অচল সমাজ ব্যবস্থা _ শাহ সাবরিনা মোয়াজ্জেম
অচল সমাজ ব্যবস্থা
মেয়েদের ছোট বেলা থেকেই নাজেহাল হতে হয়। বমি ধরা কষ্টের ক্ষত গুলো জীবন ভর বয়ে বেড়ায়। যখন পাঁচ বছরের শিশু তখন কোলে নেয়ার নামে আদরের নামে বিভিন্ন স্পর্শ কাতর অঙ্গ গুলো ছুঁয়ে যায়। একটা পাঁচ, ছ-বছরের শিশুর তা ভুলে যাওয়ার কথা নয়।
যখন কোনো বৃদ্ধ লোক, সম্পর্কে নানা দাদা যা ই হোক আদরের ছলে নয়তো হেয়ালীপনায় নানা বিশ্রী রসালো কথা বলে, যা মেয়েটার মনে দাগ কেটে যায় সারাজীবন। বৃদ্ধ লোকটি কিন্তু জিহবার তৃপ্তি মেটাচ্ছে,চোখের তৃষা মেটাচ্ছে। কাউকে বললে বলে, দাদা নানারা একটু দুষ্টুমি করেই। অতো কথা বাপু, ধরতে নেই।
দশ বারো বছরের বয়সটা কাল হয়ে দাঁড়ায়। সেই ছোট বেলা থেকেই কখনো আত্মীয়,কখনো ঘরে রাখা টিচার, কখনো ঘরের হুজুর, কখনো দুলাভাই গোচের আত্মীয় গুলো এই সুযোগ গুলো নিয়ে থাকে। কখনো কিছু মেয়ে আমলে তাৎক্ষনীক নেয়না কখনো কিছু মেয়ে হতাশায় নিমুজ্জিত হতে থাকে।
যতো বয়স বাড়ে এই কষ্ট গুলো মাথা চাড়া দিয়ে ওঠে। তারপর প্রেম, শতকরা ১০% প্রেম সার্থকতায় আসে বাকি ৯০% প্রেম অসার্থক হয়। এখানে নারীর চরম মুল্য দিতে হয় প্রেমিক কে হারাবার ভয়ে। মন চাইলো কি চাইলোনা তা বড় কথা নয়। প্রেমিকা চাইলো কি চাইলোনা বড় কথা নয়, "তোমার আমার বিয়ে তো হবে ই!" কিন্তু প্রেমিকের কাছে আত্মসমর্পন করতেই হয়! কারণ এখানে মন কাজ করে বেশী। দেখা গেলো ব্রেকাপ সব ডিশমিশ। কিংবা গার্ডিয়ান রাজি নয়! নয়তো প্রেমিকের প্রতারণা।
প্রেমের বিয়ে না হলে,নারীর জন্যে এটা কাল হয়ে দাঁড়ায়। সারাজীবন ভোগ করতে এই গোপনীয় অপমান।
তারপর শুশুড় বাড়ি, এই যে একটা বাড়ি এই বাড়িতেও গুপ্ত ঘাতক লুকিয়ে থাকে। যেখানে নারী না পারে বলতে না পারে সইতে! এখানেও কোনো কোনো নারী নিগৃহীত হতে থাকে। কার কাছে বলবে। (সাধারণ মধ্যবিত্ত, নিম্ন মধ্যবিত্ত বা গরীব) গরীব হলে তো কোনো কথা ই নেই। "গরিবের বউ মানে সবার ভাবী, একেবারে চাল আর ডালের খিচুড়ি! "
তাই সারা জীবনের গ্লানী বয়ে নারীকে কবর অবধি যেতে হয়। পাপ পুণ্যের হিসাব তার ই দিতে হয়। নারী অবলা নয়। সমাজ নারীদের অবলা বানিয়ে রাখে। জীবনের শুরুর তকমা ই শুরু হয় এটা করোনা,ওটা করা যাবেনা। বাড়ি থেকে বের হওয়ার সময় হয় বোরখা নয়তো হিজাবে মুড়িয়ে দেয়া হয়। হিজাব তো তনুও পরতো, নুসরাত বোরখা হিজাব সব ই পরতো কই তারা কি বাঁচতে পেরেছে! নাহ পারেনি! আর বর্তমান সমাজে বোরখার যা অবস্থা, হিজাবের যা নমুনা। এর চেয়ে শালীনতায় ঢাকা সালোয়ার কামিজ কি ভালো নয়। কই, হিজাবী নারীর কি ধর্ষন হয়নি,ঘাতকের হাতে মৃত্যু হয়নি!
যা বলেছিলাম, বাড়ি থেকে বের হবেনা। কখনো বাবার শাসন, কখনো ভাইয়ের শাসন, কখনো ছেলের শাসন। এভাবে ই ভেঙ্গে পরে নারীর মেরুদণ্ড! দুর্বল আপন ঘর থেকে হয়ে ই, বের হয় নারী । তাই ঘরে,বাইরে, রাস্তায়, হাজারো মানুষের ভীড়ে ও নারী কখনো নিরাপদ নয়।
এখন কি করা উচিত বলে দাও নিঠুর মানুষ ও নিঠুর সমাজ। কিছু হলে এতো উত্তাল হচ্ছো কেনো! কেনো এতো প্রতিঘাত, প্রতিবাদ! (আজ আমিও এক কাতারে দাঁড়িয়ে করছি) আজ নারীকে নারী না বানিয়ে মানুষ বানাতে কিংবা ঘরের ছেলেটিকে পুরুষ না বানিয়ে মানুষ বানাতে তবে এতো নিগৃহীত নারীর হতে হতোনা।
ক্ষমা নেই তোমাদের ক্ষমা নেই!
শাহ সাবরিনা মোয়াজ্জেম
No comments