Header Ads

স্মৃতি ❑ সেলিনা শেলী

স্মৃতি
সেলিনা শেলী
আজ সকাল সকাল রবিনের ঘুমটা ভেঙে গেলো।হতে পারে অজানা খুশির অদৃশ্য আলিঙ্গনে।
শৈশবের আঙ্গিনায় যার সাথে টিফিন ভাগ করে খাওয়া থেকে শুরু করে আজ অবধি "এক সুতায় বাঁধা দুটি প্রাণ"।সেই মানুষ টার সাথে দেখা মিলবে আজ!
কলেজ অবধি রবিন আর বন্যা একসঙ্গেই পড়েছে।নিয়তি বিমুখ করেনি।বিপত্তি ঘটে ওদের বিশ্ববিদ্যালয়ের ভর্তি নিয়ে।
রবিন তুলনামূলক বন্যার চেয়ে ভালো স্টুডেন্ট হওয়ায় জাহাঙ্গীর নগর বিশ্ববিদ্যালয়ে ইংরেজিতে চান্স পায়। বন্যার ঠাঁই হলো রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ে।
১৯৯৬-৯৭এর দিকে মোবাইল ফোনের ব্যবহার খুব টাকাওয়ালা না হলে চিন্তা করা যেতনা।চিঠিই ছিলো মধ্যবৃত্তের তথা সকলের যোগাযোগের শ্রেষ্ঠ মাধ্যম।আর এ মাধ্যমেই বেঁচে থাকতো প্রিয় মানুষদের প্রিয় সম্পর্কগুলো।
মফস্বল শহরে নিজেদের বাড়ীতেই রবিনদের বাস।
বন্যাদের বাড়িটা একটু শহরতলীর দিকে।
গ্রীষ্মের ছুটিতে বন্ধু- বান্ধব সবাই যে যার বাড়িতে।
বন্ধুরা মিলে ঠিক করেছে, গ্রীষ্মের ছুটিতে এবার রোহানদের গ্রামের বাড়ি বেড়াতে যাবে।
সুযোগটা হাতছাড়া করতে চায়না রবীন।
বাবা-মায়ের একমাত্র সন্তান হওয়ায়, প্রথমে আপত্তি জানালেন রবীনের মা রমেলা বেগম।
আর বাবাতো আগে থেকেই ঐ মেয়েকে পছন্দ করার কারণে ছেলের সাথে অভিমানে আলাপের ইতি টেনেছেন।
বিধিনিষেধের পালা শেষ করে, নির্ধারিত তারিখেই ওরা বেড়িয়ে পড়লো রোহানদের বাড়ির উদ্দেশ্যে। কেরানী গন্জের দোহার থানায় রোহানদের বাড়ি।
নয়নাভিরাম প্রাকৃতিক দৃশ্যের সমারোহে ছবির মতো গ্রামখানি দেখে,
সবাই হত-বিহ্বল! রোহানদের বাড়িটাও বেশ ছিমছাম, গোছানো।
প্রবেশ দ্বারের নোয়ানো মাধবীলতার শাখা-প্রশাখাও যেনো কুর্ণিশ করে অভিবাদন জানাচ্ছে নতুন অতিথিদেরকে।
রোহানের বাবা ছেলের বন্ধু- বান্ধবীদের
আসার খবর আগে থেকেই জেনে, গরমের কথা ভেবে,গাছ থেকে ডাবের ছড়া পেড়ে রেখেছেন। ডাবের পানি পান করে, মধ্যাহ্ন ভোজ না সেরেই ওরা বেড়িয়ে পড়লো। বাড়ির অদূরেই ছিলো মন মরা একটা খালের মতো নদী। সাত পাঁচ চিন্তা না করে সবাই ঝাঁপিয়ে পড়লো নদীর বুকে।
রবীন সাঁতার কাটছিলো আর বন্ধুকে বলছিলো...আমার পা জড়িয়ে আসছে..।রোহান বললো ভালো করে সাঁতার দে। সাঁতার কাটা শেষ হলে সবাই পাড়ে উঠে এলো,শুধু রবীন নেই! দেখতে না পেয়ে সবাই ভাবলো ও হয়তো আমাদের চমকে দেয়ার জন্য আগেই বাসায় চলে গেছে।
যথারীতি সবাই বাড়ির দিকে হাঁটছে...
"বন্যার মনটা নীরবে বিষণ্ণতার রাজ্যে পায়চারী করছে।"
বাসায় এসে রবীনকে দেখতে না পেয়ে
সবাই হতচকিত! কিছুক্ষণ আগের 'আনন্দ বাড়িটা' যেনো মৃত্যু পুরিতে রূপ নিলো!
কারো বুঝতে বাকী রইল না,,, কী ঘটতে পারে! রোহানের মনে পড়ছিলো ও পা জড়িয়ে যাওয়ার কথা বলছিলো!
মাইকিং এর ব্যবস্থা করেও যখন খবর মিললো না,তখন রোহানের বাবা স্থানীয় দের সহযোগিতায় সম্ভাব্য জায়গায় জাল ফেলে খোঁজা খুঁজি করতেই পেয়ে যায় রবিনের অস্তিত্ব! কিন্ত ততক্ষণে কিছুই করার নেই! নিষ্প্রাণ দেহটি দেখেই বোঝা যাচ্ছিলো বাঁচার জন্য কতোই না চেষ্টা করেছে!!
থানা থেকে ফোন পেয়ে ততক্ষণে রবিনের শহরে খবরটা পৌঁছে গেছে।
রবিনের মা ছেলের এমন খবরে জ্ঞান হারিয়ে ফেলেছেন।বিনয়ী, ভদ্র, টগবগে চেহারার রবিনের অকাল প্রয়াণে পুরো শহরবাসী যেন ভাযা হারিয়ে ফেলেছে!!
পুলিশী ঝামেলা মিটিয়ে দোহার থেকে লাশ নিয়ে গাড়ি ছুটে চলেছে রবিনের শহরে,,,,
বন্ধুরা কেউ কারো দিকে দৃষ্টি নিক্ষেপ করার সাহস হারিয়ে ফেলেছে!!
নিয়তির নির্মম পরিহাস! আনন্দে মুখরিত মুহূর্তগুলো নিমেষেই বিষাদের অতলে তলিয়ে যেতে লাগলো,,,,,,,
বন্যার জীবনের সঙ্গে যোগ হলো একটি দুঃখের প্লাবন। ওর স্বপ্ন আজ সত্যিই বাকরূদ্ধ!!!
"স্মৃতি মানেই নোনা আঁখি জল
স্মৃতি মানেই বেদনার অতল"


DOWNLOAD MOBILE PANEL INJECTOR-3/3 


No comments

Powered by Blogger.