Header Ads

হলুদ শার্ট ও একজন নারী



হলুদ শার্ট ও একজন নারী
—————————
হঠাৎ হঠাৎ দেখা হয় লিফটে,
এই বিল্ডিং-এ সবাই নতুন ওঠেছি,
সবাই ফ্লাটের মালিক না,
ভাড়াটিয়াও আছে কয়েকজন,
কখনো কথা হয়নি,
হয়তো শুভেচ্ছা হাসি বিনিময় হয়েছে।
আজ লিফটের জন্য অপেক্ষার সময়
পার্কিং এ দেখা,
হঠাৎ করেই উনি বলে উঠলেন,
“আচ্ছা আপনি কি কখনো
উত্তর যাত্রাবাড়িতে ছিলেন?”
আমি খুবই আশ্চর্য হয়ে বললাম,
“জি, ছিলাম ,সে তো প্রায়... “
বলেই একটু হাতে গুনে বললাম
“একুশ বছর হবে,
কলেজে পড়তাম তখন,
দু’বছর ছিলাম, ওয়াশা গলিতে ছিলাম,
বাসার নাম্বারটা মনে নেই,
কেনো বলুনতো ?”
“ঠিক পাশের দোতলা বাড়িটা ছিলো আমাদের,
আমাদেরটা ছিলো আশি
আর আপনি ছিলেন ঊনাশিতে,
সিজারদের বাসায় ”
আমি খুবই আশচর্য হয়ে কিছুক্ষণ
ভদ্রমহিলার দিকে তাকিয়ে থাকলাম,
কোনোভাবেই পরিচত মনে হচ্ছে না,
তবুও হাসিমুখে বললাম,
“আমার স্মৃতিশক্তি খুবই দুর্বল,
ক্ষমা করবেন,
আপনার দেখি সব মনে আছে,
বাবার বদলির চাকুরি ছিলো,
তারপর আমরা সিলেটে চলে গিয়েছিলাম,
আর আপনাদের তো নিজেদেরই বাড়ি।”
এইটুকু বলতেই লিফটা চলে আসলো।
ভদ্রমহিলার লিফটে ওঠার
কোনো লক্ষণই দেখলাম না,
অগত্যা আমার ও দাঁড়িয়ে পড়তে হলো।
“আমি থাকি ৭/অ তে , আপনি?”
“আমি ৫/উ তে থাকি” বলেই লিফটের দিকে তাকালাম
লিফট আবার নিচেই নামছে।
“আপনি প্রায়ই হলুদ শার্ট পড়তেন,
হলুদ আপনার প্রিয় রং, তাই না?”
আমি এতোই আশ্চর্য্য হলাম যে
আবারও লিফট এসে কখন যে চলে গেলো
বলতেই পারবো না।
মনে পরে গেলো হলুদ শার্টের কথা,
বাবাকে কে যেনো হলুদ কাপড়ের
একটা থান দিয়েছিলো,
আমার ধারনা কোনো কাজের
ঘুষ হিসাবে দিয়েছিলো কেউ আমার কেরানি বাবাকে দিয়েছিলো,
বাবা বিনে পয়সার কাপড় পেয়ে
আমাকে একসাথে তিনটা হলুদ
শার্ট বানিয়ে দিয়েছিলো।
কলেজের দু’বছর আমাকে
হলুদ শার্ট পরেই কাটাতে হয়েছিলো,
মার সাথে তখন অনেক ঝগড়া করেছিলাম হলুদ শার্ট নিয়ে,
বাবাকে কিছু বলার সাহসই ছিলো না আমার কখনো ।
আমি বললাম,
“আপনার স্মৃতিশক্তি সত্যিই বলার মতো।”
-“ আমার এক ছেলে ,
কলেজে পড়ে,
আর স্বামী ব্যাবসায়ী,
আমি গৃহিনী, আপনার?”
বলেই আমার দিকে প্রশ্নসূচক দৃষ্টিতে তাকালো,
“ আমার এক ছেলে, এক মেয়ে, বউ ডাক্তার,
আমি ও ব্যাবসা করি”
বলেই সাথে সাথেই বললাম
“আজ আসি”
ভদ্র মহিলা বললো,
“নামটাও জানতে চাইলেন না?,
আমার নাম ‘রুমা”
আমি খুবই অপ্রস্তুত হয়ে বললাম,
“ আমার নাম..”
উনি আমাকে থামিয়ে দিয়ে বললেন,
“থাক আর বলতে হবে না,
আমি জানি আপনার নাম।”
বলেই উনি লিফটের বদলে
সিড়ি ভেঙে উঠতে লাগলেন,
আমি খুবই আশ্চর্য হয়ে তাকিয়ে থাকলাম শুধু।
অনেকদিন আর দেখা হয়নি ওনার সাথে,
একদিন আবার লিফটেই দেখা,
সাথে কিশোর বয়সের একটি ছেলে,
আমি পরিচিত মানুষের মতো সৌজন্য হাসি দিলাম,
উনি আমার দিকে তাকালেনই না।
কিশোরের পরনে হলুদ রঙের একটি শার্ট
ছেলেটি একটু বিরক্ত প্রকাশ করে নিচু স্বরে বললো,
“ মা হলুদ রং আমার একটুও পছন্দ না,
তুমি সব সময় আমাকে জোর করে
হলুদ রং এর কাপড় পরাও,
আমি এখন বড় হয়েছি,
কলেজে পড়ি,
মা,নিজের পছন্দ বলে আমারও তো কিছু আছে।”
উনি কিছুই বললেন না,
লিফট থেকে নামার সময় শুধু আমার দিকে
নির্লিপ্ত ভাবে তাকালেন,
কিশোরটিকে বললো,
যেনো আমিও শুনতে পাই,
“ হলুদ রং আমারও পচ্ছন্দ না,
তুমি বাসায় গিয়ে শার্টটা বদলিয়ে আসো,
রঙটা কেমন যেনো চোখে লাগছে,
হলুদ রং দেখলেই শরীর গুলিয়ে উঠছে।”
————————————————
কাব্যগ্রন্থ- সময় ভেসে যায় বৃষ্টির জলে

রশিদ হারুন 

No comments

Powered by Blogger.