Header Ads

বিপর্যস্ত মানবতা _ শামসুন ফৌজিয়া

বিপর্যস্ত মানবতা
________________

সানাইযের বিবাগী সুরে যখন কারো বিদায় হলো বুকফাটা কান্নায়,
বাবা মায়ের মাথা হতে চিন্তার বোঝা নেমে গেলো।
আধো সুখে আধে ব্যাথায় কাতর।
তখন মাজু পাগলা খোঁড়া পা টা টেনে টেনে মাথার চুল ছিঁড়তে ছিঁড়তে
উচ্ছিষ্টে  খুঁজে ফেরে আধ খাওয়া রোস্ট;
এক পাশে নেড়ীটা আরেক পাশে মাজু পাগলা!দূজনের দৃষ্টি উচ্ছিষ্টে-
দুজনেই বাঁচার চেষ্টায় বিভোর! 
দূজনের প্রচণ্ড  মিল ঐ এক জায়গায় ক্ষিধা ও বাঁচার চেষ্টা , 
পার্থক্য শুধু মানুষ ও প্রাণীর!
পরম তৃপ্তির ঢেঁকুর তোলার আগেই হৈ হৈ করে তাড়িয়ে দেওয়া হলো!
গোলকধাঁধাঁর মতো পৃথিবীটা নাকি সূর্যের চারপাশে ঘুরছে!
খালি চোখে যদি দেখা যেতো এই আবর্তন, 
তাহলে কত দেশ কত মানুষই পরিবর্তন করে ফেলত তাদের আবাস! 
পূর্বের লোক পশ্চিমে আর পশ্চিমের পূর্বে ...
আদিযুগের মানবেরা তাহলে বৃথাই করেছিল সমাজবদ্ধ হবার চেষ্টা ? 
পাথর থেকে আগুন আর কাঁচা মাংস থেকে ঝলসে খাওয়া মাংসের কিংবা, 
গোলপাতায় লজ্জ্যা নিবারণের চেস্টা !
সব কি তাহলে বৃথাই? 
ঋক, বৈদিক, প্রস্তর যুগের কী বিবর্তন ঘঠে নাই? 
নাকাড়া , সিংগা , হস্তি, অশ্ব ,তলোয়ার,কলার ভেলা থেকে জাহাজ! 
পাখির ওড়া দেখে বিমান !
ওলা বিবির ভৌতিক গুজব হতে ওর স্যালাইন,
হ্যাজাকের আলোয় ঘেঁটু ছেড়ে সাদা কালো রঙিন সিনেমার যুগ;
আর্য, মৌর্য, মূঘল কিংবা হিটলারের যুগ! 
ধরো লিওনার্দোর মোনালিসা!হারকিউলিস, 
সুন্দরী হেলেনা, দেবী সুন্দরী আফ্রোদিত,
রোমের ট্রয় নগরী, ভাস্কোদাগামা, কলম্বাসের নতুন ভূখন্ড আবিস্কার....
সভ্যতার বির্বতন কী বৃথাই তাহলে? 
জোকারবার্গের ফেইজবুক, ডেভিড হ্যানসেনর রোবট সুফিয়া সবই বৃথা?
মানুষে মানুষে যদি এত ভেদাভেদ রয়েই গেলো 
তাহলে সভ্যতার বিবর্তন কী বৃথা নয়? 
বিংশ শতকে এসে ও আইন রক্ষাকারীদের হাতেই প্রাণ দিতে হয় বর্ণবাদের 
বিভৎস হিংসায়!তাও ঐ দেশে যারা সব সময় মানবতার ঝাণ্ডাধারী! 
কিংবা অদৃশ্য কোন হুকুমের দাসত্বে। 
তৃতীয় বিশ্বের অভূক্ত শিশুরা কিংবা সিরিয়ার যুদ্ধ বিধ্বস্ত শিশুর আর্তনাদ !
কিছুই আমাদের মনকে নাড়া দিতে পারেনি! 
আফসোস! কতটা নির্লজ্জ হলে 
আমরা ধর্ষিতাকে পুনরায় সম্ভ্রম কেড়ে নিতে পারি ? 
তা ও আইনের রক্ষকদের হাতে? 
এই কলংক কি মুছবেনা নাকি পরম্পরায় চলছে তো চলবে...
আইয়ামে জাহেলিয়া হতে মুক্তির চিন্তায় বিভোর বালক মুহম্মদ( সঃ) ;
রাতের আঁধারে প্রজার দরজায় মানবতার ওমর !
গান্ধীজীর দেশ চিন্তা বা ক্ষুদিরামের দেশপ্রেম! মাদার তেরেসার মানবতা! 
কোন কিছুই কি আমাদেরকে উদার করতে পারেনা? 
টুপ টুপ করে জল পড়া স্যাঁতস্যাঁতে ঘরে বৃদ্ধ বাবার কুমারী মেয়ে 
রাতের শেষ প্রহরে জন্ম দিল এক মানবশিশু!
নাক সিঁটকে পড়শীরা দূরে চলে যায়, 
একঘরে করা হয় পঙ্গু বৃদ্ধ বাবাকে! 
মেয়েটির কী দোষ ছিলো বলো? 
সে তো রোজকার মতো ঘুমিয়েছিল, 
আর রাতের আঁধারে বৃদ্ধ পঙ্গু বাবাকে বেঁধে কারা করলো সম্ভ্রবহানী? 
এই জন্যই কী জঙ্গল হতে সমাজবদ্ধ হয়েছিলে মানুষ? 
সভ্যতার এতো বিবর্তন হলে ও কিছু মানুষের বিবর্তন কেন হয়না? 
অসহায় মেয়েটি রক্ত ঝরতে ঝরতে গতকাল ভোরে পিতৃপরিচয়হীন শিশুটিকে 
আরো অসহায় করে দিয়ে সকল অপবাদ মাথায় তুলে চলে গেলো! 
শিশুটি ও হয়তো আজ বা কাল চলে যেতে পারে! 
অহরহ কত অঘঠন! কারো পৌষমাস আর কারো সর্বনাশ 
অবিরাম চলে!আর কত অধপতনে যাবো আমরা? 
সভ্যতার এই বিবর্তন কি তাহলে বৃথা? 
করোনা মহামারী যে কিনা পৃথিবীকে তছনছ করে দিয়েছে, 
দিয়েছে শক্তিধরের ভীত কাঁপিয়ে! 
প্রতি মূহুর্ত মৃত্যুভয় তারপর ও চলে মিথ্যের বেসাতী!
অন্যায় আর অনাচার! তবুও হে মানুষ দাম্ভিকতা বহাল রাখো! 
লোভের লেলিহান জিহ্বা লক লক করে!
যুগে যুগে কিছু ভালো মানুষের জন্য পৃথিবী আজো টিকে আছে।
বিরর্তনের স্বর্ণযুগ কবে আসবে? 
পুরোপুরি মানবিক হতে আর কত সভ্যতার সূচনা দরকার? 
হে মানব তুমি আরো মানবিক হও! 
সৃষ্টিকর্তাকে ভয় করো। 
মানবতার ফুল ফোটাও পৃথিবীতে। 
তুমি চাইলেই সব পারো , 
চাইলেই পুরো মানুষ হতে পারি ।

_____________
Shamsun Fouzia 
09/22/2020
New York, USA

No comments

Powered by Blogger.