Header Ads

মীর সাহেবের সরাই ❑ সেলিম ইসলাম খান ❑ ধারাবাহিক উপন্যাস পর্ব_২৩

 


মী সাহেবেরা

সেলিম ইসলাম খান

উপন্যাস

ধারাবাহিক পর্ব_২৩

জোয়ারগন্জ খানবাড়ির সামনের বিশাল মাঠে অশ্বারোহী বাহিনী ও পদাতিক বাহিনীর প্রশিক্ষণ শুরু হল। আলফা হোসাইনী, ছুটি খান ও মীর গফুর খান তাদের নিবিড় প্রশিক্ষণ দিচ্ছেন। তারই অদূরে এক হাজার তীরন্দাজ দলকে প্রশিক্ষণ দিচ্ছিলেন চাটগাঁর মশহুর তীরন্দাজ দুলাল দাস। কলাগাছে দূর থেকে লক্ষ্যভেদ করছিলেন তীরন্দাজরা। দুলাল দাস শাবাশ শাবাশ বলে তাদের উৎসাহ দিচ্ছিলেন। দুপুর নাগাদ জাফর খানও সীতাকুন্ড থেকে তার বাহিনী নিয়ে উপস্থিত হলেন। তারাও কিছুক্ষণ বিশ্রাম শেষে প্রশিক্ষণ শিবিরে যোগ দিলেন। পরাগল খান বাড়ির দহলিজ থেকে তাদের প্রশিক্ষণ নিরীক্ষণ করছিলেন। আর জোয়ারগন্জ ও আশপাশের এলাকার আবালবৃদ্ধবনিতা হুমড়ি খেয়ে পড়ল। তারা খেলা দেখার মতো করে পুরো মাঠ চারপাশ থেকে ঘিরে সেনাদের প্রশিক্ষণ দেখতে লাগল।

শুরুতে আরব বণিক সৈয়দ আলফা হোসাইনী একটি তেজী ঘোড়ার পিঠে সওয়ার হয়ে দুপাশে গাছের ঘন প্রতিবন্ধকতার মাঝ দিয়ে ঘোড়া ছোটালেন। আর তলোয়ার দিয়ে গাছের ডালে আঘাত করতে লাগলেন। আবার গাছের শাখা গায়ে লাগার মুহূর্তে ক্ষিপ্রগতিতে ঢাল দিয়ে আড়াল করে তলোয়ার চালাতে লাগলেন। তার দেখাদেখি অন্যান্য সেনারাও সেভাবে এগিয়ে যেতে লাগল। ছুটি খান পদাতিক বাহিনীকে একই কায়দায় প্রশিক্ষণ দিতে লাগলেন। দুপুরের খাবার ও জোহর নামাজের পর দুই ঘন্টার বিশ্রাম দেওয়া হল। সবাই তাঁবুতে বিশ্রাম নিতে গেল।

পরাগল খান তার দরবার হলে আলফা হোসাইনী, ছুটি খান, মীর গফুর খান, জাফর খান ও দুলাল দাসদের সাথে যুদ্ধ পরিকল্পনার খুটিনাটি আলোচনা করছিলেন, এমন সময় তার গোয়েন্দা প্রধান জয়নাল আবেদিন প্রবেশের অনুমতি চাইল। অনুমতি পেয়ে পরাগল খানের সামনে দাঁড়ালেন জয়নাল। পরাগল খান জিজ্ঞেস করলেন, কি ব্যাপার জয়নাল। তোমার আসতে বেশ দেরি হল। তুমি কি দুপুরের খাবার খেয়েছ।

জয়নাল বলল, ইচ্ছে ছিল আপনাদের সাথে বসে খাব, কিন্তু ধুমঘাটে পৌঁছতেই জোহর হয়ে গেল। ধুমঘাট মসজিদে নামাজ পড়ে ঘোড়ায় উঠতে যাব, আকরাম চাচা আটকালেন। জোর করে দস্তরখানে বসিয়ে দিলেন। পরাগল খান বললেন, আকরাম কেমন আছে?

- আলহামদুলিল্লাহ তিনি ভাল আছেন। আমাদের বিজয় দেখার জন্য উদগ্রীব হয়ে আছেন। বললেন জয়নাল।

পরাগল খান বললেন, ঠিক আছে। তোমার দেরি দেখে ভাবলাম, নিশ্চয় আরো গুরুত্বপূর্ণ কিছুর খোঁজ পেয়েছ।বস শরবত আর নাশতা খেতে খেতে বল ত্রিপুরা সেনাদের খবরাখবর।

জয়নাল মাদুরে বসে শরবত ও নাশতা খেতে লাগল। তারপর বলল, ত্রিপুরা সেনারা উদয়পুর অবস্থান করছে মহামান্য। তাদের তাঁবুর সংখ্যা দেখে বুঝলাম তিন সহস্র সেনা রয়েছে। প্রশিক্ষণ কালে তাদের এক সহস্র তীরন্দাজকে প্রশিক্ষণ নিতে দেখা গেল।

পরাগল খান বললেন, হস্তী বাহিনীর সংখ্যা কতো?

- পাঁচ শতাধিক হবে। বললেন জয়নাল।

পরাগল খান আলফা হোসাইনীদের দিকে তাকিয়ে বললেন, আমরা তাদের উদয়পুরেই আক্রমণ করব। সেখানেই তাদেরকে মাটির সাথে মিশিয়ে দেব। আমি মহামান্য সুলতানকেও বার্তা পাঠিয়েছি। তিনি নসরত শাহ ও হৈতেন খানের নেতৃত্বে আরো দু হাজার সেনা পাঠিয়েছেন। তারা মেহেরকুলের দিকে এগিয়ে আসছে। এখন তোমার কাজ হল, তাদেরকে এবং দাউদ খান ও আলী আকবরকে এই বারৃতা পাঠানো, তারা যেন আগরতলা আক্রমণ করে। আমরা তাদের অস্তিত্বহীন করে আমাদের বারোজন ভাইকে উদ্ধার করব ইনশাআল্লাহ।

বৃদ্ধ পরাগল খানের বজ্রকন্ঠ সকলের মাঝে বেশ উদ্দীপনা সৃষ্টি করল। উপস্থিত সকলে সমস্বরে ইনশাআল্লাহ বলে তার কথায় সায় দিলেন।পরদিন প্রত্যুষে ফজর নামাজান্তে পরাগল খান সেনাদের খোলা চিতুই পিঠা ও মলা মাছের ঝোল দিয়ে সকালের নাশতার ব্যবস্থা করলেন। তারপর কলা, পেঁপে ফলাহার এবং ডাব ও আখের রস দিয়ে আপ্যায়ন করলেন। তারপর ঢ্যাঁড়ার তালে দামামা বেজে উঠল। সৈয়দ আলফা হোসাইনী ও মীর গফুর খানের নেতৃত্বে অশ্বারোহী বাহিনী, ছুটি খানের নেতৃত্বে পদাতিক বাহিনী ও জাফর খানের নেতৃত্বে দুশো হস্তী বাহিনী উদয়পুরের দিকে রওয়ানা হল। পরাগল খান জোয়ারগন্জবাসী আল্লাহু আকবার ধ্বনি দিয়ে তাদের বিদায় জানালেন। ধুমঘাটে আগে থেকেই আকরাম খানের লোকজন প্রস্তুত ছিলেন, তারা সেনাদের ফণীনদী পারাপারের ব্যবস্থা করলেন।

দুপুরের দিকে খানবাহিনী বিলুনিয়া পৌছে গেল। দুপুরে খন্ডলে তারা হাফিজউদ্দিনের আতিথ্য গ্রহণ করলেন। তারপর জোহর নামাজান্তে তারা বিলুনিয়ার পথে রওয়ানা হলেন। বিলুনিয়া পার হয়ে উদয়পুরের দিকে আট মাইল পথ অতিক্রম করে পাহাড়ী মালভূমিতে তারা তাঁবু স্থাপন করলেন। এখান থেকে থেকে উদয়পুরে ত্রিপুরা রাজার প্রাসাদ স্পষ্ট দেখা যায়। ছুটি খান হুংকা দিয়ে বললেন, সেনারা! ইনশাআল্লাহ এই প্রাসাদের অধিকার নিয়ে আমরা ত্রিপুরা সেনাদের চিরকালের জন্য এই পাহাড়ী ভূমিতে দাফন করব।

সেনারা বজ্র কন্ঠে আল্লাহু আকবার ধ্বনি দিয়ে সম্মতি প্রকাশ করলেন।

তারপ তারা আসর নামাজ আদায় করে মাঠে ছড়িয়ে পড়লেন।

 

চলবে........

No comments

Powered by Blogger.