Header Ads

ভুতের বাড়ি


ভুতের বাড়ি

তানজিমের তখনও জন্ম হয়নি।তার মায়ের উদরে ৩০ সপ্তাহ। চন্দ্রার এক কাপড় কলে আমার চাকুরি।কারখানার পাশের গ্রাম পানিশাইল।ঐ গ্রামের একবাড়িতে আমরা ভাড়া থাকতাম।
ঢাকার নিজেদের বাড়িতে মাসে ২/৩ বার আসা যাওয়া হতো।একবার কী কারণে যেন ঢাকা থেকে পানিশাইল যেতে অনেক রাত হয়ে গেল।
ঐ গ্রামে একটা ভুতের বাড়ি ছিল।পাঁচ তলা দালান।কেউ থাকে না।কিন্তু অনেকেই ঐ বাড়িতে রাতের বেলা আলো দেখেছে।সামনে ইয়া লম্বা ২টা তালগাছ ছিল। ঐ তালগাছ নিয়ে ও মানুষের মাঝে নানা গুন্জন ছিল।
সেই রাতে জিরানি বাজার যখন বাস থেকে নামি তখন রাত ১২ টা।শুনশান নিরব চারিদিক।আমার সাথে অন্তঃস্বত্তা স্ত্রী।
বাসস্ট্যান্ডের একটা বেঞ্চিতে অনেকক্ষণ বসেছিলাম এই আশায় যে,সঙ্গীসাথী কাউকে পেলে একসাথে গ্রামে ঢুকব।কিন্তু না কাউকে পেলাম না।অগত্যা দুজনে হাত ধরাধরি করে রওয়ানা।
ঐ ভুতের বাড়ি টার জন্যই গা ছমছম করছিল।ওটার সামনে দিয়ে যাওয়া ছাড়া আর কোন রাস্তাও আমাদের জানা নেই।
যেখানে বাঘের ভয়,সেখানেই রাত হয়।আমাদের বেলায়ও তাই হলো।ভুতের বাড়ির সামনে এসে আমাদের চোখ ছানাবড়া। ভুতের দুই পা দুই তালগাছের মাথায়। সাদা ধবধবে পোশাক পরা।আমার স্ত্রী আরও শক্ত করে আমাকে ধরে থাকলো।আমরা হাটতেই থাকলাম।কারণ,পেছনে ফেরার পথে দেখলাম আরও একজন দাঁড়ানো। আমার নিঃশ্বাস বন্ধ হয়ে আসছিল। পা কাঁপছিল। দ্রুত হেটে বাসায় এসে আলো জ্বালানোর আগ পর্যন্ত মনে হচ্ছিল এই বুঝি ভুত ঘাড় মটকায়!
কোথায় ভুত?আসল কথা হলো-আমরা দুজনের একজনও ভয় পাইনি। এতক্ষণ যেগুলো বললাম সেগুলো ছিল ভুতের বাড়ি নিয়ে লোকের মুখে শোনা কথাগুলোর সাথে কল্পনার মিশ্রণ।আমার স্ত্রী শক্ত করে আমাকে ধরেছিল পড়ে যাওয়ার ভয়ে।সে তখন অন্তঃস্বত্তা।
ভুতের ভয় আমরা জয় করেছিলাম অনেক আগেই। বিশেষ করে আমাদের বিয়ের প্রথম দিকের দিনগুলো আমরা কাটিয়েছি গাজীপুরের চন্দ্রা ও কালামপুর এলাকায়--মাইলের পর মাইল শুধু ভাওয়ালের গজারি বন।কত জোছনা রাতে আমরা হেঁটেছি গজারি বনের ভেতর দিয়ে যাওয়া রাস্তায়।ভোরের আলো ফোটার অনেক আগেই আমাদেরকে গোসল করতে হতো বনের ভেতরের একটা পুকুরে।পুকুর পাড়ে ছিল বাগডাস আর শেয়ালের আনাগোনা। অনেক চেষ্টা করে ও ভুত দেখিনি কখনও।
তবে ঐ পাঁচ তলা বাড়ির নির্মান এবং কেউ বাস না করার বিষয়টি আমার কাছে আজও রহস্য।

মোঃআবদুল হাই

No comments

Powered by Blogger.