Header Ads

স্বার্থহীন সহযোগিতার উপহার _কয়েসাবা

স্বার্থহীন সহযোগিতার উপহার

ছোটগল্প (বাস্তবতার নিরিখে)

আপনাদের সকলের সাথে আমার ব্যক্তিগত জীবনে ঘটে যাওয়া দুইটি ঘটনার স্মৃতিচারণ করছি।

২০০১ সাল। আমি তখন পঞ্চম শ্রেণিতে পড়ি। সামনে বার্ষিক পরীক্ষা। একটি মর্মান্তিক দুর্ঘটনায় হাসপাতালের বিছানায় আমি প্রায় ১৮ দিন কোমায় ছিলাম। ২০০১ সালের আগের কোনো স্মৃতি মনে নেই। যতটুকু এখন বলতে পারি সেটা লোকমুখে আর সহপাঠীদের মুখে শোনা। ইচ্ছে করলেও কোনো কিছু স্মরণ করতে পারি না। আর এখন চেষ্টাও করি না। কেননা চেষ্টা করলে প্রচন্ড মাথা ব্যাথা করে। যাহোক, আসা যাক মূল ঘটনায়। ১৮ দিনের কোমা ও মাস খানেকের চিকিৎসা শেষ করে যখন হাসপাতাল ছাড়লাম। তখনও আমার শারীরিক ফিটনেস একেবারে নেই বললেই চলে। বাম হাত সামান্য নড়াচড়া করতে পারতাম। বাম পা মাটির সাথে ঘেঁষিয়ে হাটতাম। তুলতে পারতাম না। প্রায় প্রতিবন্ধীদের মত হাটতাম। শেষ পর্যন্ত আর কোনো চিকিৎসা না থাকায় ডাক্তারি পরামর্শের সর্বশেষ ফর্মূলা অনুযায়ী নিজ বাড়িতে শারীরিক কিছু ব্যায়ামের নিয়মিত চর্চা করতে থাকি। তারপরও কিছু থেকে কিছুই হচ্ছিল না। লেখাপড়া আর হবে না একরকম নিশ্চিতই হয়ে গিয়েছিল। রিডিং পড়াও প্রায় ভুলে গিয়েছিলাম আর লিখা তো একেবারেই ভুলেই গিয়েছিলাম। দ্বিতীয়বার পরে আবার লিখা শিখতে হয়েছিল। বিশাল ঘটনা বর্ননা এখন করব না। এখন শুধু দুটি ঘটনার স্মৃতিচারণ করছি। বাম পা ও বাম হাত প্রায় অচল। একদিন বিকেলবেলা বাড়ির পাশে একটি ফুটবল ম্যাচ দেখতে গেলাম। অনেক দর্শক। গ্রাম্য একটি টুর্নামেন্টের খেলা চলছিল। প্রায় অর্ধেক খেলা দেখা শেষ। কোনো একজনের পোষা একটা কুকুর এসে আমার কাছে এসে ঘেউ ঘেউ করছিল। কুকুরটিকে ভয় পেয়ে আমি একটু সরার চেষ্টা করছিলাম। আমি যত সরতে থাকি কুকুরটি ততই আমার কাছাকাছি চলে আসে। একপর্যায়ে ভয়ে আমি দৌড় দেওয়ার চেষ্টা করি। বাম পা মাটিতে ঘেঁষিয়ে ঘেঁষিয়ে সামর্থ অনুযায়ী দৌড় দিতে থাকি। কুকুরটি আমার উপর আরো বেশি চড়াও হয়। কুকরের মালিক আমাকে একজায়গায় দাঁড়িয়ে থাকার কথা বললেও আমি কিন্তু সে চেষ্টা করি নি। শেষ পর্যন্ত কুকুরের মালিকে এসে কুকুরটিকে শান্ত করে। আমার অনেক কষ্ট হয়েছিল। রাতে পায়ের যন্ত্রনায় ঘুমাতে পারি নি। কিন্তু একটা লাভ হয়েছে, দুই তিনদিন পরে পায়ের ব্যাথা আর থাকে নি। আলহামদুলিল্লাহ! আমার বাম পা ভালো হয়ে যায়। শুধু বাম হাতটা প্রায় অচল থাকে। একটু নড়াচড়া করতে পারতাম। হাত উপরে তুলতে পারতাম না। ঘুরাতে পারতাম না। কিছু ধরতে পারতাম না। একটি বাড়ির পাশে ক্রিকেট খেলতে গেলাম। এক হাত দিয়েই ব্যাটিং ফিল্ডিং করতাম। খেলার মাঝে একবার বল ধরতে মিস করেছিলাম। এ নিয়ে একজন রাগান্বিত হয়ে আমাকে কটু কথা বলতে থাকে। আরেকজন আমার পক্ষ নিয়ে কথার জবাব দিচ্ছিল। এভাবে একপর্যায়ে দুজনে ঝগড়া বেঁধে দিয়েছিল। আমিসহ সবাই নীরবে দাঁড়িয়ে দেখছিল। একপর্যায়ে তাদের ঝগড়া একধরনের মারামারিতে পৌঁছে। কিছুক্ষনের মধ্যে একজনে দৌড়ে গিয়ে একটি দা হাতে নিয়ে আসে আর আরেকজন পাশ্ববর্তী ধানক্ষেতের এক কৃষকের হাতে থাকা কাঁচি নিয়ে আসে। দুজন সামনাসামনি। কে কখন কাকে কুপ দেবে। একপর্যায়ে যখন চরম অবস্থা বিরাজ করছিল, আমি সহ্য করতে না পেরে দুজনকেই এক হাত দিয়ে থামানোর চেষ্টা করছিলাম। কিন্তু তারা দুইজনের একজনে আরেকজনকে কুপ দেয়। দুর্ভাগ্যবশতঃ দুজনের কুপই আমার বাম হাতের মধ্যে পড়ে। কাঁচির কুপটা পড়ে কবজির মধ্যে আর দা এর কুপে বাম হাতের কনিষ্ঠা আঙুলের মাথা কেটে নিয়ে যায়। আমি তখন যন্ত্রনায় হাত ঝাড়ছিলাম আর চিৎকার করছিলাম। পরে প্রাথমিক চিকিৎসা শেষে ডাক্তার পরামর্শ অনুযায়ী ইনজেকশন নিয়ে ঔষধ সেবন করতে থাকি। সপ্তাহ খানেক পরে আমি সুস্থ। সবচেয়ে খুশির বিষয় হলো আমার বাম হাতটা আর আগের মত অচল নয়। এখন পুরোটাই স্বাভাবিক। অচল হাত ও পায়ের আকস্মিকভাবে ভালো হয়ে যায় তখন একরকম অলৌকিকই ছিল। যা হোক, মহান আল্লাহর দরবারে অনেক শুকরিয়া। আমি এ স্মৃতি হয়তো কখনো ভুলতে পারবো না। সোসিয়্যাল মিডিয়ায় এই ঘটনাটি প্রথম পোস্ট করলাম। সকলে ভালো থাকবেন। 

_কয়েসাবা

1 comment:

  1. বাস্তবতার নিরিখে অনেক সুন্দর লিখেছেন, আপনাকে অনেক ধন্যবাদ

    ReplyDelete

Powered by Blogger.