প্রাক্তন ও বর্তমান _ মনোয়ারা মনির ছোট গল্প
প্রাক্তন ও বর্তমান
আমি অথই, আমার বয়স যখন পনেরো ছুই ছুই তখন 'সায়ানের' সাথে আমার বিয়ে হয়,তার আগে মাঝে মাঝে ছোটো ছোটো চিরকুট পাঠাতো সেই চিরকুটে অনেক সুন্দর করে ও মনের কথা লিখতো যা দেখে আমি ওর প্রতি পুরোপুরি ভাবে নির্ভরশীল হইয়ে পরি। সায়ান প্রতিদিন একবার করে আমার জানালার পাশে এসে ওর চিরকুট ছুরে দিত আর আমিও দিতাম কিন্তু আমাকে বাসা থেকে একা বের হতে দিতনা বলে কখনো ওর সাথে আমার ঘুরে বেড়ানো হয়নি শুধু দুর থেকে দেখতাম।
অর্থনৈতিক দিক থেকে সায়ানের পরিবার ছিলো দুর্বল তাই সায়ানের কষ্টে আমি ঠিক থাকতে পারতামনা এজন্য মাঝে মাঝে আমার বাসা থেকে কাউকে না জানিয়ে ওর জন্য খাবার পাঠাতাম, একদিন ও লিখে পাঠায় অনার্স ২য় বর্ষ পরিক্ষা দিতে পারছিনা টাকার অভাবে, একথা শোনার পর ওইদিন প্রথম স্কুল পালিয়ে গিয়ে আমার কানের দুল গুলো বিক্রি করে ওকে টাকা দেই এবং তারপর থেকে পায়ে হেটে স্কুল যেতাম আর সেই টাকা জমিয়ে সায়ানকে দিতাম। সায়ান যখন অনার্স ফাইনাল দিল তখন আমি SSC পরিক্ষা দিয়েছি ঠিক তখন সায়ান আমাকে না জানিয়ে আমার বাবাকে চিঠি লিখে বলে আপনার মেয়েকে আমি গোপনে বিয়ে করেছি একথায় আমি কোনো প্রতিবাদ করতে পারিনি কারন ভালোবাসি বলে।আমার বাবা তখন লোক লজ্জার ভয়ে আমাদের বিয়ে দেয় শুধু আমার দু হাত ধরে আমার বাবা বলেছিলো তুমি এতো কম বয়সে এটা করতে পারলে?সেদিনও আমি কিছু বলিনি শুধু সায়ানকে হারানোর ভয়ে।
এরপর বাবার অর্থায়নে আমরা সংসার শুরু করি। আমি সায়ানকে খুব ভয় পেতাম কারন ওকে চাকুরির কথা বললেই ও আমার সাথে খারাপ ব্যাবহার করতো কিন্তু আমার মামা ওর জন্য অনেক ভালো একটা চাকুরির অফার দেয় আর তাতে অনেক টাকা লাগে যা আমার সব অলংকার ও আমার বাবা টাকা দিয়ে চাকুরি দেয়। সায়ান চলে যায় ঢাকায় আর আমি পড়ালেখা করতে থাকি এর মধ্য আমাদের একটা সন্তান হয় আর সায়ানেরও অনেক পরিবর্তন হয় ও আমার সাথে কয়েকদিন পরপর কথা বলে। আমি ফোন দিলে কেটে দেয়।
কিছুদিন পর জানতে পারলাম সায়ানের সাথে ওর গ্রামের একটা মেয়ের গভীর সম্পর্ক হইছে এমনকি ওই মেয়েকে বিয়ে করে সায়ান ঢাকায় বড় একটা ফ্লাটে ভারা থাকে।আমি অনেক বলার পর সায়ান আমাকে বলে তুমি এসব কাউকে বললে আমি আর তোমাদের সাথে যোগাযোগ করবোনা,এভাবে কেটে যায় ছয় বছর এর মধ্য সায়ান আমাকে ডিভোর্স দিয়েছে তবে মাঝে মাঝে আমার সন্তানের জন্য কিছু টাকা দিত আর এ নিয়ে সায়ানের নতুন বউ অনেক কথা শুনাতো আমায়।আমি সায়ানকে অনেক ঘৃনা করতাম তাই ওর সাথে যোগাযোগ আমার ছিলোনা।
শুধু ও আমাকে ম্যাসেজ করতো যে আমাকে তুমি ক্ষমা করো কিন্তু আমিতো ওকে ক্ষমা করিনি করবোওনা। আমার বাবার অফিসে একটা চাকুরি হয় আমি সাবলম্বি হই কিন্তু কাউকে ভালোবাসা বা নতুন করে বিয়ের চিন্তাও করিনা, সায়ায়ানের সাথে ডিভোর্সের প্রায় দশ বছর হয়ে যায়।
হঠাৎ আমার এক বন্ধু যাকে অনেক দিন চিনি তার চোখে চোখ পরতেই অদ্ভুত এক মায়ায় পরে যাই ওকে মনে মনে অনেক ভালোবেসে ফেলি কিন্তু ও সেটা বুঝতে পারে তাই সে বলে দেয় আমাকে ভালোবাসতে পারবেনা কিন্তু আমি ওকে প্রতিদিন ফোন দেই আর এভাবে কিছুদিন যাওয়ার পর সিমান্ত আমাকে বলে আমি তোমাকে ভালোবাসি, ওই দিন আমি প্রচণ্ড খুশি হই, তার পর সিমান্ত নিজে থেকে আমার সব খেয়াল রাখে, আমাকে নিয়ে হুটখোলা রিকশায় ঘুরে বেড়ায় আমি অনেক ভালো থাকি।
কিন্তু কিছুদিন পর আমি বুঝতে পারি ও আমাকে অনেক অবহেলা করে আসলে ও আমাকে ভালোবাসেনা করুনা করে কারন সিমান্ত শুধু ওর সেই ভালোবাসাকে নিয়ে ভালো থাকতে চায় কিন্তু সিমান্ত কেনো আমার সাথে ছলনা করলো জানিনা আমিতো সিমান্তকে ভালোবাসি তাই ওকে আমি ভুলতে পারবোনা আর এজন্য সিমান্তকে অনুরোধ করে বলি সীমান্ত, আমাদের সমাজে সিংগেল "মা" কে কেউ ভালোভাবে থাকতে দেয়না তাই তুমি শুধু আছো আমার পাশে এটা বুঝতে দাও আর কিছু চাইনা।
সিমান্তও আছে এভাবে কিন্তু তার ভালোলাগা গুলো শুধু তার সেই তাকে ঘিরে আমার জন্য নয়। আমার ইচ্ছে গুলো তাই খাঁচায় বন্দি করে রেখেছি তবুও সিমান্ত ভালো থাক, হয়ত আমিই ভুল ছিলাম তাই কারো প্রিয়জন হতে পারিনি হয়েছিলাম প্রয়োজন।
মনোয়ারা মনি
No comments