Header Ads

মীর সাহেবের সরাই ❑ সেলিম ইসলাম খান ❑ ধারাবাহিক উপন্যাস পর্ব_১০

 


মী সাহেবেরা

সেলিম ইসলাম খান

উপন্যাস

ধারাবাহিক পর্ব_১০

মালাবার রাজার আমন্ত্রণে আরব বণিক সৈয়দ আলফা হোসেন, ইউনিস ও মীর গফুর খান তিন দিন পুরো মালাবার, কনুর রাজ্য, কর্ণাটক ও কেরল ভ্রমণ করলেন। এরপর রাজার অনুমতি নিয়ে আলফা হোসাইনী সিংহলের দিকে যাত্রা করার সিদ্ধান্ত নিলেন। রাজা জামোরিন, তার কন্যা জেনেলিয়া ও জামাতা কামাল তাদের জাহাজ পর্যন্ত এগিয়ে দিলেন। রাজা জামোরিন আবার আসার শর্তে তিনদিনের মাথায় তাদের যেতে দিলেন। তিনি ভেবে রেখেছিলেন মেহমানদের এক সপ্তাহ মালাবারে রেখে দিবেন। কিন্তু আলফা হোসাইনী জাহাজে পচনশীল দ্রব্যের দোহাই দিয়ে ছুটি পেলেন।

আলফা হোসাইনীর জাহাজ কেরলের তীর ধরে দক্ষিণ দিকে ছুটে চলল। লক্ষ্য সিংহল দ্বীপ।

নারকেল, আখ আর কাঁঠালের দ্বীপ সিংহলে পৌঁছল তার পরের দিন। প্রয়োজনীয় কেনাকাটা করে দীপের আমীরের সাথে সাক্ষাত করতে গেলেন তারা। আমীর মালাবারে তাদের কৃতিত্বের কথা আগেই শুনেছিলেন, সেজন্য কথার শুরুতে তাদের ধন্যবাদ ও কৃতজ্ঞতা জানালেন। কারণ পর্তুগিজ নাবিকরা একবার সুযোগ পেলে শুধু মালাবার নয়, এখানকার সব জায়গাতেই অন্ধকার নামিয়ে আনবে।

আলফা হোসাইনী বললেন, অন্ধকার দ্রুত ঘনীভূত হয়, আলোকের বিচ্ছিন্নতায়। আলো ঘনিভূত হলে অন্ধকার তিরোহিত হয়।

আমির বললেন, বাহ! বেশ বেশ! হোসাইনী সাহেব, আপনি শুধু ব্যবসায়ীই নন, একজন দার্শনিকও। আনার ভালো ধর্মীয় ভক্তাও। আপনি রাজি থাকলে জুমার দিন একটি ইসলামী জলসার আয়োজন করতে চাই।

আলফা হোসাইনী বললেন, আসলে হাতে সময় নেই বললেই চলে। আমার ইচ্ছেনছিল, একবার আূম পাহাড় পরিদর্শনের।

আমির বললেন, তাহলে কালই চলুন। আদম পাহাড় পরিদর্শনের এটা উপযক্ত সময়। পরশু শুক্রবারে জলসায় বয়ান করে তবেই নোঙর তুলবেন।

হোসাইনী সাহেব বললেন, বন্ধু ইউনুস আর মীর গফুর খান রাজি থাকলে আমি যাত্রা বিরতি দিতে পারি।

মীর গফুর খানের মন পুলকে ভরে উঠল। আদম পাহাড়ে প্রথম মানব ও প্রথম নবী হযরত আদমের বেহেশত থেকে দুনিয়াতে আগমনের স্মৃতি চিহ্ন দেখতে গেলে বেশ ভালোই হবে।

আদম পাহাড়ে তাদের পুরো একদিন লেগে গেল। উঠতেও বেশ বেগ পেতে হল। তবে আগ্রহ ও ভালবাসা তাদের কষ্ট লাঘব করে দিল। হযরত আদম আলাইহিস সালামের পায়ের বিশাল চাপ দেখে অবাক হলেন তারা। তখন মানুষের আকৃতি চিন্তা করে মহান সৃষ্টিকর্তার প্রতি তাদের অন্তর বিগলিত হল। তারা যোহর ও আসর পাহাড়ে জামাতের সাথে আদায় করে সন্ধ্যার মধ্যে সমতলে ফিরে এল।

পরদিন বাদে জুমা রাজবাড়ির সামনে বিশাল পেন্ডেলে জলসা শুরু হল। বক্তাগণ একে একে বয়ান রাখলেন। বিশেষ অতিথি হিসেবে ইউনিসের বয়ানের পর আমীর ও হোসাইনীর অনুরোধে মীর গফুর খান বয়ান করার জন্য এগিয়ে এলেন। শুরুতেই মহানবীর শানে দরুদ শরীফ পাঠ করে তিনি পবিত্র কালামুল্লাহ শরীফের সুরা ইউসুফ থেকে পাঠ শুরু করলেন। তার সুমধুর কণ্ঠে কুরআন তিলাওয়াত ও ইউসুফ নবীর জীবন কাহিনী শুনে উপস্থিত সকলে বেশ বিমোহিত হয়ে গেলেন। কখন যে ঘণ্টার পর ঘণ্টা কেটে গেল তারা টেরই পেলেন না। তারা এত তন্ময় হয়ে গেলেন যে, রাত বাড়তে লাগল তাও বেমালুম ভুলে গেলেন।

বয়ান শেষ হলে সকলের মধ্যে সম্বিত ফিরে এল। প্র্ধান অতিথি হিসেবে বয়ান করতে বসে আলফা হোসাইনী বেশ কয়েকবার মীর গফুর খানের প্রশংসা করে বললেন, এমন বিজ্ঞ ওয়াজেনিকে পেয়ে আমরা সত্যিই অভিভূত। এর আগে মালাবারে তার বুদ্ধিমত্তায় আমরা বিনা রক্তপাতে পর্তুগীজদের হারিয়েছি। এখন তার বয়ানে আমরা মন্ত্রমুগ্ধ হলাম। এত কম বয়সে এমন বহুমুখী প্রতিভা জগতে বিরল। আমাদের সকলেরও উচিত, দুনিয়াবি কাজের পাশাপাশি নবীর সুন্নত প্রচারে মনোযোগী হওয়া।

এরপর তারা দুদিন রাজার আতিথ্য গ্রহণ শেষে মাদ্রাজের দিকে রওয়ানা হলেন। আমীরের উপস্থিতে তাদের জাহাজ নোঙর তুলল। তিনি শুরা সদস্যদের নিয়ে মেহমানদের বিদায় জানাতে বন্দরে ছুটে এলেন। বিশেষ করে আগামী জলসায় বয়ান করার জন্য তিনি মীর গফুর খানকে বারবার আহ্বান জানাতে লাগলেন।

আলফা হোসাইনীর জাহাজ মাদ্রাজে পৌঁছাতে দেড়দিন লেগে গেল। মাদ্রাজ থেকে কলিকট, তারপর কোলকাতা। কলকাতায় দুদিনের যাত্রা বিরতি করলেন তারা।

 

চলবে........

No comments

Powered by Blogger.