Header Ads

মীর সাহেবের সরাই ❑ সেলিম ইসলাম খান ❑ ধারাবাহিক উপন্যাস পর্ব_২২

 


মী সাহেবেরা

সেলিম ইসলাম খান

উপন্যাস

ধারাবাহিক পর্ব_২২  

সুমাত্রা, জাভা, পেনাং ও রেঙ্গুন পরিভ্রমণ করে আরব বণিক আলফা হোসাইনী চাটিগাঁ বন্দর ফিরে এলেন। জাহাজ বোঝাই সুমাত্রার লবঙ্গ, দারচিনি, এলাচ ও অন্যান্য পণ্যসামগ্রীতে বোঝাই তার চৌদ্দটি জাহাজ। চাটিগাঁ বন্দর নেমে তিনি মীর গফুর খানের সাথে সাক্ষাৎ করলেন। কুশলাদি বিনিময়ের পর তিনি সেনা ছাউনি পরিদর্শন করলেন। তারপর মধ্যাহ্ন ভোজ সারতে সারতে নসরতশাহ ও ছুটি খানের খোঁজ খবর নিলেন। ত্রিপুরা রাজার খন্ডল অভিযানের কথা শুনে তিনি বেশ আফসোস করলেন।

- আহ কপাল আহ! আমার ভাইরা রণে কাফের দের সাথে লড়াই করছে। আর আমি বাণিজ্যেতে গিয়ে দুনিয়াদারী নিয়ে মশগুল হয়ে আছি! কত বরকতময় জীবনের অধিকারী তারা, যারা কাফেরদের সাথে রণে লড়াই করে। আর হতাহত হয়! আমার ভীষণ ইচ্ছে মুসলিম ভাইদের সাথে কাফেরদের সাথে জিহাদে অংশ নেই, আর শাহাদাৎ বরণ করি। এমন বীরত্বের মৃত্যু আল্লাহর কাছে সবচেয়ে প্রিয়।

মীর গফুর খান বললেন, জনাব! আমিও অন্তরের এই টান অনুভব করি। কিন্তু বন্দরের এই দায়িত্ব আমার হাতপা বেঁধে দিয়েছে। এত কাছে থেকেও আমি তাদের পাশে যাওয়ার সুযোগ থেকে বন্চিত হয়েছি।

- আমার বেশ ইচ্ছে একবার তাদের সাথে সাক্ষাত করি। কলিকট যাওয়ার পথে আমি জোয়ারগন্জ নোঙর করব ইনশাআল্লাহ। বললেন আলফা হোসাইনী।

মীর গফুর খান বললেন, আপনি যদি অনুমতি দেন, আমিও আপনার সাথে জোয়ারগন্জ যেতে চাই। তাদের সাথে রণে কাফেরদের বিরুদ্ধে লড়তে চাই। বললেন মীর গফুর খান।

-ঠিক আছে, আপনার হৃদয়ের আকুতি আমি বুঝতে পারছি। তবে দ্রুতই বন্দরে ফিরে আসা ভাল হবে। কারণ মগহার্মাদরা ওত পেতে রয়েছে। সুযোগ পেলে তারা আবারও বন্দরে হামলা চালাতে পারে। আমরা হার্মাদদের কোন সুযোগ দিতে পারি না।

এমন সময় ছুটি খানের দূত এসে একটি বার্তা নিয়ে এলেন মীর গফুর খানের কাছে। প্রিয় বন্ধুর চিঠি পেয়ে মীর গফুর খান দেরি করলেন না। খুলেই পড়তে শুরু করলেন।

কুশলাদি পড়ার পর ছুটিখান তাকে আমন্ত্রণ জানালেন, মীর গফুর খান যেন জোয়ারগন্জ আসে।

চিঠি নিয়ে গফুর খান শিশুর মত আনন্দে উদ্বেলিত হলেন। আলফা হোসাইনীকে বললেন, দেখন, দেখুন, আমার বন্ধু আমাকে জোয়ারগন্জে আমন্ত্রণ জানিয়ে চিঠি লিখেছে।মুহতারাম, চিঠিতে একটি আশংকার খবরও আছে। ত্রিপুরার রাজা তিনসহস্র সেনা নিয়ে মেহেরকুলের ময়নামতি, কৌলাসশহর, গঙ্গামঙ্গল ও বিলুনিয়া দখল করে নিয়েছে। তারা সেখানকার বারোজন সুলতানের রাজকর্মচারিকে ধরে নিয়ে গেছে। মহামান্য পরাগল খান এখন যুদ্ধ প্রস্তুতি শুরু করে দিয়েছেন।

- মীর সাহেব! আপনার মনোবাসনা আল্লাহ শুনেছেন। আসুন প্রস্তুতি নিই। আমরা এই মহান যুদ্ধে আমাদের ভাইদের সঙ্গী হব ইনশাআল্লাহ। বলেই আনন্দে মীর গফুর খানকে আলিঙ্গন করলেন আরব বণিক সৈয়দ আলফা হোসাইনী।

ইতিমধ্যে হোসাইনী সাহেবের নায়েব ও মুহুরীরা পণ্য বিকিকিনি করে জাহাজে উঠেছেন। পরদিন ফজর নামাজ বাদ তারা জোয়ারগন্জ রওয়ানা হলেন। প্রত্যুষে আলফা হোসাইনী ও মীর গফুর খান এক হাজার সেনাসহ জোয়ারগন্জ সৈকতের কিছুটা দূরে জাহাজ নোঙর করলেন।আলফা হোসাইনী ও মীর গফুর খানেরা জাহাজ থেকে নৌকা যোগে জোয়ারগন্জ ঘাটে এসে নামলেন। ছুটি খান ও তার সাথীরা আগে থেকেই তাদের স্বাগত জানানোর জন্য জোয়ারগন্জ ঘাটে প্রতীক্ষায় ছিলেন। তারা ঘাটে নামলে ছুটি খান দুজনকে সালাম করে আলিঙ্গন করলেন। তারপর ছুটিখানের অনুরোধে আলফা হোসাইনী ও মীর গফুর খান ঘোড়ার গাড়িতে চড়ে খানবাড়ির দিকে রওয়ানা হলেন। আরব সেনারাও পদদলে বাড়িতে পৌছলেন। জোয়ারগন্জের সেনারা তাদের ডাবের পানি ও শিরনি দিয়ে আপ্যায়ন করলেন। দুপুরে ইলিশ মাছ আর শিমের তরকারী, আলুভর্তা ও আউশ ভাতের মাড়। খাবার শেষে খেজুর মিঠামাখা দই আর ফলফলারী দিয়ে মেহমানদারি করালেন। হোসাইনী ও মীর গফুর খান দূরদেশবাসী এই আত্মার আত্মীয়দের আন্তরিকতা ও মেহমানদারীতে অভিভূত হলেন। বিকেলে তারা ছুটি খান ও দুলাল দাসের সাথে জোয়ারগন্জ ঘাট, ধুমঘাট, সোনাপাহাড় ঘুরে দেখালেন। জোয়ারগন্জ খানমসজিদে মাগরিব নামাজ পড়ে তারা ত্রিপুরা বাহিনীর হাত থেকে অধিকৃত এলাকা উদ্ধার ও বন্দীদের মুক্ত করার কলাকৌশল নিয়ে রুদ্ধ দ্বার আলোচনা সভায় বসলেন। সভাটি আমীর পরাগল খান আগেই আয়োজন করেছিলেন। আলোচনার মাঝে সকলের মাঝে চালের মিষ্টি লাড্ডু বিতরণ করা হল।

 

চলবে........

No comments

Powered by Blogger.