Header Ads

মৃত্যুঞ্জয় _ নূরবানু রীনা

 
মৃত্যুঞ্জয়

আজ আবার ফিরে এলে অবসন্ন চেতনায় হারিয়েছিলে
সেই কবে মহা কালের স্রোতের ধারায়
বিষন্ন কোনো এক গোধূলি বেলায়।
স্মৃতিগুলো শুধু বিচিত্র বেদনায় থাকে ঘিরে
ম্লান হয়ে যাওয়া মুখটি তোমার জেগে আছে
শুধু আমার এই আঁখি নিরে।
তোমার পদচিহ্ন বিলীন হয়েছে আজ
শত পথিকের পদভারে;
কত সহজে পুরোনোকে ভুলেছো তুমি
কত না অনাদরে।
তবু মনে পড়ে, বলেছিলে, "ভুলোনা আমায়,
রেখো মনে হৃদয়ের মণিকোঠায় দিও ঠাঁই।"
কতকাল শুধু এটুকু কথাই আকাশে -বাতাসে,
পুষ্প শাখায় প্রীতিরসে সুরে সুরে শুনে যাই।
বর্ষার প্রবল বর্ষণে সেদিন লোকালয়ের মৌনতায়
অরণ্যের শাখায় সুর তুলেছিলো বিহঙ্গ।
বাগানের ফুলগুলো আমার সাথে জেগেছিলো
তোমার আসার প্রতীক্ষায়।
হাসনাহেনা, কামিনী, টগর আর রজনীগন্ধার মনমাতানো গন্ধে
পরিপূর্ণ হয়ে উঠেছিল মন, তোমার আসার আনন্দে।
হাতটি ধরে বলেছিলে,
"প্রেয়সি তুমি, রিমঝিম বৃষ্টিতে ফুটে ওঠা বর্ষার সূর্যমুখী।"
উন্মুখ হয়েছিল সেদিন পৃথিবী আমার
সূর্যের ছোঁয়া পেতে;
নীড় বেঁধেছিল বিস্তীর্ণ বালুকাবেলার নির্জন কাশবনের সীমানাতে।
বলেছিলে,
"অনেক তারার মাঝে, চাঁদ তুমি শ্রেষ্ঠ,
কোনদিন দিওনা এতোটুকু কষ্ট।"
প্রতীক্ষিত এত বছরেও তুমি রয়ে গেলে
আজও অস্পষ্ট।
সকল কাজে ভাবনার মাঝে হয়ে আছো স্মৃতি
অথচ কত সহজে ক্লান্ত আমায় ফেলে
হৃদয়ে এনেছো চরম বিস্মৃতি।
বড় জানতে ইচ্ছে করে, চেয়েছিলে কি তাই?
জীবনে প্রশ্ন আমার আজ শুধু একটাই।
তবে শুনে যাও, যদি হয় তাই
আমারও কিছু না বলা কথা, তোমায় শোনাতে চাই।
তুমি পড়ন্ত বিকেলের ম্লান আলোয় বিলীন হয়ে যাওয়া
বিষণ্ণ মায়াময় সন্ধ্যায় পূর্ণ হৃদয় শূন্য করে,
মিশিয়ে দাও ধুলায়।
মরীচিকা হয়ে দূর দিগন্তে
পথচলা পথিকের হৃদয় ভরিয়ে দাও
সীমাহীন হতাশার আতঙ্কে।
তোমায় যায় না ছোঁয়া, হয় না পাওয়া।
তুমি ব্যথার নীল সাগরে উত্তাল উর্মি
সর্বনাশা বৈশাখী ঘূর্ণি।
নিষ্ঠুরতার দুর্বিনীত খরস্রোতে তৃণলতার মত
ভাসিয়ে দাও সাজানো স্বপ্নের বেলাভূমি।
তুমি আগ্নেয়গিরির বীভৎস লাভায়
নিষ্ঠুর উল্লাসে পুড়িয়ে দিতে পারো
পরম নির্ভরতার আশ্রয়।
আমি বিস্ময়ে চেয়ে দেখি তোমার স্বরূপ
হাত বাড়িয়ে ধরতে গেলে হয়ে যাও অচেনা,
ঝাপসা গ্রাস করে নেয় চরম হতাশা।
তবু জীবনের প্রতি ক্ষণে হয়ে আছো ধ্রুব সত্য়,
অম্লান, অক্ষয়, হৃদয়ের মৃত্যুঞ্জয়।
____________
নূরবানু রীনা

No comments

Powered by Blogger.