নামের বাহার এবং কিছু কথা
নামের বাহার এবং কিছু কথা
সৃস্টির আদি হতে মানুষের নিজস্ব পরিচয় থাকার জন্য জন্মের পর পরই নাম রাখার প্রচলন ছিল। সেই প্রচলনের প্রয়োজনীয়তা অনস্বীকার্য। নাম না থাকলে কি বলে সম্বোধন করা যাবে! শিশু ভূমিষ্ট হবার আগেই মা বাবা, পরিবার সম্ভাব্য কিছু ভালো নাম সিলেক্ট করে রাখেন। ছেলে ও মেয়ের নাম গুলো যার যার ধর্ম ও রীতি অনুযায়ী সৌন্দর্যমন্ডিত থাকে। কেউ বা ঘটা করে নামের অনুষ্ঠান করে, আকীকা করা হয়। সেটাই স্বাভাবিক এবং সেই পথ ধরে চলে আসছে এই নিয়ম। নবজাতক/ নবজাতিকার শুরু হয় নতুন পরিচয় নিয়ে পথ চলা।
প্রসংঙ্গ তো নাম! ভাবছেন এটা আবার একটা টপিক হলো নাকি? হ্যাঁ এটাই এখনকার ভার্চুয়াল জগতে বিরাট টপিক। আগে শুনেছি কোন কোন বিখ্যাত লেখক/ লেখিকা ছদ্মনামে লিখতেন। সেটা খুবই ভালো ছিলো। এক সময় তাদের পরিচয় পাওয়া যেতো। কারো কারো নাম অনেক লম্বা থাকে। সেটা আশি নব্বই শতকে ও ছিলো। আরবীরা লম্বা নাম রাখে এবং সেগুলো পড়তে গিয়ে রীতিমত অবাক হতাম। কারো নামের সাথে গ্রামের নাম যোগ হতো। কেউ কেউ আবার নিজেই একটা নাম জুড়ে দিলেন। সে গুলো বিভিন্ন দেশে বিভিন্ন রীতিতে নামের বাহার চলে আসছে এবং থাকবে।
বর্তমান যুগে সংক্ষিপ্ত নামের প্রচলন বেশী। এক হাত লম্বা নাম সংক্ষেপ করে ডাকা হয়। আবার নতুন প্রজন্মদের নাম খুবই তাৎপর্যময় ও সংক্ষিপ্ত রাখার পথেই চলছে দেশ, সমাজ। সেটাই উচিত এবং সাধুবাদ জানাই।
কিন্তু দুঃখ অন্য জায়গায়! কিছু কিছু নাম দেখি ভার্চুয়াল জগতে যা দেখে রীতিমত ভীন খেতে হয়। ফেইজবুকে আবার নানান নামের আইডি থাকে যা দেখে কারো বুঝার উপায় নেই জেনডার কি? ফ্রেন্ড রিকুয়েস্ট আসলে স্বাভাবিক এসব লকড আইডি বিভ্রান্তির সৃষ্টি করে। বলতে পারেন এটা যার যার পার্সোন্যাল ম্যাটার। হ্যাঁ তা তো বঠে! মাঝে মাঝে বুঝার উপায় থাকেনা লাইক কমেন্ট কাকে বা কারা করছেন , পুরুষ না মহিলা ?
আবার নতুন প্রজন্মের কিছু অংশ ঝুঁকছে নামের অস্বাভাবিক রুপ দিয়ে। যেমন ধরুন বাবা মার দেয়া নাম ছিলো জায়েদ আহমদ, ছেলেটি সেটা বদলে রেখে দিলো স্মার্ট জায়েদ! কিংবা নীল আকাশ, ফটোশ্যুটার রাকিব, নীল নীলিমা, অশান্ত অনিকেত, জ্যাকব মিল্টন, স্মাইলি ক্যাকটাস, জীবনের রং, বেদনার বালুচর, মনের গহীনে,টনি পিয়াল, উদ্বাস্তু মিথুন, লিরিক লিজা, অচিন মন , বুনো ফুল, স্নিগ্ধ মন , বুনো হাঁস , সারপ্রাইজ সাবু ! আহা রে! আহা রে! এই নামের বাহারে হারিয়ে গেলো নামের ঐতিহ্য। মাঝে মাঝে ভিমরি খেতে হবে এসব নামের রহস্য ভেদ করতে না পারলে।
আসুন এসব অপসংস্কৃতি থেকে বেরিয়ে আসি। মা বাবার দেওয়া নাম নিয়ে বেঁচে থাকি। প্রয়োজনে নিজের ভালো কাজের মাধ্যমে নিজের নামকে বিখ্যাত করে তুলি। ভালো কাজ , সততা ও নিষ্টা আপনাকে আমাকে বাঁচিয়ে রাখতে পারে মানুষের মনে। কিছু নাম ঘৃণার সাথে মানুষ স্মরণ করে যেমন : মীর জাফর .....। আসুন নিজের নামের যত্ন করি , ভালো কাজে সময় কাটাই। প্রোফাইলে নিজের ছবি , নাম , পরিচয় থাকলে কি অসুবিধা আছে? একের অধিক প্রোফাইল করা আর নামের বাহারে যেন হারিয়ে না যাই।
জীবন খুবই ছোট। এ জীবন টা কে সঠিক ভাবে কাজে লাগাই। নাম বিভ্রান্তি হতে দূরে থাকি। আমার লেখাটির সাথে একমত পোষন করা না করা সবার ব্যক্তিগত ইচ্ছা। ভালো থাকুন , নিজের আসল নাম টুকু নিয়ে বেঁচে থাকুন। বাবা মা কে সম্মান করে ঐ নামেই স্থির থাকা চাই।
Shamsun Fouzia
New York ,USA .
No comments