Header Ads

মীর সাহেবের সরাই ❑ সেলিম ইসলাম খান ❑ ধারাবাহিক উপন্যাস পর্ব_১৭

 


মী সাহেবেরা

সেলিম ইসলাম খান

উপন্যাস

ধারাবাহিক পর্ব_১৭

নসরতশাহর নেতৃত্বে বাংলার সুলতানী বাহিনী জোয়ারগন্জ থেকে ফণীনদী ফেরিয়ে দক্ষিণ শিকে এসে যাত্রা বিরতি দিল। তারপর খন্ডলের কাছাকাছি ফুলতলায় এসে তাঁবু স্থাপন করল। জোহর নামাজবাদ নসরতশাহ সেনাপতিদের নিয়ে বৈঠকে বসলেন। কিছুক্ষণের মধ্যে আলী আকবর এসে সভায় প্রবেশের অনুমতি চাইল। নসরতশাহ অনুমতি দিলেন।

নসরতশাহ বললেন, কি ব্যাপার আলী আকবর শেয়ালরা কি গর্তে ঢুকেছে, নাকি চুপিসারে কৃষকের খোয়াড়ে হামলা করেছে।

আলী আকবর বললেন, মহামান্য শেয়ালরা খোয়াড়ে হামলা করার প্রস্তুতি নিচ্ছে। তারা এখন খন্ডলের কাছাকাছি বিলুনিয়ায় রয়েছে সন্ধ্যা নাগাদ খন্ডলের আরো কাছে চলে আসবে। ইতিপূর্বে তারা সোনামুড়া দিয়ে হামলা চালিয়ে মেহেরকুলে প্রবেশ করেছিল।

নসরতশাহ বললেন, ঠিক আছে আলী আকবর, দাউদ খানের কাছ থেকে কোন সংবাদ থাকলে বল।

আলী আকবর বললেন, দাউদ খান বলেছেন, মেহেরকুলের সেনারা ময়নামতি অআস্থান করছে, আপনি হুকুম দিলে তারাও খন্ডলের দিকে লংমার্চ করবে।

নসরতশাহ বললেন, ত্রিপুরার বাহিনীতে সেনা সংখ্যা কত হবে?

আলী আকবর বললেন, নিদেনপক্ষে চারহাজার মহামান্য। একহাজার তীরন্দাজ, এক হাজার ঘোড়সোয়ারী বাকি দুহাজার পদাতিক। তবে পাঁচশো হাতি তাদের শক্তি বাড়িয়েছে।

নসরতশাহ বললেন, কোন সমস্যা নেই আলী আকবর, আল্লাহ চাহেনতো আমরা আড়াই হাজার সেনাই তাদের জন্য যথেষ্ট। আমাদেরও একহাজার তীরন্দাজ রয়েছে। এদের নেতৃত্বে থাকবে নেকড়ে শার্দুল ছুটিখান, আর পাঁচশো ঘোড়সওয়ারীর নেতৃত্বে থাকবে সেনাপতি হৈতেন খান। আর পদাতিক দলের নেতৃত্বে থাকবে সীতাকুন্ডের সিংহ জাফর খান। তুমি বিশ্রামে যাও। আমরা আসরবাদ খন্ডল অভিমুখে যাত্রা করব ইনশাআল্লাহ।

আলী আকবর বললেন, ইনশাআল্লাহ। আমরা ত্রিপুরা সেনাপতি রাইবরমকে পরাজিত করে খন্ডল রক্ষা করব।

নসরতশাহ সেনাপ্রধানদের আসর পর্যন্ত বিশ্রামে যেতে বলে নিজেও বিশ্রামে চলে গেলেন।

আসর নামাজের পর সুলতানী সেনারা খন্ডল অভিমুখে যাত্রা করল। সন্ধ্যা হবার আগেই তারা খন্ডল থেকে বিলুনিয়ার পাহাড়িয়া এলাকায় পৌঁছে গেলেন। নিচু তিন পাহাড়ের সংযোগস্থলের চূড়ায় তারা তাঁবু স্থাপন করলেন। এখান থেকে উত্তরে তাকালে পাহাড়িয়া গিরিখাদে ত্রিপুরা বাহিনীকে সহজেই দেখা যায়। নসরতশাহ সর্বক্ষণ তাদের গতিবিধি অনুসরণের জন্য আলী আবকরকে আদেশ দিলেন। রাতের প্রথম প্রহরে আলী আকবর খবর নিয়ে এল, দাউদ খান ত্রিপুরা সেনাদলে মিশে গিয়েছে। সে আরো শখানেক সেনাকে দলে অনুপ্রবেশ করাতে চায়।

নসরতশাহ বললেন, বাহ!বাহ! দাউদ খান বেশ দক্ষ ও কৌশলী সেনাপতি। তুমি এখনই শক্ত-সামর্থ্য একশজন সেনা নিয়ে তাদের সেনাদের বেশ পরিয়ে অতি গোপনে দাউদ খানের সাথে দেখা কর। তারা দাউদ খানের নেতৃত্বে থাকবে। তুমি হবে তার সহকারী। তোমরা উপযুক্ত সময়ের অপেক্ষা করবে। আমরা শেষ রাতে হামলা চালাব। আগামীকালের সূর্য তাদের জন্য জাহান্নাম বয়ে আনবে। রাতের খাবার পর ইশার নামাজ শেষে নসরতশাহ সেনাদের সামনে এক ঐতিহাসিক বক্তব্য রাখলেন, তিনি বললেন, আমরা ত্রিপুরা সেনাদলকে শুধু বিলুনিয়া থেকে বিতাড়িত করব না, তাদেরকে উদয়পুর পর্যন্ত ধাওয়ানি দেব।

সেনারা আল্লাহু আকবার ধ্বনি দিয়ে তাকে সমর্থন জানাল।

নসরতশাহ বললেন, ফজর নামাজ পড়েই আমরা হামলা শুরু করব।

সেনারা আবারও ইনশাআল্লাহ ধ্বনি তুলে সমর্থন জানাল।

ছুটি খান বললেন, তাহলে দেরি না করে আমরা পালাক্রমে বিশ্রামে চলে যাই, একদল রাত দুটা পর্যন্ত বিশ্রাম করবে বাকি রাত পাহারা দেবে। অন্যদল রাত দুটা পর্যন্ত পাহারা দেবে, তারপর বিশ্রামে যাবে। আমি আগে পদাতিক বাহিনীকে মতামত জানাবার জন্য আহ্বান করছি। পদাতিক বাহিনী জাফর খানের আদেশ শিরোধার্য বলে মত দিল। জাফর খান বললেন, পদাতিকরা বহুপথ হেঁটে এসেছে আপনারা রাজি থাকলে তারা আগে বিশ্রামে যেতে পারে। নসরতশাহ, হৈতেন খান ও ছুটিখান সম্মতি দিলে পদাতিকদের আগে বিশ্রামের সুযোগ দেয়া হল। সঙ্গে সঙ্গে তীরন্দাজ দল ধনুক তাঁবু এলাকার চারপাশ ঘিরে ফেলল।

 

চলবে........

No comments

Powered by Blogger.