Header Ads

তিন বন্ধুর গল্প

তিন বন্ধুর গল্প 

তারা ছিলো তিনজন।দূরন্ত কিশোর।ছোটবেলা তাদের এক সংগে কাটে। সোনাতলী  গ্রামে তাদের বাড়ি।পাশাপাশি বসবাস ছিলো বলে দৈনন্দিন তাদের দেখা হতো।তিন দুষ্টু সকাল থেকে সন্ধ্যা সকল কাজ একসাথে না করলে পেটের ভাত হজম হত না।তিন দুষ্টুর নাম ইংরেজী এস লেটার দিয়ে শুরু। সুমন কৃষক বাবা মার দ্বিতীয় ছেলে। লেখাপড়ায় যেমন ভালো দুষ্টুমিতে তেমন শিরোমনি।

শরীফ পরিবারের বড় ছেলে, পড়ালেখায় মোটামুটি। কিন্তু বুদ্ধি দারুণ! তাই দুষ্টুমিতে শিরোপা তার পাওয়া উচিত। 

সজল পাঁচ বোনের এক ভাই। পরিবারের একমাত্র ছেলে বলে সে রাজা। পড়ালেখায় ভালো তবে ভারী দুষ্টু। 

সুমন, সজল ও শরীফ ভোর হবার আগে দরজা খুলে বেরিয়ে পড়ে আম কুড়াতে।গ্রামে বদনাম আছে এই তিন দুষ্টুর জন্য কেউ কুড়াতে গিয়ে আম জাম কিছুই পায় না।ঝড় তুফান তাদেরকে ঘরে রাখতে পারেনা। মহুয়ার খাল সোনাতলী গ্রামের পাশ দিয়ে বয়ে গিয়েছে। ঐ খাল বর্ষায় পানিতে কানায় কানায় ভরে যায়। তারা তখন ভেলায় চড়ে বেড়ায়। শরীফের মা বকুনি দেয় বলে সে শাপলা তুলে মাকে দিয়ে বলে , কাল মাছ শিকার করে দিব। মা তাকে বারণ করে পড়া ঠিকমত করতে হবে, মাছ বা শাপলা তার দরকার নেই।পাটশালায় এক ক্লাসে তিনজনই পড়ে বলে প্রথম , দ্বিতীয় ও তৃতীয় তাদের রোল নাম্বার।স্যারদের কথা মনোযোগ দিয়ে শুনলে ও মন পড়ে থাকে খেলার মাঠে। দৈনিক সমাবেশে তিন জন নেতৃত্ব দেয়।স্কুলের দিদিমনিদের কথা শুনে তবে ক্লাসে অন্যমনস্ক থাকে। তারা পরামর্শ করে স্কুল থেকে ফিরে কি করবে, পরেরদিনের রুটিন কি হবে! সজলটা অন্যমনস্ক ছিল আর দিদিমনির প্রশ্নের জবাবে বলল, প্রথমে বাড়িতে যাবো, ভাত খেয়ে মদনটিলাতে পাখির বাসা দেখতে যাব। দুঠো ছানা আছে আমরা কিছু দানা দিব, পরে কাবাডি খেলব, রাতে পড়া শেষ করে পুকুরে চাঁদ দেখতে যাব! দিদিমনি সহ ক্লাসের সবাই অবাক! বলে কি সজল? তাকে বলা হয়েছিল সামাজিক কাজের সংজ্ঞা দিতে। দিদিমনি অন্য স্যারদের বলে দিলেন ঘঠনাটি। হেডস্যার জিগ্যেস করলেন, পুকুরে চাঁদ দেখা ব্যাপার টা বুঝিয়ে বলো বাপু। 

সজল চুপ হয়ে আছে দেখে সুমন বলল, চাদনী রাতে নিস্তব্ধ পুকুরের পানিতে চাঁদ দেখতে দারুণ লাগে স্যার! 

স্কুলের সব স্যার দিদিমনিরা অবাক! হেডস্যার বললেন, তোরা বাপু তিন এস তিন জুয়েল। কোনদিন শুনব চাঁদে চলে গেছো, এত বুদ্ধি রাখো! 

স্কুলে যাবার পথে মিলাদের বাড়ির শষা ও পেয়ারা খাওয়া তাদের ডেইলি রুটিন।এই নিয়ে কত নালিশ আছে।

গ্রামের মেয়ে সোহাগীর বিয়েতে তিনজন খুব পরিশ্রম করল। সোহাগী বরের বাড়িতে যাবার পরেরদিন তারা বিয়ে বাড়ির কাবিন পড়া নকল করে পড়ত, এই শুনে সবাই হাসাহাসি করত। 

এসএসসি দিয়ে তারা তিনজন বিচ্ছিন্ন হয়ে গেল।সজলরা তাদের নানাবাড়িতে চলে গেলো। কারণ তার বাবা মারা গেলে অসহায় হয়ে নানাবাড়ি চলে যায়।শরীফ ঐ সময়ে সৌদির ভিসা পেয়ে চলে যায়। কারণ পরিবারের হাল তাকেই ধরা দরকার ছিলো। সুমন ঢাকায় চলে গেলো পড়ার জন্য। গরীব বাবা মা তাকে বিদেশ পাঠাননি। কারণ স্কুলের হেডস্যার নিষেধ করেছিলেন। আত্মীয়স্বজন ও গ্রামের ঢনাঢ্য ব্যক্তির সাহায্যে সে ডাক্তার হয়েছে। 

দীর্ঘদিন তিন এস এর কোন যোগাযোগ ছিল না।পনের বছর পরে তারা একে অন্যের ফোন নাম্বার সংগ্রহ করে মেসেন্জারে আড্ডা দেয়।

সুমন নিউরো সার্জন, ঢাকা শিশু হাসপাতালে কাজ করে। এক ছেলে ও এক মেয়ের বাবা। 

শরীফ তিন মেয়ের বাবা, এখনো সৌদিতে আছে। 

সজল কাপড়ের ব্যবসা করে, দু ছেলের বাবা।

ছোটবেলার তিন বন্ধু আজ ছেলে মেয়ের বাবা। নিজের ছেলেমেয়ে মানুষ করতে গিয়ে কত কষ্টই না করতে হয়। তাদের মনে পড়ে ছোটবেলা বাবা মা কত কষ্ট করতেন । তিন দুষ্টু আজ সেই ছোটটি নেই। তাদের কারো সময় ও সুযোগ হয়না নিজের গ্রামটাকে ঘুরে ঘুরে দেখতে। তবে তারা কেউ কাউকে ভুলেনি। 

সুমন ডাক্তার হলেও ভুলেনি তার অতীতকে। সে যে গরীব ঘরের সন্তান ছিলো! তাই তো এখনো সুযোগ পেলেই গ্রামের গরীব ছেলেদেরকে পড়াশোনার খরচ যোগায়।

ছোটবেলার তিন দুষ্টু খ্যাত তিন এস ঈদে গ্রামে এলো। তারা এক বিকেলে স্কুলের হেডস্যারের বাড়িতে হাজির। হাতে গিফট আর ফল ছিলো। তাদেরকে দেখে বৃদ্ধ হেডস্যার কাঁদতে লাগলেন। জড়িয়ে ধরলেন বুকে। স্যারকে সালাম করে তারা কুশলাদি শেষে বিদায় নিলো। 

বিদায় বেলা হেডস্যার বললেন, তোদের তিনজনকে একসাথে দেখে খুব ভালো লাগলো। তোরা একে অন্যকে ভুলিসনি। এই বৃদ্ধ স্যারকে ভুলিসনি। ছোটবেলার বন্ধুদের মতো খাঁটি বন্ধু আর হতে পারেনা। তোদেরকে ভালো মানুষ হবার শিক্ষা দিতাম। তাইতো সুমন ডাক্তার হলে ও শরীফ সজল কে ভুলেনি।দোয়াকরি তোদের বন্ধুত্ব অঠুট থাকুক। তবে সুযোগ পেলে গ্রামে চলে এসো , চাঁদনী রাতে নিস্তব্ধ পুকুরে চাঁদ দেখতে ভুলো না। এই কথা শুনে তিন বন্ধু লজ্জ্ব্যা পেলে ও হো হো করে হেসে উঠলো। 

পথে হাঁটতে হাঁটতে গান ধরলো তারা, দিন গুলি মোর সোনার খাঁচায় রইলো না”।

Shamsun Fouzia 

New York. USA.

1 comment:

Powered by Blogger.