কে যেন আমায় ডাকে _ শামসুন ফৌজিয়ার ভুতের গল্প
ভুতের গল্প
আমি মিথুন, একটা প্রাইভেট কোম্পানীতে কাজ করি।চাকরির বয়স দু’বছর। বিয়েটা এখনো করা হয়ে উঠেনি, পরিবারে দায়বদ্ধতা আছে।ছোট বোনটি মেডিক্যালে পড়ছে আর ভাইটি এখনো কলেজে। তবে দিতির সাথে বিয়ে ঠিকঠাক । ওঁর ভাই ভাবী ইতালী থেকে দেশে আসলেই সামনের মাসে বিয়ে।
সবকিছু সুন্দর চলছিল তবে হঠাৎ একদিন রাতে শুনতে পেলাম কে যেন ফুঁফিয়ে ফুঁফিয়ে কাঁদছে! মাঝরাত আর ঘুটঘুটে অন্ধকার।বিদ্যুৎ ও নেই, এই আসে এই যায়। প্রথমে বিশ্বাস হলো না, পরে শুনি একদম কানের কাছেই কেউ যেন কাঁদছে। আমি জেগে টর্চ জ্বালাতেই কান্নার শব্দ নেই। ভালো করে খাটের উপর নীচ ঘরের কোনা চেক করলাম কিছুই নেই! এমনকি দরজা জানালা ও বন্ধ! ভাবলাম আমার মনের ভুল।পানি এক গ্লাস খেয়ে ঘুমিয়ে পড়লাম।
পরের দিন সেইম হচ্ছে , কান্নার শব্দে ঘুম ভেঙে গেলো! আমি টর্চ জ্বালাতেই শব্দ উধাও। ভাবলাম আলো জ্বেলেই ঘুমাব। কারণ এভাবে আমার ঘুমের ডিস্টার্ব হচ্ছে আর অফিসে কাজের ও ব্যাঘাত। কাউকে বলবো বিশ্বাস করবে তো ?
আলো থাকা সত্বেও কান্না শুনতে পেলাম! এবার উঠে বসলাম! একটা মেয়ে মানুষ দাঁড়িয়ে আছে! যেন একটা পরী! অপরুপ সুন্দরী! যদিও মুখটা তেমন দেখা যাচ্ছে না। আমি পানি খাবার জন্য নামার চেষ্টা করতেই বললো, তুই আমাকে ফলো কর”!
আমি আর কিছু বুঝলাম না শুধু মন্ত্রমুগ্ধের মতো পিছু পিছু ছুটলাম। নির্জন শীতের রাত! দূরের মাঠ পেরিয়ে শ্মশানের দিকে ছুটে চললাম। পরের দিন ভোরে কেউ আমাকে মাঠে পড়ে থাকতে দেখে বাবা ভাইকে খবর দিলে তারা বাড়িতে নিয়ে আসলো।
এই ঘঠনার পর হতে সে রোজ আমার সাথে কথা বলে।আমি ও যেন অপেক্ষা করি আমার হারিয়ে যাওয়া মিতুর। সে একদিন আমাকে বলল, মিথুন তুমি আমাকে ভুলে গেলে ? আমি যে তোমার মিতু!”
আমি মিতুকে পড়াতাম, কিন্তু ও একদিন প্রপোজ করে আর সেটা তার বাবার চোখে পড়ে যায়। আমি কত করে বললাম এসব কিছুই জানি না। পরে টিউশনি বাদ দিতে হলো। এই মিতু দেখতে পরীর মতো সুন্দরী ছিলো। কিন্তু ঐ ঘঠনার পরে একদিন মিতু মধ্যরাতে আমাদের বাড়ি চলে আসে। দরজা খুলে বাবা মা সবাই মিতুকে দেখে অবাক! আমি বললাম, কি ব্যাপার এতো রাতে তুমি?
মিতু বললো, “ আমার বিয়ে ঠিক হয়েছে আমার অমতে, আমি মিথুনকে ভালোবাসি চাচা, আমাকে ফিরিয়ে দিবেন না!”
ভোরে মিতুর বাবা জোর করে তাকে উদ্ধার করেন। পুলিশ কেইসে আমি ও জড়ালাম! পরে শুনলাম মিতু সুইসসাইড করেছে!
সেই মিতুকে পেয়ে আমি তো হতবাক! এ ও কি সম্ভব? প্রতি রাতে মিতু আমাকে গল্প শোনায়! এভাবে চলছিলো! কিন্তু মাঝে মাঝে আমাকে বাবা মা বাইরে থেকে উদ্ধার করেন। এতে আমার নামে বদনাম হয়েছে।
ঝাড়ফুঁক করানোর কথা বলছে স্বজনরা! বাবা ডাক্তার দেখালেন! কিন্তু আমি তো মিতুকে মনে মনে চাই !
রাত গভীর! সফেদ শাড়িতে মিতুকে অপরুপা লাগছিলো। আমরা নদীর ধারে গল্প করছিলাম , ভোর হয় হয় অবস্থা! মিতু বলে উঠলো , দিনের আলোতে আমি কষ্ট পাই। এবার চলে যাচ্ছি, হঠাৎ সে নদীতে পা রাখলো! মিতু আকাশের উচ্চতা পেয়ে গেলো যেনো। এতো বড় নদী সে এক লাফে পার হয়ে দূরে মিশে গেলো!
আমি স্পষ্ট বুঝতে পারছি ধীরে ধীরে আরেক জগতে হারিয়ে যাচ্ছি! পরেরদিন মিতু আমাকে টাটকা কিসমিস খোরমা ও হালুয়া খেতে দিলো! বললো, তুমি দূর্বল হয়ে গেছো , এগুলো খাও”। আজ আমাদের রাজার মেয়ের জন্মদিন তাই রাজকীয় খাবার তৈরি হয়েছে! “
একদিন মিতু বললো, তুমি চলে আসো আমার জগতে! আমি রাজাকে বলেছি তোমার কথা। তিনি বলেছেন নিয়ে যেতে”!
দীর্ঘ একমাস কি হয়েছিল আমি জানিনা! সুস্থ হবার পর সব কিছু মনে পড়লো! এবার আমি মিতুকে দেখিনা! কিন্তু তাকে অনুভব করি।মাঝরাতে খুঁট করে শব্দ হলে চেয়ে দেখলাম, জানালা খুলে গেছে! মিতু শিউলি ফুলের মালা পরে দাঁড়িয়ে আছে! আমাকে ডাকছে চলে এসো! আমি ফ্লাক্স থেকে গরম চা ছুঁড়ে দিলাম! চিৎকার করে মিতু হারিয়ে গেলো ঝোপের মধ্যে।
পরের দিন আবার সেই একই ঘঠনা! আমি আলো জ্বালিয়ে দিলাম। ঘরে বিয়ের আয়োজন চলছে! বাইরে বড় চুলায় রান্না চলছে, সবার সামনে মিতু আমাকে ডাকছে! বাইরে এলাম , এবারে হাত ধরে ঠানছে! আমি অবাক হলাম! এতো শক্তি মিতুর শরীলে? ভালো করে মুখের দিকে তাকাতেই দেখি, ওমা! একি? এতো মিতু না! মুখটা বিদঘুঠে ! সাদা লম্বা দাঁত বেরিয়ে পড়েছে মুখ থেকে! হাতের নখগুলো যেন তলোয়ার! আশ্চর্য ব্যাপার বাড়ি ভর্তি এতো মানুষ ! মিতু মনে করে যার সাথে এতদিন কথা বলেছি অশরীরি আত্মা আমাকে জোর করে টেনে নিয়ে যাচ্ছে , কেউ দেখছেনা। আমি প্রানপন চেষ্টা করছি ঐ ভুতের হাত হতে ছুটতে কিন্তু শক্তিতে পারছিনা। আবার জোরে কাউকে ডাকতে ও পারছিনা।
হঠাৎ চুলা হতে জ্বলন্ত কয়লার টুকরা ওঁর উপর ছুঁড়ে দিলাম ! চিৎকার করে গিয়ে পড়ল মাঠিতে! রাগে আমাকে যেন মেরে ফেলবে! ঐ সময় দেখলাম চুলো খালি ! দঘদঘে আগুন ! আমি সমস্ত শক্তি দিয়ে ঢাক্কা দিলাম !অশরিরী আত্মা গিয়ে পড়লো চুলোয় আর পুড়ে লাল হয়ে গেলো!
অনেক দিন পরে আমি মুক্তি পেলাম! আমার মাথা হাল্কা লাগছে! বিয়ে বাড়ির হৈচৈ বাড়তে থাকলো। আমি সেই বিয়ের বর সেজে গাড়িতে উটলাম।
Shamsun Fouzia
07/20/ 2020
New York, USA
No comments