করো জদলি...
ঐ বুঝি আসছে রক্তচোষা নরপষুর দল মানুষরুপী হায়েনারা...
তাড়াতাড়ি বেরিয়ে পরি, হাতের কাছে যা পাও তাই নাও আগে জীবন তো বাঁচুক! বেশী বোঝা নিয়ে এতদ্দুর পথ লুকিয়ে ঝোপ জঙ্গল তারপর নৌকায় সাগর পাড়ি দেওয়া অনেক, অনেক ক...ষ্ট...বলতে, বলতে চোখে জল চলে এল নবীনের।শুধু জল খাবারটা একটু নাও। ইস্ চলো, চলো সেনাদের কণ্ঠ পাচ্ছি তো!আমার মেয়েরা? আয়েশা, আমিনা। ততক্ষণে হায়েনারা চলেই এসেছে। নজর পরে গেল আয়েশা, আমিনার দিকে। না না আমার মেয়েদের ছাড়ুন কোথায় নিয়ে যাচ্ছেন ওদের?( বলছে নুরী, আয়েশা আমিনার মা)।নুরীকে একটা বুটের লাথি মেরে রক্ত চোষা হায়েনারা টেনে হিঁচরে ঘরে নিয়ে গেল। আয়েশা, আমিনার চিৎকারে যেন আকাশ বাতাস কাঁপছে কিছুক্ষণের মধ্যে বাঁচার আকুতি যেন বাতাসে ম্লান হয়ে গেল। ওদিকে ক্যাম্পগুলোতে চলছে যুবকদের আহাজারি আঘাতে, আঘাতে রক্তাক্ত নিথর দেহটা লাথি দিয়ে করছে খেলা।যুবতীদের চলছে ধর্ষণের খেলা।যেন তারা মেতে উঠেছে আনন্দের হোলীখেলায়। কাঁপছে নবীন থরো, থরো। তাকে তো এবার নিজ স্ত্রীকে তুলে দিতে হবে হায়েনাদের হাতে।তাই আর দেরী না করে নবীন বৃদ্ধ মা, ছোট দু' ছেলে আর স্ত্রীকে নিয়ে বেরিয়েছে অজানা এক দেশে নতুন মাটির খোঁজে।বুকে বাঁধছে আমিনা আর আয়েশার বেঁচে থাকার আর্তনাদ।কোথায় রেখে এলাম আমাদের বুকের মানিকদের।নবীন, নুরীরা সহ আরো কত্ত মানুষ! একটু বাঁচার আশায় কতটা পথ রাত্রের আঁধার আর দিনের বিষাক্ত আলোয় ছুটছে সাগরের দিকে নৌকার আশায়। আর তাদের পিছনে শব্দ হচ্ছে বন্দুকের গুলির।মৃত্যুর আতংক বুকে নিয়ে তারা মাথায় পুটলি,কাঁধে ব্যাগ,অন্যকাঁধে দুধের সন্তান, হাতে চেপে ধরা বৃদ্ধ মাকে নিয়ে, কেউ আবার বৃদ্ধ মাকে আর বুকের ধনকে ভারী করে বহন করছে।কারো সন্তান,কারো বাবা,মা,মারা গেল দীর্ঘ পথ হাঁটা ক্লান্তিতে,পিপাসা মেটাতে পারেনি শেষ পানিটুকু পান করে। করো আবার দাফনও হলো না,মায়ের লাশটা জঙ্গলে ফেলে দিশেহারা হয়ে অন্য মানুষের সাথে দৌড়াতে লাগলো হাঁফতে, হাঁফাতে।সব হারিয়ে অবুঝ শিশুটি একা স্রেফ একা। অবশেষে কারো সাগর আর কারোবা নাফ নদী পাড়ি দেবার পালা।জলকাদা একাকার সাগরে ভাসমান বুভুক্ষ, তৃষ্ণার্ত নবীন, নুরী নামক বেচারাদের অবশেষে আশ্রয় হলো সবুজ শ্যামল ছোট একটি দেশ বাংলাদেশে। মানবতার খাতিরে দিতে হলো আশ্রয়। তারা শরণার্থী হিসেবে বাংলার মাটিতে পেল একটু বেঁচে থাকার ঠাঁই। বিশ্ব মানবতা কেন আজ দূরে?নুরীদের ভাগ্যাকাশে কেন এতো কালো মেঘ?নবীন, নুরীরা..রোজ ঐ বাংলার উুঁচু পাহাড়ে দাঁড়িয়ে,দাঁড়িয়ে দেখে নিজ মাতৃভূমির
সূর্যদয় আর সূর্যঅস্ত।ভিটে মাটি ফেলে আসা স্বজন হারানো নুরীরা কী নাড়ী পোঁতা সেই ভালবাসার মাতৃভূমিতে ফিরে যেতে পারবে? করুণ আর্তনাদে প্রকম্পিত হওয়া আকাশ, বাতাস, বৃক্ষ, লতা আজও ডাকছে তাদের কিন্তু কে আছে নুরীদের ডাকে সাড়া দিয়ে পারবে তাদের নিজ দেশের মাটিতে দাঁড়িয়ে সূর্যদয় আর সূর্যঅস্ত দেখাতে........?

_______________________
মোসাঃ জান্নাতুল মাওয়া

No comments

Powered by Blogger.