একটা গাউনের গল্প _ শাহ সাবরিনা মোয়াজ্জেম
একটা গাউনের গল্প
___________________
গাউন বানিয়েছিলাম টিস্যু কাপড় দিয়ে। সোনালী গাউনে আমি অনেক সুন্দরী। একদিন দাওয়াত পেলাম। উপলক্ষ বিয়ে। বাচ্চা দুটো খুব ছোট। স্বামীকে বললাম আমি গাউন ছাড়া ওই বিয়েতে যাবোনা। কারণ আমি ভিন্ন মেজাজে ভিন্ন আমেজে সব জায়গায় যেতে চাই। তাছাড়া শিল্পী হিসেবে আমার অন্য রকম কদর। আমার চেয়ে ভিন্ন অন্য কেউ হলে হবেনা।তুমি কিন্তু ভালো করে ই জানো।
স্বামী বললো দেবো ই দেবো। এক সপ্তাহ হয়ে গেলো কিন্তু গাউনের খবর নেই। রাতে বিরামহীন কান্না। কান্না কাটি দেখে স্বামী তিন দিনের ছুটি নিয়ে আমাকে নিয়ে নদী পথে চাঁদপুর থেকে রওয়ানা হলো ঢাকায়। রাতের লঞ্চে কেবিনে।
কেবিনে শুয়ে শুয়ে ভাবছি গাউনের কাপড় কেমন হবে। চুলের কাট তখন বয় কাট। ভীষণ মাইগ্রেনের ব্যথা তাই চুল ছোট। গাউনের সাথে নিশ্চয় হ্যাট লাগবে।
গয়নার কথা ভাবছি গলায় লং মালা, হাতে গোল্ডেন ব্রেসলেট, গোল্ডেন একটা পার্টি ব্যাগ। আর নাহ আর কিছুই নাহ। শুধু এক পায়ে একটা গোল্ডেন পায়েল। স্বামী বলে অতো কি ভাবছো! নাহ কি কি কিনবো। স্বামী চুপচাপ শুয়ে আছে।
আমরা ঢাকায় পৌঁছে চাঁদনিচকে গেলাম। কাপড় কেনা সহ সব কিনে, গাউনের কাপড় নিউমার্কেটে দিয়ে আসলাম। একদিন পরে বানিয়ে দেবে। কল্পনায় নিজেকে রাণী রাণী লাগছে। কল্পনায় কতো ছবি আঁকছি। তখন স্মার্ট ফোন ছিলোনা। তাই ঢাকা থেকে অটো ক্যামেরা কিনলাম।
ছোট দেবরের বাসায় উঠলাম। সারাদিন শত গল্পের মাঝে গাউনের কথা থাকছে ই! গাউন নিয়ে মণ মণ চিন্তা। ভালো হবে তো! কেমন লাগবে আমি এই ছাপান্ন কেজী ওজনের মানুষকে। হিল আছে কিন্তু গোল্ডেন হিল নেই। গেলাম আবার মার্কেটে গিয়ে হিল কিনলাম। বড় বড় গোল্ডেন পাথরের আংটি, গোল্ডেন পাথরের লং মালা। গলায় জড়ানো পুতির মালা নিলাম জুয়েলার্সের দোকান থেকে!
একদিন পর গাউন নিয়ে আসলাম। এবার আবার চাঁদপুরের উদ্দেশ্যে রওয়ানা হলাম। কতো স্বপ্ন কতো রংয়ের স্বপ্ন দেখতে দেখতে সাতা রাত জেগে রইলাম। ভোরের দিকে ঘুমিয়ে পরলো স্বামী আমি তাকে রেখে বাইরে গেলাম। লঞ্চ ঘাটে এসে লাগলো কিন্তু আমার গাউনের ব্যাগ খুঁজে পাচ্ছিনা।
কান্নায় ভেঙ্গে পরলাম। সব আছে শুধু আমার গাউনের ব্যাগ নেই। স্বামীকে বললাম তল্লাশি চালাতে সে তল্লাশি না চালিয়ে আমাকে নিয়ে সোজা বাসায় চলে এলো!
সে বিয়েতে আর যাওয়া হয়নি। পরে বিভিন্ন রকমের গাউন বানিয়েছি কিন্তু আর মনে কোনো দোলা দেয়নি!
_________________________
শাহ সাবরিনা মোয়াজ্জেম
No comments