Header Ads

প্রিয় সরোবর _ শামসুন ফৌজিয়ার লেখা চিঠি

প্রিয় সরোবর

গ্রীষ্মের প্রখর দাবদাহে মাঠাঘাঠ ফেটে চৌচির, ঝিমধরা দুপুরে হঠাৎ মাথার ওপর দিয়ে কা কা রবে চলে যাওয়া কাকপক্ষীর বচনে অজানা শংকায় এই মন কেঁপে উঠলো। এতই বিরাণ প্রান্তরে তাহলে সরোবরের পদ্ম ফুটবে তো? আশা দূরাশার চাদরে ঢাকা দোদূল্যমান মন! প্রশ্নে জর্জরিত তনুমন তাহলে পদ্মের কী হবে?
হে সরোবর তোমার বুকে জল থাকুক বা না থাকুক পদ্ম ফুটবেই, গুচ্ছ গুচ্ছ পদ্মেরা দেখো মাথা উঁচু করে খিলখিল করে হাসছে।সরোবরের বুকে নীলাচলের সবটুকু নীল মেখে পদ্মেরা প্রচণ্ড খরায় ও ফুটবে শুধু ভালবেসে । এই যে প্রেম তা কি এতই টুনকো? জলহীন সরোবরের গভীর প্রদ্দেশে দেখো পদ্মেরা জলক্রীড়ায় রত।
কেমন আছো আমার বিহারী কম্পন আর সুখতারার ঝলসানো প্রদীপ্ত?তোমার বুকে দেখো বইছে যমুনার অথৈ জলরাশি! সেই জলে আমার অন্তর মন ছুঁয়ে ছুঁয়ে যায়! বারে বারে শিঞ্চিত হই, আপ্লুত হই ! এ যে গভীর মায়া! এই রসের ধারায় তোমার বুকে পদ্মেরা পাগলপারা!সুখ খোঁজে তোমাতেই শুধু তোমাতেই!
ওগো আমার শান্ত কুচলা নীরের সরোবর! কেমন আছো এই দাবদাহে? আজকাল শুধু পোড়ে আর পোড়ে! দাবানলে পোড়ে ছারখার হয় সবুজ মাইলের পর মাইল! তুমি জানো আমার প্রদীপ্ত তুমি জানো? কেউ পোড়ায় আর কেউ পোড়ে বেশ!জেগে ওঠে দুঃখ ক্লেশ আর বিনিদ্র আঁখি । এই পোড়াপোড়ির গন্ধে কোথায় হারাই! তাইতো আমার পরম বিহারী নন্দনের চন্দন তোমার বুকে খুঁজে নিয়েছি আমার পরম শান্তির ঠিকানা।
তুমি কেমন আছো আমার হৃদয় বিহারী মায়াবন? তোমার বুকে বয়ে চলা বর্ষার কূল কূল শীতল বারিতে আমার অবগাহন! আমি টুপ টুপ করে ঘোমটা বউর মত ডুব দিয়ে দিয়ে যাই! আমার এই আনন্দ জাগে মর্ত্যে জাগে সরোবরের হৃদয়ে জাগে বিশ্ব আনন্দলোকে! ছড়িয়ে দেবো মোরা সেই আনন্দ সকল আশাহতের প্রাণে! বিলিয়ে দেবো দুহাতে যতটুকু মোদের সাধ্যে থাকা নীলাচলের নীল! পারিজাতের কেশর! গন্ধহীন তোমার পদ্মের অপরুপ মায়াবী চাহনী! হৃদয়ের লুক্কায়িত চন্দন সুরভী!
আমার মিষ্টি রবে বয়ে যাওয়া শীতল জল! আমার মোহনীয় সুখের আবেশ! ভয় নেই বর্ষায় তোমার বুকে যেমন পদ্মেরা ভাসবে তেমনি সমান ভাসবে খরায়! জলশূণ্য হলেই কী মনশূণ্য হয়?
আমার সোনালী স্বপ্নের সরোবর! তুমি যে হিরো তুমি যে রোদ্দুর ! আমার পূর্নিমার জোছনা !তোমার বুকে লক্ষ আলোর নাচন। তোমার গগনবিহারী হৃদয় মাজারে খুঁজে পেয়েছি শান্তির অভয়ারণ্য ! যেখানে শুধু সবুজ আর সবুজ ! সারি সারি দেবদারু মাথা উঁচু করে দাড়িয়ে! আমাদেরকে দেখে আর খুশিতে দুটো পাতা ঝরায় মাটিতে!
কেমন আছো আমার প্রদীপ্ত রবি?তুমি যে সুরের আগুন জ্বালিয়ে দিয়েছ তা শুধু হাসে ! হেসে কুটিকুটি হয়ে ঢলে পড়ে পত্র পল্লবে । আমার হিয়ার মাঝি আমার ষোড়সী পুস্পের চন্দন! আমার খোলা হাওয়া আমার দখিনা ! তুমি কি জানো সরোবর তুমি কী জানো ? তোমার বুকে ফুটে ও তোমাকে পাবার জন্য ব্যাকুল তব হিয়া! আমার অধরাপরশ আমার হৃদয় বিহারী! দূর হতে দেখে দেখেই ক্লান্ত শ্রান্ত পান্থ হবে এই পদ্মের অধর!
আমার রাশি রাশি আলো আমার ভাবের পাল আমার সকল গানের সুরধারা! ভালো থেকো জলহীন বা জলযুক্ত সব সময়ে। তোমার জলে শ্যাওলা যত আমি সাফ করে নেবো ! অক্টোপাস কিছুই করতে পারবে পদ্মের! তবু ও সরোবরে পদ্ম ফুটবে মাথা উঁচু করে!
আমার পূন্জীভূত মেঘমালা আমার হৃদয়ের মধুর তপোবন আমার বিলাসী সরোবর আজ এই পর্যন্ত ! আমার হৃদয়ের আকিঞ্চন জমাট শুদ্ধ পুস্প রেনু সব তোমার বুকে ঠাঁই দিও!
ইতি সরোবরের বুকে জেগে থাকা পদ্ম।
Shamsun Fouzia
10/30/ 2020

No comments

Powered by Blogger.