Header Ads

সিঙ্গাপুরে একখন্ড বাংলাদেশ

 

সিঙ্গাপুরে একখন্ড বাংলাদেশ 

দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার মধ্যে একটি কাঙ্ক্ষিত এবং  স্বপ্নের দেশ সিঙ্গাপুর। দেশটি আয়তনে বাংলাদেশের একটি জেলা বা তার চেয়ে একটু কমই হবে কিন্তু   অর্থনৈতিক বিশ্ব বাজারে ব্যাপক গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখছে এই ছোট্ট সিঙ্গাপুর।

স্বপ্নের এই সিঙ্গাপুরে কাজের সন্ধানে বাংলাদেশের হাজার হাজার বেকার যুবক পাড়ি জমায় প্রতিনিয়ত। বর্তমান করোনাকালীন বিশ্ববাজারে সর্বত্রই মন্দা বিরাজ করতেছে। কিন্তু এক সময় মনে করা হতো সিঙ্গাপুরে যাওয়া মানেই বেকারত্ব দূর। সিঙ্গাপুরে কাজের নেই কোনো অভাব। শুধু কাজ আর কাজ। এখানে কাল ছাড়া কেউ জেন কিছু বুঝে না। বাংলাদেশি শ্রমিকদেরও রয়েছে ব্যাপক চাহিদা। শুধু চাহিদা নয়বাংলাদেশিদের সুনামও রয়েছে বেশ ভালো। আর সিঙ্গাপুর মানেই অর্থ উপার্জনের একটি দেশ।

লেখাপড়া করা অবস্থায় মানে ছাত্র জীবনে সিঙ্গাপুরের ইতিহাস ঐতিহ্যের কথা শুনতাম আর আফসোস করতামইস এতো সুন্দর একটি দেশে যদি কখনো যেতে পারতাম! সিঙ্গাপুরে জব করবো এমন চিন্তা মাথায় কোনদিন আসে নি। বিধির কি লীলা! বিধাতার অপার মহিমায় আজ আমি সিঙ্গাপুরে জব করছি। সিঙ্গাপুরে জব করার চিন্তাই যেখানে আমার মননে ছিলনাসেখানে কিভাবে সিঙ্গাপুরে এলামএটি একটি দীর্ঘ কাহিনীএ কাহিনী আর একদিন বলবো।

যাই হোক এই সিঙ্গাপুরে বাংলাদেশিদের একটি আলাদা পরিচিতি রয়েছে। সিঙ্গাপুরি নাগরিকদের চিন্তায় বাংলাদেশিরা খুব ভালো শ্রমিকএরা (বাংলাদেশি) কাজে কোনো ধরনের ফাঁকি দেয় না। সময়ের কাজ সময়েই শেষ করার সুনামও রয়েছে বাংলাদেশিদের। তবে ইদানীং বেশ কিছু অসৎ লোক দুর্নাম করেছে। যেমন অহেতুক মামলা মোকাদ্দমা করেযা এদেশের লোক মোটেই পছন্দ করে না। সিঙ্গাপুর প্রবাসীরা কাজে ব্যস্ত থাকেন পুরো সপ্তাহ। কিন্তু একটু সময় পেলেই ছুটে আসেন দেশটির প্রাণকেন্দ্র মোস্তফা সেন্টার ও আশপাশ এলাকায়। স্থানটি বাংলাদেশি প্রবাসীদের কাছে মোস্তফা প্লাজা নামে পরিচিতঅনেকের কাছে টেক্কা নামেও পরিচিত।  

সাপ্তাহিক বন্ধের দিন রবিবার এবং সরকারি বন্ধের দিন অনেকেই মোস্তফা প্লাজায় যায়দরকারী কোন জিনিস কিনতে কিংবা বন্ধুদের সাথে দেখা করতে। একদিন এক সহকর্মী মোস্তফা থেকে আসার সময় একটি পত্রিকা নিয়ে আসছে। বাংলা পত্রিকা,স্বভাবতই চোখ আটকে গেল সেখানে। পত্রিকাটি হাতে নিলামদেখলাম পত্রিকাটি সিঙ্গাপুর থেকেই প্রকাশিত হয়। সিঙ্গাপুর থেকে বাংলায় পত্রিকা ছাপা হয়এটা ভাবতেই মনটা আনন্দে ভরে গেল। লেখালেখির অভ্যাসটা আগেই ছিলকাজেই  মনস্থির করলাম আগামী রবিবার যাবো পত্রিকা অগিসে। যেই কথা সেই কাজসম্ভবত ২০০৯ সালে কোন এক রবিবার দিবাশ্রমের বাংলার কণ্ঠ পিত্রিকা অফিসে গেলামকথা হলো প্রিয় সম্পাদক মহসিন ভাইয়ের সাথে। উনি খুব আন্তরিকতার সাথে আমাকে গ্রহণ করলেন। শুরু হলো দক্ষিণ পূর্ব এশিয়ার একমাত্র বাংলা পত্রিকা বাংলার কণ্ঠে নিয়মিত লেখা। 

এই দিন আমার মোস্তফা প্লাজায় আসা প্রথম দিন। কোন এক সহকর্মীর সাথে এসেছিলাম। মোস্তফা সেন্টারের আশপাশের রোবাটস লেনসৈয়দ আলওয়ী রোডডেস্কার রোডরয়েল রোডকেজি কাপুর রোডসেরাঙ্গুন সহ কয়েকটি এলাকায় বাংলাদেশি প্রবাসীদের সবচেয়ে বেশি আনাগোনা থাকে। বিকাল হলেই শুরু হয় উপস্থিতি। সন্ধ্যা হওয়া মাত্রই বাংলাদেশিদের উপস্থিতি বেড়ে যায়। দেখা হয় প্রবাসী একে অপরের সঙ্গে। 

বিশেষ করে সাপ্তাহিক ছুটি রবিবার দিন উপস্থিতি এমন হয় যেন বাংলাদেশের কোনো ব্যস্ততম এলাকা বা কোনো বার্ষিক মেলা। আর এতে অনেকটা বাংলাদেশিদের মিলনমেলায় রূপ নেয় মোস্তফা সেন্টার ও আশপাশ এলাকায়। যেদিকে তাকানো যায় সেদিকেই শুধু বাংলাদেশি আর বাংলাদেশি। শুধু তাই নয়আশপাশ এলাকায় বাংলাদেশি বিভিন্ন পণ্যের দোকানখাবারের হোটেলসহ নানা ধরনের দোকান রয়েছে। এমনকি বাংলাদেশি মোবাইল কোম্পানির টাকা লোডবিকাশসহ সব সুযোগ-সুবিধা পাওয়া যায় এই এলাকায়। এখানকার দোকানিদের মধ্যে বেশিরভাগই বাংলাদেশি। কিছু চাইতেই বুঝে যান বাংলাদেশি। আর শুরু হয় বাংলায় কথা বলা। দুই একজন ছাড়া সবাই বাংলায় কথা বলাবলি করছেযেন  অন্য ভাষাভাষীর লোকজন নেই বললেই চলে। এ যেন সিঙ্গাপুরের বুকে এক খণ্ড বাংলাদেশ।

বিঃদ্রঃ আর্টিকেলটি  ২০০৯ এর লেখাআজকে সামান্য  সংযোজিত করে লেখা হলো।  

মোহাম্মদ সহিদুল ইসলাম


No comments

Powered by Blogger.