Header Ads

ত্রিশাল ও নজরুল ❑ আয়েশা আক্তার


ত্রিশাল নজরুল

আয়েশা আক্তার

২৫এমে জাতীয় কবি কাজী নজরুল ইসলামের ১২২তম জন্ম বার্ষিকীতে 'নজরুল ত্রিশাল' লেখাটি কবির প্রতি শ্রদ্ধা জানিয়ে উপস্থাপন করলাম।

আজকের যে যুগস্রষ্টা কবি, বিদ্রোহী কবি তাঁর বিকাশ হয়েছিলো ত্রিশালে তা অনেকেই স্বীকার করতে চান না তেমনটাই লক্ষ্য করি নজরুল সম্পর্কে লেখা গুলো পড়লে।

তবে কথা ঠিক ত্রিশালের মানুষ আমাদের জাতীয় কবির কবিত্ব বিকাশের পরিবেশ সৃষ্টি করে দিয়ে ছিলেন। কবির কবিত্ব বিকাশের উপাদান মাল মসলা ত্রিশালের মানুষই জাগিয়ে ছিলেন।

আমরা সবাই জানি কাজী নজরুল ইসলামের জন্ম ২৫এ মে, ১৮৯৯সালে, বাংলা ১১ই জ্যৈষ্ঠ, ১৩০৬ সন, পশ্চিম বঙ্গের, বর্ধমান জেলার, জামুড়িয়া থানার অন্তর্গত চুরুলিয়া গ্রামে। পিতা কাজী ফকির আহমদ, মাতা জাহেদা খাতুন।

তার বয়স যখন বার বার তখন তাঁর সাথে পরিচয় হয় দারোগা কাজী রফিক উল্লাহ সাহেবের সাথে।

তখন কিশোর নজরুল এক রুটির দোকানে কাজ করতেন। রাতে দারোগা সাহেবের বাসার বারান্দায় ঘুমাতেন, বাতির আলোতে বই পড়তেন, সুরেলা কন্ঠে পুঁথি পড়তেন।

আর এভাবেই দারোগা পত্নীর সাথে তাঁর সখ্যতা গড়ে উঠে। একে তো কাজী বংশ তার পর লেখা পড়ার আগ্রহ দেখে তাকে নিজের সন্তান হিসেবে দেখভালের দায়িত্ব নেন।

বদলীর কারণে দারোগা সাহেব তার নিজ গ্রাম কাজী শিমলায়, ময়মনসিংহ জেলার ত্রিশালে কিশোর নজরুল কে নিয়ে আসেন। ভর্তি করে দেন ত্রিশাল থানার দরিরাম পুর হাই ইংলিশ স্কুলে। বর্তমানে নজরুল একাডেমী, দরিরাম পুর নামে পরিচিত।

যাতায়াতের সুবিধার জন্য তাঁকে পাশের গ্রাম নামা ত্রিশালে বিচুতিয়া বেপারির বাড়িতে জায়গির রাখা হলো।তখন প্রতিটি পরিবারে লেখা পড়ার সুবিধার জন্যজন্য জায়গির থাকতো।

বাইশ একর জমির মালিক বিচুতিয়া বেপারির বাড়িতে শুরু হলো কবি নিশ্চিত জীবন।

শুকনি বিলের পাড়ে অবধারিত প্রান্তরে মাঠ ভরা ফসল, গাছে ফুল ফল, কবিকে কবিত্ব বিকাশে উর্বর করে তোলে। এই সেই শুকনো বিল অবারিত প্রান্তর কবি দাপটের সাথে ঘুরে বেড়াতেন, এখানেই শত শত একর জায়গায় নিয়ে দাঁড়িয়ে আছে কবি স্মৃতি বিজড়িত 'সংস্কৃতি বিশ্ববিদ্যালয়, তারই পাশে বিশাল বটগাছ যার তলায় বসে কবি বাঁশি বাজাতেন।

এক দিন ঘোরকা(পুলিশ) সেজে ফসলের মাঠে গিয়ে ব্যপারির সামনে গিয়ে দাড়িয়ে, ব্যাপারি ভয় পেয়ে গেলেন।

-ভয় পাবেন না, আমি দুঃখ মিয়া,

-তুমি স্কুলে যায়নি।

-না, আজ এটাই আমার স্কুল।

এভাবে বন্ধুদের সাথে লিচু তলায়, পেয়ারা গাছে, কখনো শর্ষে ফুল দেখে বিড়বিড় করে কিযেনো বলতেন!

বন্ধুরা জিজ্ঞেস করলে বলতোগান বানছি। তাই হয়তো তিনি লিখেছিলেন লিচু চুর, খুকু ওকাঠবিড়ালি, প্রজাপতি মতো গান ওকবিতা।

ত্রিশালের এই ক্ষুদ্র ভুখন্ডটিতে তখন ডজন খানেক জমিদার বাস করতো। তাদের কায়েমি স্বার্থ বহাল রেখেছিল, ত্রিশালের গরীব কৃষকদের সম্পদের উপর। তিনি ত্রিশালের সেই নিযাতিত জনগনের সাথে মিলেমিশে একাকার হয়ে গিয়েছিলেন। তাইতো তিনি জমিদারের চাবুকের নীচ থেকে জনৈক চাষীকে বাঁচিয়ে ছিলেন।

এই সব উপাদান দিয়েই কবি সৃষ্টি করেছিলেন বিদ্রোহী, অগ্নিবীনা, সাম্যবাদীর মত কবিতা।

নজরুল সাহিত্য সমালোচক গণ মনে করেন ত্রিশাল জীবনে কবি কাব্য জগতে কোন ভূমিকা রাখেন নি। তাই যদি হয় তা হলে কবি কি ভাবে পরীক্ষার খাতা কবিতা দিয়ে ভরে দিয়েছেন?

দরিরাম পুর স্কুলের দু'জন শিক্ষক মরহুম খিজির উদ্দিন ওকৈলাস দত্ত একই দিন চাকুরি থেকে অবসর নিলে তাদের বিদায়ী সভায় কবি স্বরচিত 'করুন গাঁথা' 'করুন বেহাগ'নামে দুইটি কবিতা আবৃত্তি করেন।

তিনি যখন তখন যার তার উপর ছড়া কাটতেন। তিনি দরিরাম পুর স্কুলের শিক্ষকদের সম্পর্কে বলেছিলেন

"হেড মাস্টারের ছড়ি, সেকেন্ড মাস্টারের দড়ি, থার্ড মাস্টারের টেরি, কারে রেখে কারে ছাড়ি! এই সব পূর্ণ বা আংশিক কবিতা, ছড়া, সংগীত ত্রিশালের মানুষের মুখে মুখে শোনা যায়।

নজরুল সাহিত্যে ত্রিশালের নারী। ত্রিশালের নারীদের লাবণ্যতায়, আথিতেয়তায, সরলতায় কবি বিশেষভাবে অনুপ্রাণিত হয়েছিলেন। তারই উদাহরণ কবির জীবনীমুলক গল্প অগ্নিগিরি ওজীনের বাদশা।

নজরুল সাহিত্যে ত্রিশালের ভাষা স্থান পেয়েছে। অগ্নিগিরি গল্পটি ত্রিশালের ভাষায় রচিত। যেমন আফিনি বেডা-না। আফনারে লইয়া ইবলিশ পোলা পাইন যাতা কইব আর আফনি শুইনা লেজ গুডাইয়া চইল্যা আসবেন। আল্লাহ আফনারে হাত মুখ দিছে না?

কবির কবিত্ব বিকাশ ত্রিশালে হয়েছিলো

এসমন্ধে যদি কেউ দ্বিমত পোষণ করেন তা হলে বলবো - কোন এক কর্মহীন সন্ধ্যায় চলে এসো না

ত্রিশালের উর্বর সৌন্দর্যে, নজরুলের রঙ্গ ভূমিতে, নিজের অহংবোধকে ঝেড়ে ফেলে অতীত কে সামনে নিয়ে দাঁড়াও, তখন হয়তো তৃতীয়ার চাঁদটা যাবে ডুবে, মন মোর অন্ধকার তোমার মুখোমুখি, ভয় পেয়ো না। নেমে যাও অতীতের গহ্ববরে, পরতের পর পরত যাও উল্টিয়ে, তখন হয়তো দেখতে পাবে কবি নজরুলের কবিত্ব বিকাশের উৎস ভুমি এই ত্রিশাল।

তাই বলব নজরুল কে নিয়ে ত্রিশাল ছাড়া কোন লেখাই পরি পরিপূর্ণ হতে পারে না।

No comments

Powered by Blogger.