Header Ads

অলীক স্বপ্ন _ অনিন্দ্য আকাশ

অলীক স্বপ্ন

................✏

অনিন্দ্য আকাশ

অনেকদিন হয়ে গেল চশমার পাওয়ারটা

ঠিক কাজ করছে না।

ইদানীং বইয়ের অক্ষরগুলোও

কেমন যেন দিন-দিন ছোট হয়ে যাচ্ছে।

ছেলেকে বলেছিলাম,

বলল এই বন্ধের দিনে নিয়ে যাবে।

এখন শরীরটা আর একা চলতে চায় না।

আমার বয়সের বিকেল যে ফুরিয়ে আসছে,

তা আমি ঢের বুঝতে পারছি।

মানুষের বয়স হলে যে--

স্বাভাবিক বোধ লোপ পায়,

তা আমি বুঝতে পারলাম সেইদিনই।

যেদিন বৌমা আমাকে শুনিয়ে শুনিয়ে,

আমার নাতনিকে গালমন্দ করল।

আসলে দোষটাই বা তাকে দিই কি করে!

এই বুড়ো শরীরের প্রসাবে যে তীব্র গন্ধ হয়!

আর সেটা যদি আমি প্রায়ই জল ঢালতে ভুলে যায়,

তবে সেই বা কি করে সহ্য করবে!

তবে অনুরাধা আমার জন্য দাসীর মতো--

খাঁটছে বলে বাঁচা!

না হলে হয়ত কবেই আমাকে_____

এই তীব্র গন্ধটা আমার খুব চেনা।

কতদিনই বা হবে?

এইতো বছর পঁয়তাল্লিশ আগের কথা।

এখনো আমি চোখ বুঝলেই যেন,

সদ্য ভার্সিটি পড়ুয়া ছাত্র হয়ে যাই।

বাবা অনেক আশা নিয়েই আমাকে,

পড়াশোনা করতে ঢাকাতে পাঠিয়েছিলেন।

কিন্তু আমিই যে তার সব আশার নিরাশা হব,

তা তিনি ঘুণাক্ষরেও বুঝতে পারেন নি।

বাবা আমাকে কখনো কোনো কিছুর অভাব দেন নি।

যখন যা চেয়েছি, তাই পেয়েছি।

আমার সেই কথাটা এখনো কানে বাজে!

বাবা আমাকে বলতেন,

"কে কি চাকরি করছে,

সেটা নিয়ে ভাবতে হবে না।

চাকরির বয়স পেরোবার আগেই,

একটা সরকারী চাকরি তোমাকে পেতে হবে"

কে শুনে কার কথা?

তখনও আমি আঠাশ বছরের কর্মহীন যুবক!

বাবার টাকায় তখনও--

আরাম আয়েশ করে দিন কাটাচ্ছি!

তখন কি আমি উপলব্ধি করতে পেরেছিলাম যে,

পূর্বদিকে উদিত সূর্যও একদিন,

পশ্চিমে অস্তমিত হয়!

বাবা যেদিন চলে গেলেন,

সেদিন থেকেই মা একদম নিশ্চুপ হয়ে গেলেন।

তারপর মাও একদিন____

পড়ে রইল বাবার দেখা,

ছেলের "সরকারি চাকুরীর" স্বপ্ন!

বাবা চলে যাওয়ার পর,

নতুন একটা পৃথিবী দেখেছিলাম আমি।

বুঝতে পেরেছিলাম,

বটবৃক্ষ যখন উপড়ে যায়___

ক্ষররৌদ্র তার তাপদহ দ্বিগুন করে দেয়।

কিছু বছর আগে নীলাদ্রির সাথেও কথা হয়েছিল।

শুনেছিলাম নাকি আর বিয়েই করে নি।

পৃথিবীতে এই একটা মানুষই আমাকে,

নিঃস্বার্থ ভালোবেসে গেছে।

কিন্তু সব জেনে বুঝেও,

তাকে অবহেলা করার অভিনয় করতে হয়েছিল।

ভালোবাসার মানুষকে হারানোর চেয়ে বোধ হয়,

ভালোবেসেও তাকে অবহেলা করাটা বেশি কষ্টের।

তবে অনুরাধা আমার জীবনে সময়মতো না এলে হয়ত,

সময়ের স্রোতে ভেসে যেতাম সেই কবেই!

আমার দুঃসময়ের পথ চলার সাথি সে।

একবার আমি যখন জীবন মৃত্যুর সন্ধিক্ষণে ছিলাম,

সেদিন আমি তার ছলছল ক্লান্ত চোখের দিকে তাকিয়ে বুঝেছিলাম,

আমি একজন অর্ধাঙ্গী নয়, তাকে আমার পুরোটাই পেয়েছি।

বুঝেছিলাম, শুধু নারী নয়, একজন দেবী!

একবার নীলাদ্রির কথা ওকে বলতে চেয়েছিলাম

পরে আর বলা হয়ে ওঠিনি

ভেবেছিলাম , যার সাথে ঘর বাঁধাই হলো না,

তাকে নিয়ে অযথা পুরনো কথা তুলে __

সংসারে অশান্তি বাড়ায়ে লাভ কী।

বাবার শখ করে গড়া আসবাবপত্রগুলো,

মুখ গোমড়া করে আমার দিকে চেয়ে থাকে।

অথচ বাবা যখন ছিলেন,

তখন এগুলোর উপর,

কিঞ্চিত ধুলোবালিও জমতে দেন নি।

বাবার রেখে যাওয়া সেই ভাঙ্গা হারিকেনটা,

আমার শোবার পাশেই ঝুলিয়ে রেখেছি।

এটা আমি একবার ফেলে দিয়েছিলাম বলে,

আমাকে বেদম প্রহার করেছিলেন।

আমাকে উনি বলতেন,

"ভাঙ্গা কুলা ছাই ফেলতেও লাগে"

চশমার পাওয়ারটা ঠিক করে আনতে পারলে,

অক্ষরগুলো ভালো দেখতে পারব কিনা জানি না!

তবে বাবা বেঁচে থাকাকালে,

তার "সরকারী চাকুরীর স্বপ্ন"__

পূরণ করতে না পারাটা,

আমার মনকে সেই আঠাশেই__

অন্ধ করে দিয়ে গেছে।

এখন আর কি?!

শুধু অন্তিমকালের দিকে পথ চেয়ে থাকা।


No comments

Powered by Blogger.