Header Ads

মীর সাহেবের সরাই ❑ সেলিম ইসলাম খান ❑ ধারাবাহিক উপন্যাস পর্ব_২৫

 


মী সাহেবেরা

সেলিম ইসলাম খান

উপন্যাস

ধারাবাহিক পর্ব_২৫

সুলতানজাদা নসরত শাহ ও সেনাপতি হৈতেন খান মেহেরকুল মুক্ত করে আগরতলার দিকে অগ্রসর হলেন। কাঠফাটা রোদ্দুরে তারা সোনামুড়া ও নিরমহল হয়ে আগরতলার কাছাকাছি পৌঁছলেন। ত্রিপুরার রাজা ধন্যমানিক্য তার বিশ্বস্ত সেনাপতি রাইকসমকে আগরতলা, নিরমহল ও ময়নামতির শাসক নিযুক্ত করেছিলেন। তার প্রতিনিধি নিধু চাকমা ময়নামতিতে নসরত শাহের হাতে পরাস্ত হয়ে নিরমহলে পালিয়ে যায়। ময়নামতির ভিক্ষুরাও তার পরাজয় থামাতে পারেনি। পালিয়ে নিরমহলের শাসক সতীশমন্ডলের সাথে সে একাত্ম হয়। কিন্তু সুলতানী বাহিনীর হাতে তারা শোচনীয় ভাবে পরাজয় বরণ করে। নিধুচাকমা যুদ্ধে মারা গেলেও সতীশমন্ডল গ্রেফতার হয়।

নসরতশাহ সতীশমন্ডলকে বেঁধে ঘোড়ার পিঠে করে আগরতলা নিয়ে আসেন। রাইকসম তার প্রতিনিধির মুক্তির বিনিময়ে এক হাজার মুদ্রা দিতে ইচ্ছা পোষণ করে। কিন্তু নসরতশাহ সাফ জানিয়ে দেন মেহেরকুলে হামলা ও দখলের জন্য নিঃশর্ত ক্ষমা চাইতে হবে। সেই সাথে প্রাসাদ সুলতানী সেনাদের হাতে তুলে দিলেই কেবল সতীশ মন্ডল মুক্তি পেতে পারে।

অতীত ভুলের জন্য ক্ষমা চাইতে রাজি, কিন্তু রাইকসম কিছুতেই প্রাসাদ ছাড়তে রাজি নন। ফলে যুদ্ধ অবশ্যম্ভাবী হয়ে উঠল। বিকেলে রাইকসমের বাহিনী পুটির বিলের দিকে এগিয়ে এল। তারপর পাঁচ হাজার সেনা নিয়ে আচম্বিতে সুলতানের বাহিনীর উপর হামলা শুরু করল। নসরতশাহ ও হৈতেন খানরা তখন আসরের নামাজে রত ছিলেন। পাহারাদার সেনারা ঢাল দিয়ে তাদের রক্ষা করলেন।

নামাজ শেষ হলে নসরত শাহের তীরন্দাজরা আক্রমণে গেলেন। প্রচন্ড তীর বৃষ্টির ফলে ত্রিপুরা বাহিনী নাস্তানাবুদ হয়ে গেল। তারা প্রাসাদে গিয়ে আশ্রয় নিল। রাইকসম প্রাসাদকে নিশ্ছিদ্র নিরাপত্তার আওতায় আনলেন। সেনাদের নানা উপঢৌকন দিয়ে প্রাসাদ রক্ষা করার আহ্বান জানান। কিন্তু তীর বৃষ্টি রাজপ্রাসাদের ভেতরে অবিবল ধারায় বর্ষিত হতে লাগল। সেনারা প্রাণভয়ে পেছনের ফটকের দিকে দৌড়াতে লাগল। কিন্তু রাইজসম কিছু সংখ্যক সেনা দ্বারা প্রতিরোধ যুদ্ধ চালিয়ে যেতে লাগলেন। যা বেশিক্ষণ স্হায়ী হল না। হৈতেন খান বিশাল হাতুড়ি দিয়ে প্রাসাদের দেয়াল ভেঙ্গে তার বাহিনী নিয়ে দুর্গে প্রবেশ করলেন। তার তলোয়ারের আঘাতে ত্রিপুরা সেনারা জীবন দিতে লাগল। অবস্থা করুণ দেখে রাইকসমও পালিয়ে যেগে উদ্যত হলেন। কিন্তু হৈতেন খান তা হতে দিলেন না। তিনি চতুর রাইকসমকে গরুর পাল থেকে ধরে বন্দী করলেন। তারপর আগরতলা দুর্গের দায়িত্ব দাউদ খানের হাতে তুলে দিয়ে সেনাদের নিয়ে উদয়পুরের দিকে রওয়ানা হলেন।

 

চলবে........


No comments

Powered by Blogger.